ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বৈষম্যমুক্ত সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ ২.০ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রূপরেখা প্রকাশ
প্রকাশ: শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪, ৬:১১ পিএম  (ভিজিট : ২৫৪)
সামরিক বাহিনীর মধ্যে বৈষম্য এবং রাজনৈতিক প্রভাবের অবসান ঘটিয়ে একটি মেধাবী ও ন্যায়বিচারপূর্ণ বাহিনী গড়ে তোলা, যা শুধু দেশের নিরাপত্তার সেবা করবে না, বরং নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে বলে মত প্রকাশ করেন বৈষম্যের শিকার হওয়া সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন কর্মকর্তারা।

শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে  রাজধানীর রাওয়া কমপ্লেক্স এর ঈগল হলে 'বৈষম্যমুক্ত সশস্ত্র বাহিনী- বাংলাদেশ ২.০ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রূপরেখা' বিষয়ক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন কর্মকর্তারা।

বৈষম্যবিরোধী সামরিক বাহিনীর দুই শতাধিক কর্মকর্তাবৃন্দের আয়োজনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। 

অনুষ্ঠানে কি-নোট প্রতিবেদনে উপস্থাপন করেন কমান্ডার নেসার আহমেদ জুলিয়াস (অবঃ)। তিনি কি-নোট প্রতিবেদনে সংস্কারের রূপরেখা উল্লেখ করেন, সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চর্চা বন্ধ করা এবং তাদের নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা অবিচারের শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতি সম্মান ও ন্যায়বিচার ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। এই সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রথমে আমাদের অবশ্যই বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের প্রতি সংঘটিত অন্যায়কে স্বীকার করতে হবে। এই অন্যায়ের স্বীকৃতি দেওয়াই হবে পুনরুদ্ধারের প্রথম পদক্ষেপ।

সংস্কারের বিষয়ে তিনটি দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথমে- সরকারের উচিত অনতিবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করা, যার মাধ্যমে নির্যাতিত কর্মকর্তাদের বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করে ন্যায়বিচার প্রদান করা হবে। তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে তারা যেন দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে অবদান রাখতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়তো- নির্যাতিত কর্মকর্তাদের জন্য একটি আর্থিক পুনর্বাসন প্যাকেজ তৈরি করা, যার মাধ্যমে তারা তাদের পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন। বৈষম্যের শিকার হওয়া কর্মকর্তাদের সমুদয় পেনশন ফেরত দেয়া এবং যাদের চাকরির বয়স রয়েছে তাদেরকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা। এবং সবশেষে একটি নিরপেক্ষ সংস্কার কমিশন গঠন করে বিদ্যমান সামরিক আইনে মানবাধিকারসহ অন্যান্য সাংঘর্ষিক আইনের পরিবর্তন করা, যেন আর কোন সরকার সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে না পারে।

তিনি বলেন, আমাদের দাবিগুলোর বিষয় আমলে নেওয়ার জন্য গত ৫ সেপ্টেম্বর আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন করেছিলাম। রাষ্ট্রীয় বাসভবনের সামনে সকাল বেলা জনগন রাস্তায় শুয়ে পরলে বিকেল বেলায় কমিশন হয়ে যাচ্ছে যাচাই-বাছাই এর জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, অদ্যাবধি আমরা উনার কাছ থেকে বা বাহিনী প্রধানদের কাছ থেকে কোন রকম সাড়া পাইনি। 

৫ আগস্ট এ স্বাধীনতার পরে যত দুর্নীতিবাজ তারকা চিহ্নিত অফিসারের কীর্তি জাতির সামনে উন্মচিত হয়েছে এখানের ২০০ জন অফিসারের অপরাধকে একসাথে করলেও তার ১০০ ভাগের ১ ভাগ হবে নাহ- বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বর্তমান প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমরা দেশপ্রেমিক সামরিক সদস্য। আমাদের কথাগুলো শুনুন, কিভাবে নির্বিচারে আঙ্গুলের বদলে হাত কাটা হয়েছে, হাত এর বদলে মাথা কাটা হয়েছে। আমরা চাই নাহ, আমাদের মতো আর কোন সামরিক সহকর্মীর অবিচার হোক, গুম-খুন হয়ে যাক, রাজনীতি-সরকার-বৈষম্যের শিকার হয়ে কোন পরিবার রাস্তায় নামুক।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে যেটি দেখেছি, বাংলাদেশের খুনী-ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার অবৈধ সরকার, এই সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে সরকারের বাহিনী, রাষ্ট্রের বাহিনী বা জনগণের বাহিনীর চেয়ে আওয়ামী বাহিনী হিসেবে বেশি ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। এরকম অসংখ্য ঘটনা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে শুনেছি। যখনই অনেক কষ্টে দেশের বাইরে গিয়ে মিডিয়া বা নিজেরা বলার চেষ্টা করেছে তখন থেকে জানতে পেরেছি- তাদের এমন অবস্থা তৈরি করেছিল বলা কষ্টকর ছিল।

