আমাদের গর্বের শহর ঢাকা। আমরা রাজধানীর অধিবাসী। প্রাচীন ঐতিহ্যের নগরী ঢাকাকে ‘মসজিদের শহর’ও বলা হয়।
অনেক ইতিহাসখ্যাত গৌরবের বাহক এই শহরও আজকাল কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। রাস্তায় বাহনের আধিক্য। ঢাকার রাস্তায় এখন প্রচুর যান চলাচল করে। তেমনি যানজটও হয় অনেক। এ শহরে এমন কোনো নাগরিক নেই, যিনি যানজটজনিত সমস্যা মোকাবিলা করেননি। এই ভোগান্তির কথা বলে শেষ করা যাবে না। নগরীর জনসংখ্যার আধিক্য, রাস্তায় অপ্রশস্ততা, রিকশার আধিক্যই যানজটের কারণ।
এর সঙ্গে যোগ করা যায় মানুষের আইন না মানার প্রবণতা। অনেক সময় সিগন্যাল উপেক্ষা করে গাড়ি চালানো এবং যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করাও একটা উল্লেখযোগ্য সমস্যা। শুধু রাস্তা নয়, ঢাকা শহরের ফটপাথগুলোও এখন হকার এবং রাস্তার পাশের দোকানের দখলে চলে গেছে। ফুটপাথে বসেছে দোকান আর পথচারী নেমেছে সড়কে। শুধু হকাররাই ফুটপাথ দখল করে না, দখল করে প্রভাবশালীরাও। ফুটপাথে রাখা হয় নির্মাণসামগ্রী, গাড়ি পার্ক করা হয়, ফুটপাথে আবার মোটরসাইকেলও চালানো হয়।
তাছাড়া অনেক সময় খুচরা দোকানিরা ফুটপাথে দোকান বিছিয়ে বসে, হাঁকডাক দিয়ে বেচাকেনা করে। এদের অনেকেই মৌসুমি দোকানি। তবে যেটুকু সময় এরা ফুটপাথে বেচাকেনা করে ততটুকু সময়ও পথচারীদের বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়।
ফুটপাথ দখল হওয়ার আরেকটি কারণ হলো ঢাকামুখী জনস্রোত। ঢাকার বাইরে থেকে আসা মানুষ জীবিকার জন্য ফুটপাথে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে। কখনো ফুটপাথে রাত যাপন করে।
এখন ঢাকার মানুষ আর হেঁটে চলাচল করতে পারে না। ইচ্ছা থাকলেও হেঁটে যাওয়ার দূরত্বও গাড়ি অথবা রিকশার সাহায্য নিয়ে পাড়ি দিতে হয়। অথচ স্বাস্থ্যগত দিকটি বিবেচনা করলে হাঁটাহাঁটি অনেক সুফলদায়ক। সুস্থ থাকার জন্য হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। আমরা সবাই কমবেশি জানি হাঁটলে শরীর ঝরঝরে থাকে, কোলেস্টেরলের সমস্যামুক্ত থাকা যায়, উচ্চ রক্তচাপ ও বহুমূত্র সমস্যা থেকেও স্বস্তি মেলে। নিয়মিত হেঁটে বাজার-হাট সম্পন্ন করলে অথবা কম দূরত্বের পথ হেঁটে চললে প্রয়োজনীয় কাজটি করার সঙ্গে সঙ্গে নিজের স্বাস্থ্যসেবাও হয়ে যায়।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের ভালোবাসার এই শহরে হেঁটে চলার উপায় নেই। পথচারীর ফুটপাথ চলে গেছে হকার ও দোকানিদের দখলে। শুধু ততটুকু পথচারীর জন্য রাখা আছে যেটুকু সংকীর্ণ, ভাঙা এবং ম্যানহোলের ঢাকনাবিহীন। এ ফুটপাথে হাঁটার চেয়ে দুর্ঘটনাকবলিত হওয়ার জন্য বেশি প্রযোজ্য।
তাছাড়া আমাদের হাঁটার অভ্যাস না থাকার কারণে অথবা ফুটপাথ না থাকার কারণে আমরা সামান্য পথও রিকশায় পাড়ি দিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমরা ভুলে গেছি স্বাস্থ্যের জন্যই হাঁটা জরুরি। একটু সচেতন হলে সহজেই এই অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।
পথচারীর জন্য ফুটপাথ, হকারের জন্য নয়, এ কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু দরিদ্র শ্রেণির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ফুটপাথ থেকে উঠিয়ে একটি স্থায়ী পুনর্বাসন ব্যবস্থা করার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। শুধু হকার পুনর্বাসন করলেই ফুটপাথ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। সঙ্গে সঙ্গে ফুটপাথগুলো সংস্কার করা অতি জরুরি।
নগরীর ফুটপাথগুলো যদি পথচারী চলাচলের জন্য অবাধ হয়, তাহলে নাগরিকদের মধ্যে হেঁটে চলার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। এ অভ্যাস যেমন মানুষকে সুস্থ রাখবে, তেমনি যানবাহনের ওপর কিছুটা চাপ কমবে বলে মনে হয়।
তাছাড়া ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করতে হবে স্থায়ীভাবে। দখলদারদের অন্য কোথাও ব্যবসার ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতে পারে। এর জন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
নগর কর্তৃপক্ষ সবসময় সুন্দর ঢাকা তৈরিতে সচেষ্ট, তার সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে হকারমুক্ত ও জনচলাচল উপযোগী ফুটপাথ ব্যবস্থাপনা। এর সঙ্গে সবাইকে যুক্ত হতে হবে। নিজের শহর সুন্দর রাখার কাজটিতে সানন্দে অংশ নিতে হবে।
লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক