আল্লামা ইউসুফ কারজাভি বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম স্কলার ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্ষীয়ান আলেম শায়খ ড. ইউসুফ কারজাভি ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। শায়খ প্রফেসর ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ আল-কারজাভি মিসরীয় বংশোদ্ভূত একজন প্রভাবশালী আধুনিক ইসলামি তাত্ত্বিক ও আইনজ্ঞ। ২০০৮ সালে এক জরিপে বিশ্বের প্রভাবশালী ২০ চিন্তাবিদ আলেমের তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে আসে শায়খ ড. ইউসুফ কারজাভির নাম। শায়খ ইউসুফ কারজাভি ১৪১১ হিজরিতে ইসলামি অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ব্যাংক ফয়সল পুরস্কার লাভ করেন। ইসলামি শিক্ষায় অবদানের জন্য ১৪১৩ হিজরিতে মুসলিম বিশ্বের নোবেলখ্যাত কিং ফয়সাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে ব্রুনাই সরকার তাকে ‘হাসান বাকলি’ পুরস্কারে ভূষিত করে। এ ছাড়াও তার বৈচিত্র্যময় পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি নানা পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন। শায়খ কারজাভি ১৯২৬ সালে মিসরের উত্তর নীলনদের তীরবর্তী সাফাত তোরাব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং প্রাচীন ইসলামি বিদ্যাপীঠ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
মুফতি রাফি উসমানী
পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেম, জামিয়া দারুল উলুম করাচির প্রধান, মুফতি রাফি উসমানি ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তিনি দেশটির মুফতি আজম (প্রধান মুফতি) খ্যাত মুফতি মুহাম্মাদ শফি রহ.-এর পুত্র ও পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরিয়ত আপিল বিভাগের সাবেক বিচারক মুফতি তাকি উসমানির বড় ভাই। মুফতি রাফি উসমানি উপমহাদেশ ভাগের আগে হিন্দুস্তানের দেওবন্দ অঞ্চলে ১৯৩৬ সালের ২১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন ধর্মীয় পণ্ডিত, আইনবিদ এবং লেখক। বাবা মুফতি শফী (রহ.)-এর হাতেই তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। তিনি দারুল উলুম দেওবন্দ, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় এবং দারুল উলুম করাচির সাবেক ছাত্র ছিলেন। ফিকহ, হাদিস এবং তাফসিরে তার জ্ঞানের জন্য স্বীকৃত মুফতি রাফি উসমানি উর্দুতে প্রচুর বইয়ের পাশাপাশি আরবি ভাষায়ও উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন।
আল্লামা আবদুল হালিম বোখারী
দেশের শীর্ষ আলেম ও চট্টগ্রামের আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি আবদুল হালিম বোখারী ইন্তেকাল করেন ২০২২ সালে ২১ জুন। আল্লামা আবদুল হালিম বোখারী সম্মিলিত কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের মহাসচিব ছিলেন।
এ ছাড়াও তিনি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির সভাপতি, ইসলামি সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ তাহফিজুল কুরআন সংস্থার সভাপতি এবং জামিয়া পটিয়ার মুখপত্র মাসিক আত তাওহীদের প্রধান সম্পাদক ছিলেন। ২০১৮ সালে সরকার কর্তৃক কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের স্বীকৃতি প্রদানের নিমিত্তে আল হাইআতুল উলয়া গঠিত হলে তিনি এর স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত হন। আল্লামা মুফতি আবদুুল হালিম বোখারী ১৯৪৫ সালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরদাদা সৈয়দ আহমদ বোখারী উজবেকিস্তানের বোখারার বাসিন্দা ছিলেন।
শায়খ মুহাম্মদ আবিদ আল-সিন্দি
ইসলামের ইতিহাসে প্রথম নির্মিত মসজিদ, মসজিদে কুবার ইমাম ও খতিব শায়খ মুহাম্মদ আবিদ আল-সিন্দি ইন্তেকাল করেন ২০২২ সালে ২১ নভেম্বর। তিনি মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তিনি মসজিদে নববীর সাবেক তারাবির ইমাম ছিলেন। শায়খ মুহাম্মদ আবিদ আল-সিন্দি সৌদি আরবে জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামি শরিয়াহ, উসুলে ফিকহ, তাফসির, কুরআনুল কারিমসহ বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন তিনি। ১৪০৭ হিজরি সাল থেকে তিন বছর পর্যন্ত তিনি মসজিদে নববীতে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৪১০ হিজরি থেকে তিনি মসজিদে কুবার ইমাম ও খতিব নিযুক্ত হন।
খতিব মাওলানা সালাহউদ্দিন
২০২২ সালের শুরুতেই ইন্তেকাল করেন বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন। ৩ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি বায়তুল মোকাররমের খতিব হিসেবে মাওলানা সালাহউদ্দিনকে নিয়োগ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। তবে শারীরিক অসুস্থতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে কয়েক বছর তিনি নামাজ পড়াতে পারেননি জাতীয় মসজিদে। মাওলানা মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন ১৯৪৪ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের হাজরাদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার ৪৪তম অধ্যক্ষ ছিলেন। এ ছাড়া তিনি রাজধানীর মহাখালীর গাউসুল আজম মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মুফতি সাদেকুর রহমান
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদরাসার প্রধান মুফতি মাওলানা সাদেকুর রহমান ইন্তেকাল করেন ২০২২ সালের ১২ নভেম্বর। তিনি ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদুঘরে জন্মগ্রহণ করেন। মুফতি সাদেকুর রহমানের শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় স্কুল থেকে। তিনি দেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপীঠ জামিয়া ইউনুছিয়া, মিফতাহুল উলুম, ঢাকার লালবাগ এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় পড়াশোনা করেন।
ইসলামি ফিকহের ওপর গভীর জ্ঞান অর্জনের জন্য তৎকালীন পাকিস্তানের দারুল উলুম করাচিতে ভর্তি হন। সেখানে এ বিষয়ে পিএইচডি করেন। পরবর্তী সময়ে দেশের মাটিতে ফিরে যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় ইফতা বিভাগ চালু কারেন।