ই-পেপার শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪
শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪

প্রাথমিক শিক্ষায় পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতার দীক্ষা
প্রকাশ: সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম  (ভিজিট : ৫১১০)
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, দূষণহীন পরিবেশে বাস করতে কে না চায়? বলা হয়ে থাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মানুষের স্বভাবজাত প্রেরণা। তাই স্বভাব যদি বিকৃত না হয় তাহলে মানুষ নিজেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে এবং চারপাশের পরিবেশ ও লোকজনকেও পরিচ্ছন্ন দেখতে ভালোবাসে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বলতে শুধু বাহ্যিক পরিবেশের পরিচ্ছন্নতাকেও বুঝায় না বরং এটি বাহ্যিক চেহারার চেয়ে আরও বেশি কিছুকে বোঝায়। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের জন্য এটা হলো এক সার্বজনীন নীতি। সেই সঙ্গে এটা মনের এবং হৃদয়ের এক অবস্থা, যার সঙ্গে আমাদের নৈতিকতা এবং উপাসনা জড়িত। প্রাথমিক শিক্ষা আমাদের শিক্ষার ভিত্তি হওয়ায় এখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। আবার মুজিব বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে পরিচ্ছন্ন গ্রাম পরিচ্ছন্ন শহর বিষয়ে যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে সেখানেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এসডিজিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে তবে তা সবার কাছেই আকর্ষণীয় মনে হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন হয় ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে। নির্দেশনা অনুসারে, শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত না করে প্রতি বৃহস্পতিবার দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাপ্তাহিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সহযোগিতায়
প্রধান শিক্ষক এ কার্যক্রমের উদ্যোগ নেন।  
স্থানীয় প্রশাসন ও অভিভাবকদেরও আমন্ত্রণ
জানানো হয়।
এই কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে শুধু স্কুলই নই, স্কুলে গড়ে তোলা অভ্যাস বা অনুশীলন তারা বাড়িতে বা চারপাশ পরিষ্কার রাখার দীক্ষা পাবে। যা তাদের সামগ্রিক জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ শিক্ষার্থীর মনে স্কুল সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করে, বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তোলে। শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করে দায়িত্বশীল হতে সহায়তা করে।
অ্যালার্জি, হাঁপানি, অ্যাজমা, ডেঙ্গু প্রভৃতি রোগ থেকে দূরে রাখতে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সাহায্য করে। শিক্ষার্থীদের অসুস্থতার হার কমিয়ে বিদ্যালয়ের উপস্থিতি বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে বরং নির্দিষ্ট একটি জায়গায় ফেলার শিক্ষা পেলে তা শিক্ষার্থীদের অনেক কাজে দেবে। এটি তাদের চর্চা ও অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত হবে। এটি সমাজ-সংস্কারের জন্য অনন্য ভূমিকা পালন করবে। বিদ্যালয়ে অর্জিত এই শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়েই শিক্ষার্থীরা রাস্তাঘাট বা যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকবে।
এতে করে শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছুটা সচেতনতা বাড়লেও এখনও পরিবেশের পুরোপুরি উন্নতি হয়নি। শিক্ষার্থীরা এখনও শ্রেণিকক্ষের পাশে রেখে দেওয়া ঝুড়িতে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে বরং শ্রেণিকক্ষে বা বারান্দায় বা মাঠে বা জানালা দিয়ে বাইরে ফেলছে। আবার স্কুলের এক কোণায় ময়লা-আবর্জনা ফেলে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সপ্তাহের এক দিনে না করে প্রতিদিনই করা উচিত। বিদ্যালয় ছুটির আগ মুহূর্তে সবগুলো ঝুড়ির ময়লা এক জায়গায় করে রাখা যেতে পারে, যাতে করে দিনের শেষে বা পরদিন শুরুর আগে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে পারে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে। এ ছাড়া প্রতিদিন ছাত্রছাত্রীদের অ্যাসেম্বলিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অভিভাবক সমাবেশেও অভিভাবকদেরকে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে সচেতন করতে হবে যাতে বাড়িতেও শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে আক্ষরিক থাকে। প্রত্যেক ক্লাস থেকে একজন করে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিয়ে তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে, যারা প্রতিদিন শ্রেণিকক্ষ ও ক্যাম্পাস পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান পরিচালনা করবে। শ্রেণিকক্ষ ও ক্যাম্পাসসহ সার্বিক পরিবেশ পরিষ্কার-পরিছন্ন রেখে বিদ্যালয়টিকে একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এ জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদেরকেও এ কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য মনিটরিং করা দরকার। আর এ জন্য উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব এবং উপজেলার বিভিন্ন অংশীজন নিয়ে একটি পরিবীক্ষণ কমিটি করা যেতে পারে। কমিটি দুই বা তিন মাস পরপর সভায় মিলিত হয়ে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পর্যালোচনাপূর্বক সুপারিশ বা পরামর্শ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে। এ ছাড়া কমিটির সদস্যরা নিয়মিত বিভিন্ন
বিদ্যালয় পরিদর্শনপূর্বক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে দিক-নির্দেশনা দেবেন।
পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনের জন্য পরিচ্ছন্ন রুচি অপরিহার্য। পক্ষান্তরে সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন রুচি মানুষকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনে সহায়তা করবে। এ জন্য ছোট থেকেই শিশুদের মধ্যে ভদ্র, শালীন, সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন রুচি গড়ে তোলার চেষ্টা করা উচিত। আর এ জন্যই আমাদের বিদ্যালয় এবং এর চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর পরিচ্ছন্ন বিদ্যালয়ে প্রাপ্ত দীক্ষা নিয়ে বড় হবে আমাদের শিশুরা।

ষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শেরপুর, বগুড়া







সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close