ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, মৃত্যু বেড়ে ৮
প্রকাশ: রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪, ৮:৪৫ পিএম  (ভিজিট : ২০৬)
বন্যা কবলিত শেরপুরে নদ-নদীতে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা কিছুটা কমলেও বেড়েছে নদী ভাঙন, বেড়েছে নদী তীরবর্তী বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ। অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে ভাটি এলাকায়। প্লাবিত হতে শুরু করেছে নতুন নতুন এলাকা। ইতোমধ্যেই জেলা সদরের দুই ইউনিয়ন, শ্রীবরদী উপজেলার চার ইউনিয়ন, নকলা উপজেলার দুই ইউনিয়নে ঢলের পানি প্রবেশ করে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে গেছে। বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে এ পর্যন্ত ৮ জন।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা দুই দিনের বর্ষণ, শুক্রবার সকাল থেকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, সোমেশ্বরী, মহারশি, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীতে উজানের পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবল বেগে বানের পানি প্রবেশ করে। এতে শুক্রবার দুপুরের মধ্যেই বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার অন্তত ৮টি ইউনিয়ন ও ঝিনাইগাতি উপজেলার অন্তত ৪টি ইউনিয়ন। বেলা বাড়ার সাথে সাথেই এ দুটি উপজেলার বন্যা কবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা বাড়তে থাকে। গতকাল (শনিবার) সকাল পর্যন্ত অন্তত ১৫টি ইউনিয়ন আকস্মিক বন্যার কবলে পড়ে। শনিবার থেকে এ দুটি উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের পাশাপাশি শেরপুর সদর উপজেলার ২টি ইউনিয়ন, শ্রীবরদী উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন ও নকলা উপজেলার ২টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। 

রোববার (৬ অক্টোবর) পর্যন্ত জেলার অন্তত ২৫টি ইউনিয়ন বন্যার কবলে পড়ে। ভেসে যায় এসব এলাকার হাজার হাজার পুকুর ও শত শত মাছের খামারের মাছ, ধ্বসে পড়ে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি, ভেসে যায় অনেকের গবাদি পশু, তলিয়ে যায় জেলার প্রধান প্রধান অন্তত ১৫টি পাকা সড়কসহ অসংখ্য কাঁচা-পাকা গ্রামীণ সড়ক পথ। ডুবে যায় ছোট ছোট অনেক ব্রিজ-কালভার্ট। ফলে কার্যত যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এসব এলাকার। এছাড়াও নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলবন্দর মহাসড়ক, নালিতাবাড়ী-ঢাকা মহাসড়ক, নালিতাবাড়ী-শেরপুর সড়কের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে বন্যার পানি বয়ে যায়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। অনেকে বাড়িঘরে আটকা পড়েছেন। কেউবা পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটছেন আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয়ের খোঁজে। বানভাসীরা জানান, সেনাবাহিনী, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণ কার্যক্রম চালালেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। প্রয়োজনীয় নৌযানের অভাবে উদ্ধার তৎপরতায়ও বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকারী দলগুলোর। এছাড়াও সুপেয় পানি, স্যালাইন ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে বন্যা কবলিত এলাকাসমূহে। 

গতকাল শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেল থেকে জেলার উত্তরের গ্রামগুলোতে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও বেড়েছে দুর্ভোগ। বেড়েছে নদী ভাঙনের তীব্রতা। তবে শনিবার থেকে জেলা দক্ষিণে ভাটি এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এসব এলাকার বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলার যোগানিয়া গ্রামের কৃষক রেজোয়ান মিয়া জানান, ৮৮ এর বন্যার চেয়েও এবারের বন্যার ভয়াবহতা বেশি। যোগানিয়া কাচারীপাড়া এলাকার গৃহবধূ খালেদা বেগম জানান, দুদিন যাবত পড়নের কাপড় সবসময় ভিজা থাকে। বাড়িঘরে পানি ওঠেছে। পানির টিউবওয়েল পর্যন্ত ডুবে গেছে। রান্না বন্ধ রয়েছে। ফলে খুব কষ্টে আছি। 

ঝিনাইগাতি উপজেলার হাসলিগাঁও গ্রামের আব্দুল মোতালেব জানান, দুদিন যাবত বাড়িঘরে পানি ওঠেছে। রান্না-বান্না বন্ধ রয়েছে। চিড়া-মুড়ি খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। যে পরিমাণ ত্রাণ আসছে তা একেবারেই কম।

এদিকে গত শুক্রবার থেকে জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে ও প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়ে ৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে। নকলায় বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে দুজন। ঝিনাইগাতিতে বন্যার পানিতে ভেসে এসেছে এক অজ্ঞাত পরিচয় নারীর লাশ। সবমিলিয়ে জেলায় গত শুক্রবার থেকে আজ (রোববার) পর্যন্ত বন্যায় মারা গেছে ৮ জন।

এদিকে শেরপুরের সেনরা ক্যাম্প থেকে জানানো হয়েছে, আগামীকাল সোমবার (৭ অক্টোবর) সকালে সেনাপ্রধান ওয়াকারুজ্জামান নালিতাবাড়ীর বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে আসবেন এবং এদিন তিনি বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করবেন।

সময়ের আলো/আরআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close