ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কমিটি দিতে রাজধানীতে ‘ঢাকা রাইজিং’ কর্মসূচি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিস্তৃত হচ্ছে তৃণমূলে
প্রকাশ: সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪, ৩:৩৪ এএম  (ভিজিট : ১৪৬)
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তৃত করার লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। চলতি অক্টোবরেই জেলা পর্যায়ে আহ্বায়ক কমিটি দেওয়ার চিন্তা করছেন আন্দোলনের সমন্বয়করা। তবে কত সদস্যের কমিটি হবে তা নিশ্চিত না হলেও কমিটির আকার বড় হওয়ার আভাস দিয়েছেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বিষয়টি সময়ের আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

কমিটি তৈরির প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সমন্বয়কের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের ভাষ্য, বিভিন্ন জায়গায় সমন্বয়ক পরিচয়ে অপকর্ম-দখলদারিত্বের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণ হলে যেন শাস্তি ও দায়বদ্ধতার আওতায় আনা যায় সে লক্ষ্যে কমিটি দেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ ছাড়া প্ল্যাটফর্মকে আরও সংগঠিত করে একটি চাপ সৃষ্টিকারী শক্তি হিসেবে গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত ও রাষ্ট্রের সব অঙ্গের টেকসই সংস্কার নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে তৃণমূল পর্যায়ে এ কমিটি গঠনের পরিকল্পনা প্ল্যাটফর্মের।  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল কাদের সময়ের আলোকে বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা পর্যায়ে কমিটি হবে। এখনও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি দেওয়ার আলোচনা হয়নি। তবে জেলা পর্যায়ের কমিটির পর উপজেলা পর্যায়ে কমিটি দেওয়ার কথাও ভাবছেন তারা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, জেলার আকার এবং আন্দোলনকারীদের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে তা বিভিন্ন হতে পারে। আরেক সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ সময়ের আলোকে বলেন, কমিটির বিষয়ে আলোচনা চলছে। এ মাসেও হতে পারে, আবার ১০ দিনের মধ্যেও হতে পারে। কী অবস্থায় দেবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কমিটির আকার বড় হবে।

এদিকে অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত কেউ কমিটিতে আসতে পারবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এক দফার বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছেন তাদের কেউ এ কমিটিতে থাকতে পারবেন না। এর বাইরে আন্দোলনের শুরুতে ডান-বামসহ প্রত্যেক ঘরানার মানুষ এখানে এসেছে। আন্দোলন শেষে যে যার যার কার্যক্রমে ফিরে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরও নিজস্ব স্পিরিট আছে। রাষ্ট্র পুনর্গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোরও নিজস্ব এজেন্ডা আছে, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মের স্পিরিটের সঙ্গে নাও মিলতে পারে। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাষ্ট্রের পুনর্গঠনে আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মে কাজ করব নাকি দলের ব্যানারে কাজ করব। কেননা সে ক্ষেত্রে কোনো ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্তরা কোন ব্যানারে কাজ করবে সেটা তারাই সিদ্ধান্ত নেবে। 
তবে প্ল্যাটফর্মটি কখনোই রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হবে না বলে জানিয়েছেন সমন্বয়ক আবদুল কাদের। সময়ের আলোকে তিনি বলেন, এ প্ল্যাটফর্ম যতদিনই টিকে থাকুক এটা জাতীয় প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই থাকবে। এখানে বিভিন্ন মতাদর্শ-আদর্শ থাকতে পারে। তবে এ প্ল্যাটফর্মে ডান-বামসহ প্রত্যেক ঘরানার মানুষ আগে যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, দেশ পুনর্গঠনের স্বার্থে আবারও তারা একত্রিত হবে। 

জেলা পর্যায়ে মতবিনিময় সভা
এর আগে গত ৮-১৮ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা দেশের ৪৪টি জেলা সফর করেছেন। এসব জেলায় ‘গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহিদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভা’ শিরোনামে সভা হয়। তবে কিছু কিছু জেলায় মতবিনিময় সভা করতে গিয়ে স্থানীয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বাধা ও নিজেদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বে পড়তে হয় প্ল্যাটফর্মটিকে। 

