গাজীপুরে শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দিয়েছেন বেশিরভাগ কারখানার শ্রমিক। তবু রোববার সকালে এ শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া পুরো জেলায় সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহলও ছিল। তবে জেলার ৮টি কারখানা বিভিন্ন কারণে ছিল পুরোপুরি বন্ধ। অপরদিকে শ্রমিকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগে যৌথ বাহিনীর হাতে ৩ নারীসহ ৭ জন গ্রেফতার করা হয়েছে।
শিল্প মালিক ও শ্রমিক সূত্রে জানা যায়, অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গাজীপুরে শুরু হয়েছে শ্রমিক অসন্তোষ। নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রায়ই চলে বিক্ষোভ। সর্বশেষ গত শনিবার জিরানী এলাকায় আইরিশ ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি কারখানার শ্রমিকরা হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে তারা অবরোধ করেন চন্দ্রানবীনগর সড়ক। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যা। পরে সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশের সহায়তায় দুপুরের পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ রকম বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, কারখানা ভাঙচুরের ঘটনায় অশান্ত হয়ে পড়ে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল। এতে ছুটি ঘোষণা করা হয় ১৯টি কারখানা। তবে গতকাল রোববার সকাল থেকে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে বেশির ভাগ কারখানা খোলা রয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দিয়েছে শ্রমিকসহ অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। কারখানার নিরাপত্তায় নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া বিজিবি ও সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়। গাজীপুর শিল্পা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, বেশিরভাগ কারখানা খোলা রয়েছে। কোথাও শ্রমিক অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি। কারখানা নিরাপত্তায় শিল্প পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ ও মহানগর পুলিশ কাজ করছে। বিজিবি ও সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে জেলার ৮টি কারখানা বন্ধ আছে।
অপরদিকে, গাজীপুরের বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের আন্দোলনে উসকানি দেওয়া ও কারখানায় ভাঙচুরের অভিযোগে যৌথ বাহিনী তিন নারীসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। গত শনিবার সকালে অভিযান চালিয়ে মহানগরীর ভোগরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন-জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার উদয়পুর এলাকার হযরত আলীর মেয়ে হাসনা আক্তার (২৪), জয়পুরহাট সদরের ধানসিড়া গ্রামের আবু হাসানের ছেলে আবদুল মমিন (২২), শেরপুর সদরের চরমাতবাড়ী নয়ানিপাড়া এলাকার আবদুল গফুরের মেয়ে সাজেদা বেগম (২৮), রংপুরের পীরগঞ্জের মির্জাপুর গ্রামের দুখু মিয়ার মেয়ে মেঘলা আক্তার (৩০), খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে রাকিব হোসেন (২৩), বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার পাগলা শ্যামনগর গ্রামের মাসুম আলী শেখ (২১) ও ময়মনসিংহের ফুলবাড়ী উপজেলার রায়হান (২৪)।
গাজীপুর মেট্রোপলিটপন বাসন থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আসামিরা মহানগরীর ভোগরা এলাকার বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে কারখানার বাইরে এসে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য উসকানি দিচ্ছিলেন।
এদিকে রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ায় পোশাক কারখানা অস্থিতিশীল করার অভিযোগে ৬ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।
রোববার দুপুরে তাদেরকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। এর আগে শনিবার আশুলিয়ার দক্ষিণ বাইপাইল এলাকায় স্থানীয় ডংলিওন নামের একটি পোশাক কারখানায় সামনে থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে সন্ধ্যায় আটকদের আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করে যৌথবাহিনী।
আটকরা হলেন-গিয়াস উদ্দীন, আবুল হোসেন নিমাই, মাহির, আরিফ, তাহেরুল ইসলাম ও রাজু আহমেদ। তারা সবাই আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকার বসবাস করেন।
আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। আশুলিয়া থানায় মামলা করা হয়েছে। দুপুরে তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।