সব দাবি-দাওয়া মেনে নিলেও গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন-বিক্ষোভ থামছে না। গতকাল শনিবারও গাজীপুরে বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ ১৩ দাবিতে চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একটি টেক্সটাইল মিলের শ্রমিকরা। এ ঘটনার পর আশপাশের ১৭টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, সকালে জিরানী এলাকায় কারখানার সামনে প্রায় ৪ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন আইরিশ ফেব্রিকস লিমিটেডের শ্রমিকরা। এ সময় চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও সাধারণ মানুষ। এদিকে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গেলে বিক্ষোভ স্থগিত করেন শ্রমিকরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে আইরিশ ফেব্রিকসের আশপাশের অন্তত ১৭টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আইরিশ কারখানার শ্রমিকরা বলেন, সকালে নাইট বিল, হাজিরা বোনাস, অভার টাইমের টাকা বৃদ্ধি, এক ঘণ্টা দেরিতে কারখানায় প্রবেশে হাজিরা বোনাস না কাটাসহ বিভিন্ন দাবি জানান পোশাক শ্রমিকরা। সে সময় কয়েকজন কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। ওই কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করতে হবে এবং আমাদের দাবি দ্রুত মানতে হবে, না হলে আমাদের এই কর্মসূচি চলবে।
এদিকে গতকাল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে খোলা থাকা কারখানাগুলোর শ্রমিকরা কাজে গেছেন। গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুর নগরীর জিরানী এলাকার আইরিশ ফ্যাশন লিমিটেড নামে কারখানার শ্রমিকরা সকালে কাজে এসে প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হন। পরে তারা হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল ও বাৎসরিক ছুটির টাকার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। সকাল ৯টার দিকে কারখানার পাশের চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করেন। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সড়কটি বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েন এই পথে চলাচলকারী যাত্রীরা।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের তথ্য মতে, পুরো জেলায় সব মিলিয়ে নিবন্ধিত কারখানা রয়েছে ২ হাজার ৬৩৩টি। এর বাইরে অনিবন্ধিত কারখানা আছে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০টি। এসব কারখানায় শ্রমিক কাজ করেন প্রায় ২২ লাখ।
গাজীপুর প্রতিনিধি মো. মিলটন খন্দকার জানান, হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল ও বাৎসরিক ছুটির টাকার দাবিতে গাজীপুর মহানগরীর জিরানী এলাকায় একটি পোশাক তৈরি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। এটি ছাড়া এ শিল্পাঞ্চলের সব কারখানাগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম ছিল স্বাভাবিক। সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহল ছিল।
জেলার আর কোথাও শ্রমিক অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকে সপ্তাহের প্রথম দিনে শ্রমজীবী নারী-পুরুষ শ্রমিকরা নিজেদের কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। শিল্প কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। জেলার ৮টি পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে।
কারখানা শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ জানায়, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া, ইটাহাটা, কোনাবাড়ী ও কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা দলবেঁধে সকালে কারখানার কাজে যোগ দিয়েছে। সকাল ৮টার দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কারখানায় প্রবেশ করেন। এ সময় বিভিন্ন কারখানার সামনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। সকাল থেকে জেলার কোথাও শ্রমিক অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি। ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও যান চলাচল করছে স্বাভাবিক গতিতে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পরিদর্শক আবু তালেব জানান, জিরানী এলাকার একটি কারখানা ছাড়া জেলায় আর কোথাও শ্রমিক অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন কারণে জেলার ৮টি কারখানা আজও বন্ধ আছে। শিল্প-কারখানা সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করছে শিল্প পুলিশ, টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি।
সময়ের আলো/আরএস/