ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

ডিসিসিআই’র সেমিনারে বক্তারা
১৫ শতাংশ সুদ দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা দু:সাধ্য
কারখানায় যেতে ভয় লাগে : প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী
প্রকাশ: শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪, ১০:১০ পিএম  (ভিজিট : ২১২)
১৫ শতাংশের বেশি ব্যাংক ঋণের সুদ দিয়ে পৃথিবীতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে আমাদের উদ্যোক্তাদের সেটা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে কাস্টমস হাউসসমূহে দূনীতির কারণে ব্যবসায়ীরা মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।  যা নিরসনে সরকার ফিন্যান্সিয়াল রিফর্মস কমিটি গঠন করার পাশাপাশি অটোমেশন নিশ্চিত করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন। 

আরেক শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী কারখানায় যেতে ভয় লাগে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা কষ্টে আছি। আজকে আমার কারখানায় যেতে ভয় লাগে। ভয় লাগে এই জন্য যে আমি কী নিজের জীবন নিয়ে বের হয়ে আসতে পারব? এভাবে ব্যবসায়ীরা যদি নিজেদের কারখানায় যেতে শঙ্কিত হন, তাহলে তারা আগামী দিনে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবেন না।’

শনিবার (৫ অক্টোবর) মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন মীর নাসির হোসেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এই সেমিনারের আয়োজন করে।

মীর নাসির হোসেন বলেন, দেশে মধ্যম আয়ের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী  গড়ে ওঠেছে, যাদের করজালের আওতায় নিয়ে আসা গেলে জিডিপিতে রাজস্বের অবদান অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।  যার ফলে লাভবান হবে আমাদের অর্থনীতি।

তিনি আরও বলেন, উচ্চ মূল্য প্রদান করেও আমাদের শিল্পখাতে প্রয়োজনীয় নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমাদের অনশোর-অফশোর গ্যাস অনুসন্ধানে আরো জোরারোপ করতে হবে।   

সেমিনারে লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম,  শাশা ডেনিমস লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি শামস মাহমুদ, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশ-এর সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল এবং ফুডপান্ডা বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আমব্রারিন রেজা অংশগ্রহণ করেন।  

সেমিনারের শুরুতে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, কোভিড পরবর্তী সময় থেকে আমরা নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শিল্প-কারখানায় অসন্তোষের কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, উচ্চমূল্যস্ফীতি ও ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনার অস্থিতিশীলতার কারণে বেসরকারিখাত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।  অর্থনীতির সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে যা কোন ভাবেই কাম্য নয়।

এসময় তিনি উল্লেখ করেন, দেশের ভালো ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট রয়েছে। যার ফলে উদ্যোক্তারা প্রত্যাশিত মাত্রায় ঋণ পাচ্ছেন না।  সেই সঙ্গে কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা শিল্পখাতে পণ্য উৎপাদনকে ব্যাহত করছে। স্থানীয় চাহিদার যোগান মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি সমন্বিত রাখা বেশ কষ্টকর হয়ে দাড়িঁয়েছে।  সেমিনারে ঢাকা চেম্বার সভাপতি শিল্পাঞ্চল সমূহে নিরিবিচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগ প্রদানের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানান। এছাড়াও শিল্পাঞ্চল সমূহে বিশেষকরে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে আবাসন, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা স্বল্পমূল্যে নিশ্চিতকরনে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণেরও দাবী জানান তিনি।    

লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, আমরা উদ্যোক্তারা এ দেশে থেকেই অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার মাধ্যমে অর্থনীতিকে আরো সুদৃঢ় করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, দক্ষ ও ভালো নিয়োগের মাধ্যমে সংকট উত্তরণ সম্ভব। যা বাংলাদেশে ব্যাংকের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীরা ভীষণভাবে অনিশ্চিয়তা ও নিরাপত্তাহীনতরা মধ্যে রয়েছে। এমন সংকট উত্তরণে শিল্পাঞ্চলে বিশেষ করে শিল্পপুলিশ ও সেনাবাহিনীর কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। 

এছাড়াও প্রশাসনের অনেক জায়গা থেকে  প্রয়োজনীয় উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বতী সরকরের কাছে সুনিদিষ্ট তথ্য দেওয়া জরুরি। 

তিনি আরও বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে স্থানীয়ভাবে আমাদের চাহিদা কমে গেছে। যা উদ্বেগের বিষয়, সেখানে সবাইকে নজর দিতে হবে। ডাবল ডিজিটের সুদ দিয়ে ব্যবসায় মুনাফা করা অসম্ভব, তাই আমাদের দীর্ঘমেয়াদী টেকসই অর্থায়ন রোডম্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উপর অধিক হারে জোরারোপ করতে হবে। শুধুমাত্র রেমিট্যান্স ও দাতাদের উপর নির্ভর করলে চলবে না। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের উপর আরো অধিক হারে গুরুত্ব দিতে হবে। 

বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিদ্যমান শ্রমিক অসন্তোষে কার্যক্রমে অনুপ্রবেশকারীদের হাত রয়েছে এবং এ অবস্থা উত্তরণে শ্রমিক-মালিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যকার সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করতে হবে। 

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শ্রমিকদের বেশকিছু দাবী মেনে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শ্রমিকদের যেকোন যৌক্তিক দাবী বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ ইতিবাচকভাবে মেটাতে বদ্ধ পরিকর। সেই সঙ্গে বৈশি^ক ব্রান্ডসমূহ ও  ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ হতে পণ্যের যৌক্তিক মূল প্রাপ্তির উপর তিনি জোরারোপ করেন। যার মাধ্যমে শ্রমিক স্বার্থ আরো সুসংহত করা সম্ভব হবে। এ মূহুর্তে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কনফিডেন্স বাড়ানোর উপর আরো অধিক হারে গুরুত্ব দিচ্ছি। খেলাপী ঋণ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের কারণে দেশের অধিকাংশ উদ্যোক্তাদের খেলাপী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা।

সময়ের আলো/এম 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close