ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সফরে ইতিবাচক বার্তা
দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে বিভিন্ন খাতে ভূমিকা রাখবে
প্রকাশ: রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪, ৪:০৪ এএম  (ভিজিট : ২১০)
বাংলাদেশি যেসব কর্মী গত ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি তাদের আবার সুযোগ দেওয়া হবে। স্বচ্ছ পদ্ধতি অনুসরণ করে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের কাজের সুযোগ এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হবে। দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ইস্যু এগিয়ে নিতে এখন থেকে নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠান হবে। দুই পক্ষ সম্পর্কের সব স্তরের বৈঠক নিয়মিতভাবে করতে একমত হয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়া কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে তা জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ঢাকা সফরকে ইতিবাচক উল্লেখ করে এমন মন্তব্য জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকাতেই খুবই স্বল্প সময়ের জন্য হলেও গত শুক্রবার একটি তাৎপর্যপূর্ণ সফর হয়েছে। যা আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে প্রভাব বিস্তার করবে। গত ৩১ মের মধ্যে ১৭ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়া যেতে না পেরে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই সফরে দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে বন্ধুত্ব থাকায় ওই ক্ষতিগ্রস্তরা আবার সুযোগ পাচ্ছে। দুই পক্ষের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ বৈধ লাইসেন্সপ্রাপ্ত সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানায় এবং বলে যে কোটা সিস্টেম ও সীমিত রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ পেলে আবারও দুর্নীতি হবে। ঢাকার এমন অনুরোধে সাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর জানায় যে তারাও কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা চায়। দুই পক্ষের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো এগিয়ে নিতে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিয়মিতভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক, ফরেন অফিস কনসালটেশন, যৌথ কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। এ ছাড়া মালয়েশিয়াতেও কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, আর বাংলাদেশে তো রয়েছেই। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সামনের দিনে ঢাকা-কুয়ালালামপুর ইতিবাচক সমাধান বের করতে পারলে অবাক হওয়ার ঘটনা ঘটবে না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম গত শুক্রবার ঢাকায় পৌঁছালে তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। দুই পক্ষের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে উভয়েই একমত পোষণ করেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তথ্য বিজ্ঞান, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, অর্থ, স্বাস্থ্য, উচ্চ শিক্ষা, কৃষি, এনার্জি, প্রতিরক্ষা এবং হালাল অর্থনীতিসহ সম্পর্কের সব ইস্যুতে আলোচনা হয়। দুই পক্ষই বৈঠকে একমত পোষণ করেন যে উভয়ের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত পরবর্তী পর্যায়ের বৈঠক খুব দ্রুত হবে। আগামী বছরের শুরুতে দুই পক্ষের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য উভয় পক্ষ সম্মতি দিয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জানান যে, গত ৩১ মের মধ্যে ১৮ হাজার বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় যেতে না পেরে ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এমন সময়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানান যে বাংলাদেশি ওই সব কর্মীকে বিশেষ সুযোগ দেওয়া হবে।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুঁজে বের করতে হবে এবং আমরা আসিয়ান, মালয়েশিয়ার সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করব। কক্সবাজারে অবস্থিত আশ্রয় শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গা তরুণদের একটি পুরো নতুন প্রজন্ম বেড়ে উঠছে। এটি ক্ষুব্ধ তরুণদের একটি প্রজন্ম। তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আমি এই উদ্বেগের কথা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। তিনি আরও বলেন, সহযোগিতার তিনটি প্রধান ক্ষেত্র নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলাপ করেছি। রাজনীতি, ব্যবসা-বিনিয়োগ, সাংস্কৃতিক ও মানবিক সহায়তা।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এখানে মালয়েশিয়ার কোম্পানি আছে, সেখানেও বাংলাদেশি বিভিন্ন কোম্পানি রয়েছে। এখানে আরও কার্যকর অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব প্রয়োজন। আমরা পুরো ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলছি। আমাদের শ্রমিক দরকার কিন্তু তাদের আধুনিক দাস হিসেবে গণ্য করা যাবে না। সেটা বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের শ্রমিকই হোক না কেন। মালয়েশিয়া দুর্নীতি, শাসনব্যবস্থা ও মৌলিক অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে আপস করে না। যত দ্রুত সম্ভব দুই পক্ষের যৌথ কমিশনের বৈঠক হবে।

আনোয়ার ইব্রাহিম গত শুক্রবার ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পর শনিবার টুইট হ্যান্ডেলে বলেন, বাংলাদেশে সংক্ষিপ্ত সফরটি ছিল দেশটির জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা। যারা দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তনের জন্য ব্যাকুল ছিলেন। বাংলাদেশের সঙ্গে শুধু কৌশলগত সম্পর্কই নয়, বাংলাদেশ যেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথার্থ পরিবর্তন করতে পারে সেজন্য সহযোগিতা করা হবে, যাতে আমরা দুই দেশ একসঙ্গে এগিয়ে যেতে পারি। বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, আমি বৈঠকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। তার মধ্যে বলেছি, মালয়েশিয়ার বন্ধ শ্রম বাজার পুনরায় চালু করার বিষয়ে। পাশাপাশি যে ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে রিক্রুটমেন্ট প্রসেস সীমাবদ্ধ ছিল, সেটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। সব রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে কাজ করতে পারে এবং প্রক্রিয়াটি যেন স্বচ্ছ হয়। কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করা যায় কি না সেটিও বলেছি। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ১৮ হাজার বাংলাদেশিকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন বলে ঘোষণা দেন। এর মানে এই নয়, যে নতুন কর্মী। এই ১৮ হাজার মানে নতুন চাকরি না, নতুন কর্মী নেওয়া হচ্ছে না। 

বায়রার (আন্তর্জাতিক রিক্রুটিং এজেন্টদের সংগঠন) সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, সদ্য সমাপ্তটি সফরটি বাংলাদেশের জন্য খুবই ইতিবাচক। বাংলাদেশি যেসব কর্মী গত ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়া যেতে পারেননি এই সফরে তাদের জন্য বিশেষ সুযোগের কথা জানান হয়। দুই পক্ষের বৈঠকে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে তাতে আমরা প্রত্যাশা করতে পারি যে মালয়েশিয়া শ্রম বাজারে সামনের দিনে সব বৈধ বাংলাদেশি এজেন্সি সুযোগ পাবে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো কোনো দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে ঢাকা সফর করলেন। মূলত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার বন্ধু হওয়াতেই সফরটি হয়েছে। এই সফরের সব বার্তা খোলাসা হতে আরও কিছু সময় লাগবে, যখন বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা হবে। জনশক্তি ইস্যুতে এই সফরে ভালো বার্তা পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। সামনের দিনে এই খাতে কী ধরনের সহযোগিতা হয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। দুই বন্ধুর চিন্তা থেকে এই ইস্যুতে সামনে কী হতে পারে তা খোলাসা হতে আরও সময় লাগবে। অধ্যাপক ড. ইউনূসের সঙ্গে বিশ্বে নোবেলপ্রাপ্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীসহ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। এখানে দেখার বিষয় রয়েছে যে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনি এসব যোগাযোগকে কীভাবে কাজে লাগাবেন।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close