ই-পেপার শুক্রবার ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
শুক্রবার ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

শুক্রবার ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৪৩ পিএম  (ভিজিট : ৫৩৩)
বিভিন্ন সময় কক্সবাজার যাওয়া হয়। তখন প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতায় কক্সবাজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব খারাপ ছিল না। খুব ভোরে রিকশা করে শহর থেকে হিমছড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পথে তেমন মানুষজন রাস্তায় ছিল না। যদি এটা চট্টগ্রাম শহরের কোনো রাস্তা দিয়ে এত ভোরে রিকশা করে যাওয়া হতো তাহলে নির্ঘাত কয়েকবার ছিনতাইকারীর কবলে পড়তে হতো। বিভিন্ন সময় কক্সবাজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রশংসা করতাম। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনায় অসংখ্য মানুষকে ব্যথিত হতে দেখা গেছে। গত কয়েকদিন আগে একজন নারী পর্যটককে স্থানীয় কিছু যুবক ধর্ষণ করেছে। যে সংবাদটা খবরের কাগজ এবং মিডিয়ায় যথেষ্ট ভাইরাল হয়েছে। কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে নারী পর্যটককে ধর্ষণের ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে বলে সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত সময়ে অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পেরেছে। প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পর্যটকরা।

স্থানীয় অনেক সাধারণ মানুষকে বলতে শোনা যায় প্রতি রাতে সৈকতের বিচ ও ঝাউবাগানে গাঁজা ও জুয়াড়িদের আসর বসে। শহরের সব ছিনতাইকারী, নেশাখোর ও অপরাধীরা এখানে আড্ডা দেয়। যেহেতু কক্সবাজার একটা পর্যটন এলাকা সেহেতু এখানে সবসময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হবে। লাবণী বিচ থেকে শুরু করে কবিতা চত্বর ও ডায়াবেটিক পয়েন্ট এবং ঝাউবাগানের আশপাশে সব জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। এসব এলাকাসহ পুরো কক্সবাজারকে অপরাধীদের দখলমুক্ত করতে হবে। কেন পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না জানতে চাইলে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা তো দেখি, কখনও কখনও কক্সবাজারে পর্যটকদের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বেশি। তারপরও কেন বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি না। আমরা চাই, এখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।’ বিগত ২০০৫ সালেও কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে এক বিদেশি পর্যটক ধর্ষণের শিকার হন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কক্সবাজারের একটি রিসোর্টে অস্ট্রেলীয় এক নারী পর্যটককে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠে। এই ধরনের সংবাদগুলো পর্যটন শিল্পে আঘাত আসবে।

কক্সবাজারের যারা স্থানীয় লোক আছে তাদের একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে পর্যটন শহর হওয়ার কারণেই দেশ-বিদেশের অনেক লোক এই শহরে আসছেন। যে শহরে এলে একজন মানুষ নদী, সমুদ্র, পাহাড়, ঝরনা, রাবার বাগান, এবং মহেশখালীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন সে শহর হচ্ছে কক্সবাজার। পৃথিবীর ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম স্থান কক্সবাজার।

প্রতি শীত মৌসুমে পর্যটকদের ভিড়ে সরগরম হয়ে ওঠে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিপণিকেন্দ্রগুলো। গত ১৬ ডিসেম্বর হতে কক্সবাজারে বিপুল পর্যটক আসার সুযোগে একটি চক্র নানা অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বলছে অভিযোগ শোনা গেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানা গেছে একটি রেস্টুরেন্টে শুধু ডাল-ভাতের দাম রাখা হচ্ছে ৪০০ টাকা আর এক প্লেট ভাত ও আলুভর্তার দাম রাখা হচ্ছে ৩০০ টাকা। আবার অনেক পর্যটক ফেসবুকে অভিযোগ করেছেন তাদের থেকে হোটেলের রুম ভাড়া স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়েও অনেকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করেছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন করোনাকালীন হোটেল মালিকদের যে ক্ষতি হয়েছে সে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য পর্যটকদের থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। 

অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থার পাশাপাশি কক্সবাজারের ভিন্ন কিছু দিকের প্রতি প্রশাসনের এবং পর্যটকদের খেয়াল রাখতে হবে। ডলফিন মোড় থেকে কলাতলী সড়কটি ভালোভাবে সজ্জিত করলে পর্যটকদের চোখে আকর্ষণীয় দেখাবে। এই সড়কের পাশে বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ লাগানো যেতে পারে। এই সড়কে রাত্রিকালীন বাতির পরিমাণ বাড়াতে হবে। 

এই শহরকে যত বেশি পরিষ্কার রাখতে পারব তত বেশি আমাদের সুনাম বৃদ্ধি পাবে। বাইরের পর্যটক যত বেশি আমাদের দেশে আসবে তত বেশি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে। বিচে ডাস্টবিনের পরিমাণ বাড়ানো দরকার বলে আমি মনে করি। কেউ যাতে বিচে ময়লা আবর্জনা ফেলতে না পারে তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এই কক্সবাজারের ঐতিহ্য ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কক্সবাজারকে পৃথিবীর মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। 

লেখক: কর্মকর্তা, ডায়মন্ড সিমেন্ট, চট্টগ্রাম




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close