এ বিষয়ে সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, মানুষ সংগঠিত হতে চাচ্ছে। রাষ্ট্র পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখতে চাচ্ছে এবং সে সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার কথাও আমাদের বলছে। জনগণের প্রত্যাশা, আমরা যেন সরকার ও মানুষের মাঝে সেতু হিসেবে কাজ করি, তাদের কথা সরকারের কাছে তুলে ধরি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রেজোয়ান হাসান রিফাত সময়ের আলোকে বলেন, জেলাগুলোতে যে সমস্যা চলছিল অর্থাৎ সমন্বয়ক পরিচয় ব্যবহার করে যে অপকর্মগুলো চলছিল সেগুলো নিরসন করা এ মতবিনিময় সভার একটা লক্ষ্য ছিল। পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মটিকে আরও সংগঠিত করা, একটি চাপ সৃষ্টিকারী শক্তি হিসেবে গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাসহ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সব অঙ্গের টেকসই সংস্কার নিশ্চিত করাও এ মতবিনিময়ের অন্যতম একটা লক্ষ্য ছিল।

তৃণমূলে বিস্তৃত হচ্ছে নাগরিক কমিটিও 
ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠন করার লক্ষ্যে গত ৯ সেপ্টেম্বর সারা দেশে তরুণ-যুবাদের অন্তর্ভুক্ত করতে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। ৬২ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তরুণ প্রজন্মের নেতৃস্থানীয়দের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তৃত করতে ইতিমধ্যে প্রাথমিকভাবে তারা বিভিন্ন মাধ্যমে ইচ্ছুকদের পরিচয় সংগ্রহের কাজ করছেন। 

এর মধ্যে ঢাকার ৫২টি থানায় কমিটি দিতে ‘ঢাকা রাইজিং’ নামে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় যেসব স্থানে তীব্র আন্দোলন হয়েছে, আপাতত সেসব স্থানে মতবিনিময় সভা বা সমাবেশ দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করছে প্ল্যাটফর্মটি। এর মধ্যে গতকাল ‘ঢাকা রাইজিং’ কর্মসূচির আওতায় যাত্রাবাড়িতে মতবিনিময় সভা করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। 
নাগরিক কমিটির সদস্য মনিরা শারমিন সময়ের আলোকে বলেন, ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানা অনুযায়ী কর্মসূচি এলাকা ভাগ করেছি আমরা। যাত্রাবাড়ী দিয়ে শুরু করেছি। কারণ যাত্রাবাড়ী আন্দোলনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পরে আমরা ঢাকার অন্যান্য থানা এবং ঢাকার বাইরে ও কমিটি দেব। 

তিনি বলেন, কমিটির আকার নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে ন্যূনতম ২০ জনের কমিটি দেওয়া হবে। সদস্যরা আমাদের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করবেন। 

অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ কমিটিতে যুক্ত হতে পারবে কি না এমন প্রশ্নে নাগরিক কমিটির এ সদস্য বলেন, আমাদের আদর্শ ও স্পিরিটের সঙ্গে যারা একমত হবেন তাদের সবাই যুক্ত হতে পারবেন। তবে যারা কোনো দলীয় পদে আছেন আপাতত আমরা তাদের নিরুৎসাহিত করছি। তিনি বলেন, আমরা যাত্রাবাড়ীর পর উত্তরা ও আশুলিয়ার বিষয়ে ভাবছি। তবে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। 

নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন সময়ের আলোকে বলেন, যেসব প্রক্রিয়া ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া যায় সেগুলোই আমরা অনুসরণ করছি। বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা আমাদের যোগাযোগের নম্বর দেওয়ার চেষ্টা করছি। যারা যোগাযোগ করছেন আমরা তাদেও সঙ্গে কথা বলছি, অনেক ক্ষেত্রে সামনাসামনি দেখা করছি। সরাসরি সাক্ষাৎ না করে আমরা কোনো ধরনের কমিটির সদস্য নিচ্ছি না। আমরা সতর্কতার সঙ্গে তৃণমূলের কমিটির কাজ করছি, যেন কোনোভাবে এখানে আওয়ামী লীগের কেউ পুনর্বাসিত হতে না পারে। 

নাগরিক কমিটি সূত্র জানা যায়, সংস্কার প্রস্তাবকে সামনে রেখে ধারাবাহিকভাবে সামনেও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটি শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হতে পারে এমন গুঞ্জনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের এখানে যারা আছেন তারা যদি ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক দল করতে চান, তারা যদি বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন পান বা আরও কোনো তরুণ গ্রুপ যদি রাজনীতি করতে চায় সেটা ভবিষ্যতের বিষয়। কিন্তু সেটা কোনোভাবেই নাগরিক কমিটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে জড়িত নয়। আমরা মনে করি, নাগরিক কমিটির কাজ হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র পুনর্গঠন করে যাওয়া।






এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close