ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

চার হত্যাসহ ২০ মামলা তার বিরুদ্ধে
ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো আল আমিন প্রকাশ্যে
প্রকাশ: শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪, ১:২২ এএম আপডেট: ০৫.১০.২০২৪ ৮:০৮ এএম  (ভিজিট : ২৭৯)
আল আমিন। কুমিল্লার শহরে তার পাপের সাম্রাজ্য এতটাই বিস্তৃত, শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার কাছে তিনি ‘ভয়ংকর কিলার’ হিসেবে পরিচিত। রাতের বেলা শিশুরা ঘুমাতে না চাইলে অভিভাবকরা ভয় দেখান তার নাম ধরে। বৃদ্ধরা দোয়া পড়েন যেন, তার সঙ্গে দেখা না হয়। আর তরুণরা আতঙ্কে থাকেন, কখনো যেন কোনো কারণে তার চক্ষুশূল না হয়ে পড়েন।

দিনদুপুরে চাঁদা চেয়ে চিরকুট পাঠাত তার বাহিনী। সঙ্গে পাঠাত কাফনের কাপড়। অনেকেই দাবিকৃত সেই চাঁদা দিয়ে দিতেন নীরবে। না দিলে জীবন দিতে হতো। স্বৈরাচারী সরকারের নেতাদের আশ্রয়ে আল আমিনের ছিনতাই, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, ব্যাংক লুট ও ডাকাতি, দখল, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষ। 

সর্বশেষ ৩ আগস্ট  গণঅভ্যুত্থান চলাকালে কুমিল্লায় পিস্তল দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও এখনও প্রকাশ্যে চলছে কুমিল্লা নগরীতে আল আমিন বাহিনীর সন্ত্রাসী রাজত্ব। গুঞ্জন ছিল মহানগর যুবলীগের ভালো পদের আশায় পিস্তল দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করেন আল আমিন। জেলা পুলিশের হিসাবে ২০ মামলার চিহ্নিত আসামি আল আমিন (২৭)। কুমিল্লা নগরীর সংরাইশ এলাকার মো. ইদু মিয়ার ছেলে তিনি। দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকা ও কিলার হওয়ায় পুলিশের বিশেষ শাখার তালিকায় তিনি ‘কিলার আল আমিন’ হিসেবে চিহ্নিত। ভয়ংকর এই খুনির নামে পুলিশের কাছে রয়েছে চারটি হত্যা মামলার নথি। বাকি মামলাগুলো হচ্ছে চাঁদাবাজি, অপহরণ, বিস্ফোরকদ্রব্য ব্যবহার, হত্যাচেষ্টা, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগে। গত ৫ আগস্টের পর নগরীর সংরাইশ এলাকায় এক তরুণীকে বাসা থেকে নিয়ে চার দিন অপহরণ করে ধর্ষণের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন তিনি। এ নিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর পরিবার। 

এ ছাড়া অর্ধশতাধিক অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) পড়ে আছে দেশের বিভিন্ন থানায়। সর্বশেষ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কুমিল্লায় ৩ আগস্ট তার বাহিনী গুলি করে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বাদী হয়ে সদর দক্ষিণ ও কোতোয়ালি মডেল থানায় একাধিক মামলা করেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংরাইশ, শুভপুর, বজ্রপুর, সুজানগর, পাথুরি পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার বেশকিছু বাসিন্দা বলেন, এলাকাতে নতুন বাড়ি করতে গেলে আল আমিন বাহিনীকে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না পেলে প্রকাশ্যে বাড়ির কাজ বন্ধ করে দেয়। প্রশাসনের কাছে একাধিক অভিযোগ করে কোনো সুফল মিলে না। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা আছে, অথচ সে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে, কীভাবে সম্ভব? কুমিল্লা শহরের সব মাদক কারবারির নিয়ন্ত্রণকারী আল আমিন, তার হাত অনেক ওপরে। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে জীবনে নেমে আসে অভিশাপ। 

দ্বীন ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ছাতিপট্টি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করতে গিয়ে আল আমিন বাহিনীকে বার্ষিক ১ লাখ টাকা চাঁদা দিতাম। গত পাঁচ আগস্টের পর টাকা দিতে আপত্তি জানালে আমাকে ও আমার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমি পরিবার নিয়ে পালিয়ে ঢাকায় বসবাস করছি। প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

মামলার একাধিক বাদী অভিযোগ করে বলেন, তার বিরুদ্ধে  অভিযোগ থাকলেও, কী কারণে তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, আমরা বুঝতেছি না। শুধু মামলার বাদী হওয়ার কারণে আমাদের জীবন এখন হুমকির মুখে। আল আমিন এখন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দিচ্ছে। 

কুমিল্লা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, আমরা ছাত্র সমন্বয়কের পক্ষে সন্ত্রাসী আল আমিনের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের ওপর আল আমিনের নেতৃত্বে গুলিবর্ষণ হয়েছে। অথচ এই আল আমিন এখন কুমিল্লা শহরে ঘুরছেন। এ নিয়ে প্রশাসনের কোনো ভূমিকা দেখছি না। 

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। তার (আল আমিন) বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

কুমিল্লার পুলিশ সুপার আসফিকুজ্জামান আকতার বলেন, সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লাতেও যৌথ অভিযান চলমান রয়েছে। সর্বশেষ ছয় জন আটক করা হয়েছে বিভিন্ন স্থান থেকে। আল আমিনসহ চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলমান রয়েছে।


সময়ের আলো/আরএস/




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close