শপথ নেওয়ার স্পিরিটের কথা বলি সেটার সঙ্গে বিন্দুমাত্র কম্প্রোমাইজ করতে বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিলেন। এই সেনাবাহিনীর গুটিকয়েক ফ্যাসিস্টের দালাল ছিল, তারা একটি কমান্ড করে। এই কমান্ডটি দেশ-দেশের মানুষের জন্য ভালো না। ওই কমান্ডটি যখন তারা মানেনি তখন সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যখন তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ পায়নি, তখন ওই জাহাঙ্গীর কবির নানকরা, ওবায়দুল কাদেররা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা করে তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।

এই যে আওয়ামী একটি বাহিনী তৈরির অপচেষ্টা ওই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যেমন করেছে তেমন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সশস্ত্র বাহিনীর কতিপয় কিছু আওয়ামী দোসর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনাদের হয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট করে একটি কথা বলতে চাই- এই যে দোসররা ছিল, তাদেরকে যদি শুধুমাত্র চাকরিচ্যুত করার মাধ্যমে আজকের এই ঘটনাটি শেষ করে দেওয়া হয়! তাহলে আগামীতে যে ঘটনাটি হবে সেটি হচ্ছে অনেকেই আগামীদের আবারও কোন ফ্যাসিস্টের দোসর হয়ে এমন কিছু ঘটনা করবে, যেটি দিয়ে হয়তো কয়েকশ কোটি টাকা বাগিয়ে নিবে। অসংখ্য মানুষের জীবনহানী করবে। এর বিনিময়ে যদি শুধুমাত্র চাকরি হারায়, আর যদি কিছু না হয়। দেশ এবং দেশের বাইরে পুনর্বাসন পেয়ে যাচ্ছি।

আমরা আমাদের জায়গা থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটি কথা বলি, আপনারা আজকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কিংবা উপদেষ্টা হয়েছেন হাজার হাজার জীবনের রক্তের উপরে। অর্ধলক্ষ ভাই বোন রক্ত দিয়েছে। এখনও হাসপাতালে কাতরাচ্ছে অনেকে। রক্তের দাগ এখনও শুকায়নাই, সেলাইগুলো শুকায়নাই। আপনারা যদি ওই গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বসে এই সুশীলতা দেখান, সেটা দেখতে আমরা প্রস্তুত নই। এটা আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট বার্তা, এই পুরো সিস্টেমটিকে আবার পচন ধরানোর জন্য ওই অল্প কিছু পঁচা মানুষই যথেষ্ট। আমরা পুরো পঁচা শরীরকে রেখে মাথা যদি ভালো একজনকে দিয়ে প্রতিস্থাপন করি। এরকম কোন সিস্টেম নেই যে ভালো মাথা দিয়ে বাকিটুকু ভালো হয়ে যাবে। বরং ওই পঁচা শরীর দিয়ে মাথাটুকু পঁচার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। সেই জায়গা থেকে যাদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ প্রমাণগুলো রয়েছে, ডকুমেন্ট রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থাটি নিতে হবে।

যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ওই সরকারকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়ার সেই ব্যবস্থা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তাদের সময়েই শেষ করতে হবে। যদি তারা না করতে পারে, যে রক্তের উপর দাড়িয়ে তারা ওই আসনগুলোতে বসেছে সেই রক্তের মর্যাদা তারা নিজেরা নষ্ট করছে- বলেও  যোগ করেন সারজিস আলম। 

