প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:১৫ এএম (ভিজিট : ৫৫৪)
মহামারির দ্বিতীয় বছরে স্বাস্থ্য খাতই ছিল আলোচনায়। মহামারি নিয়ে এই অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগের মধ্য দিয়ে নতুন বছর শুরু হতে যাচ্ছে। মহামারিকালে নতুন বছরটিও তাই আলোচনায় থাকবে এই স্বাস্থ্য খাত। করোনার ভারতীয় (ডেল্টা) ভ্যারিয়েন্টের ছোবলে রেকর্ড সংক্রমণ আর মৃত্যুর ভয়াবহতা দেখেছে বাংলাদেশ। বছরের প্রথম দিকে টিকা দেওয়া শুরু হলে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে। কিন্তু বছর শেষে ভাইরাসটির নতুন ধরন ওমিক্রনের উদ্ভব মানুষকে আবারও উদ্বেগে ফেলে দিয়েছে। করোনার মধ্যে এ বছর আরেক ভাইরাসও ছড়িয়েছে আতঙ্ক। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে ২০১৯ সালের পর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ২৮ হাজারের বেশি রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারিকাল এখনও চলছে। করোনা মুক্ত হোক বিশ্ব। আর জনবান্ধবমুখী হবে স্বাস্থ্য খাত।
স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর কেন্দ্রে ছিল করোনার টিকা। টিকা কেনা, টিকা সংগ্রহ, টিকাদান চলেছে বছরজুড়ে। বছরের একটা সময় করোনা সংক্রমণ ও করোনায় মৃত্যু বহুগুণ বেড়ে যায়। একপর্যায়ে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ডিসেম্বরের শেষে সামান্য হলেও সংক্রমণের কিছুটা ঊর্ধ্বগতি আবার লক্ষ করা যাচ্ছে। বছরের মাঝামাঝি করোনা রোগীর চিকিৎসা, হাসপাতালের প্রস্তুতির ঘাটতির খবরে স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনার চিত্র প্রকাশ পেয়েছিল।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে প্রথম ডোজ দিয়ে ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরু হয়েছিল। সেই রুনু ভেরোনিকা কস্তা প্রায় ১১ মাস পর টিকার তৃতীয় ডোজ নিয়ে ১৯ ডিসেম্বর দেশে শুরু হয়েছে বুস্টার ডোজ। ভাইরাসের নতুন ধরন ডেল্টার কারণে সব কিছু স্বাভাবিক হওয়ার বদলে উল্টো কোভিড পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে থাকে। দ্রুত পাল্টাতে থাকে সার্বিক চিত্র।
একপর্যায়ে হাসপাতালে ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থার মধ্যে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে পুরোচিত্র। বছরের মাঝামাঝি সময়ে সংক্রমণের তীব্রতায় শনাক্ত ও মৃত্যুর মিছিলের দিনের পর দিন রেকর্ড ভেঙে দেশজুড়ে ভয়াল পরিস্থিতি তৈরি হয়। কোভিডের লাগামহীন এমন বিস্তার ও গুরুতর অসুস্থতার ভয়াবহতার আগে প্রতিষেধক হিসেবে টিকাদান শুরুর কার্যক্রমে যে আশা জেগেছিল, তা হতাশায় পরিণত হয় ভারত টিকাদান বন্ধ করে দিলে। তবে মহামারি প্রতিরোধে টিকাদান আবারও গতি পায় সরকারের বিকল্প টিকা সংগ্রহের পদক্ষেপে। কয়েক দফায় নজিরবিহীন কঠোর লকডাউন ও নানা বিধিনিষেধের মধ্যে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করার ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। অবশেষে আগস্টের শেষ দিক থেকে নিম্নমুখী হতে থাকে। হাসপাতালগুলোতেও রোগী যাওয়া কমতে থাকে। এমন স্বস্তির মধ্যেই কোভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, সারা দেশে ১২ কোটি ২ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৭ কোটি ১১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৮২ জন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৪২ দশমিক ২৯ শতাংশ। পূর্ণ ডোজ পেয়েছেন ৪ কোটি ৯১ লাখ ৪১ হাজার ৬৯৬ জন। এ সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ২৯ শতাংশ। গত ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের হাতে করোনাভাইরাসের টিকা এসেছে ১৮ কোটি ৫৫ লাখ ৬২ হাজার ৬৯৭ ডোজ। এর মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৪ কোটি ৬২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৫০ ডোজ, ফাইজার-বায়োএনটেকের ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৪০ ডোজ, মডার্নার ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬০ ডোজ, সিনোফার্মের ১০ কোটি ৩৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭৪৭ ডোজ এবং সিনোভ্যাকের ১ কোটি ৪৬ লাখ ৪ হাজার ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। সরকার দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। দুই ডোজ টিকা দিতে হলে প্রয়োজন হবে প্রায় ২৮ কোটি ডোজ।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান সময়ের আলোকে বলেন, এই মহামারি পৃথিবী থেকে বিদায় হোক। কিন্তু যতদিন করোনা আছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে আরও সতর্ক থাকতে হবে। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের শিকার না হয় এ জন্য জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা, ভিড় এড়িয়ে চলা, স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পরা, সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার বিষয়গুলোকে অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, দেশের সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যখনই সুযোগ পাওয়া যায় ভ্যাকসিন নিতে হবে। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন করোনা সংক্রমণ থেকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারবে না। কিন্তু ভ্যাকসিনে করোনার তীব্রতা থাকবে না। মৃত্যু ঝুঁকি কমে আসবে।