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ৫ অগাস্টের পরে এ সরকারের উচিৎ ছিল কিছু স্টেপ নেওয়া যেগুলো আমাদের কনফিডেন্স বোস্ট করবে। সেগুলোর মধ্যে একটা বিচার নিশ্চিত করা। আমরা এ সরকার হয়তো ভুলে গিয়েছে এ সরকার বিপ্লবী সরকার। আমরা তাদের পদক্ষেপের মধ্যে এখনও এই জিনিসটি বুঝতেই পারিনা বা তারা নিজেরাই বুঝতে পারেনা তারা একটি বিপ্লবী সরকার। তাদেরকে বুঝতে হবে, এ সরকারে যারা রয়েছেন তাদেরকে অনুধাবন করতে হবে এ সরকার কোন সংবিধান-নিয়ম মেনে আসেনি। সুতরাং ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা বিলোপ করার জন্য সংবিধানের কোন নিয়মের দোহাই দিয়ে তাহলে পুরো জাতিকে আবার হতাস করবে। এ সরকার প্রতি স্টেপের মধ্যে আমরা ভেবেছিলাম তারা ফিল করবে এটা বিপ্লবী সরকার। আমরা প্রত্যাশিত তাদের কোন ধরনের স্টেপ এই দুই মাসে  দেখিনি। যেটির মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় এই সরকার বিপ্লবী সরকার।

তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ, এই সরকারের প্রথম কোন কার্নেজ। ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা কায়েমের প্রথম পদক্ষেপ। এই সরকার এসে বিডিআর বিদ্রোহের বিচার নিশ্চিত করার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা এই দুইমাস যথেষ্ট সময়। এখন আমাদের প্রশ্ন করার সময় এসেছে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

পৃথিবীতে বিভিন্ন জায়গায় সংবিধান বিলোপ করার পরে এবং সেনাশাসন কায়েম করার পরে যে ধরনের ফ্যাসিজমের উৎপত্তি ঘটে কিন্তু শেখ হাসিনা সংবিধানকে কায়েম রেখেই তার চেয়ে আরও কঠিন ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থা করেছে। যেই সংবিধান একটা ফ্যাসিস্ট কাঠামো আমাদের উপহার দিয়েছে, সেই সংবিধানকে বিদ্যমান রেখে আমাদের বিডিআর বিদ্রোহ থেকে শুরু করে সেই সরকারের আমলে যতো অপশাসন হয়েছে তার বিচার নিশ্চিত করতে পারবো? দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যমান সংবিধানটি বাতিল করে দিতে হবে।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা ট্রমার মধ্যে রয়েছি, যারা ক্ষমতায় আছে এবং যারা ক্ষমতার কাছাকাছি আছে আমরা কাউকে আর বিশ্বাস করতে চাইনা। আমরা যেহেতু ইতিহাসের প্রতিটি স্তরে স্তরে প্রতারিত হয়েছি। এ কারণে ক্ষমতায় যারা রয়েছে তাদের থেকেও আমরা আশা হারায়ে যাই। এ কারণে অন্তর্বর্তী সরকারে যারা রয়েছে আমরা তাদেরকে আহ্বান জানাবো, এটা বিপ্লবী সরকার এটার চেতনা আপনারা ধরন করুন। সিদ্ধান্তগুলো যেন র‌্যাপিড হয়, সিদ্ধান্তুগলো যদি আপনারা সংবিধান আর নিয়মের বেড়াজালে রেখে দেন আমরা আশাহত হবো। সেজন্য আমরা আপনাদের কাছে প্রত্যাশা করবো বিভিন্ন কমিশন গঠন করে দিয়ে যারা বঞ্চিত ছিল তাদেরকে কীভাবে পুনর্বাসন করবেন।

জেনারেল জিয়া ও তারেক সিদ্দিকী ওনারা বেসিকিলি বাংলাদেশের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। পুরো এজেন্সিটা চালাতেন। একটা সার্বভৌম দেশের মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশের ইনফ্লুয়েন্স কেমন ছিল যে র’এর অফিস ক্যান্টনমেন্ট ছিল। এ বিষয়গুলো সেনাবাহিনী জানতো। এতোদিন নিশ্চুপ ছিলেন, এখন অযু করে সাধু হয়ে যাবেন সেই সুযোগ নেই- যোগ করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

সেমিনারে বৈষম্যবিরোধী চাকরিচুত্য ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close