ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ
পাল্টাপাল্টি হামলায় তীব্র সংঘাত
প্রকাশ: শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪, ১:১০ এএম  (ভিজিট : ১৮০)
লেবাননে পাল্টাপাল্টি হামলায় তীব্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে হিজবুল্লাহ ও ইসরাইল। গতকাল শুক্রবার  ইসরাইলের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা প্রায় ১০০ হিজবুল্লাহ যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। অপরদিকে ইরানপন্থি গোষ্ঠীটি দাবি করেছে, তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে গত দুই দিনে ইসরাইলের ২০ সেনা আহত বা নিহত হয়েছে। বৈরুতের পাশাপাশি সিরিয়া-লেবানন মহাসড়কেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। হাইফাতে ২০টি রকেট ছুড়েছে হিজবুল্লাহ। এ ছাড়া লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় ৩৭টি গ্রাম ও শহরের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তারা। ইসরাইলি হামলায় লেবানন থেকে সিরিয়ায় যাওয়ার রাস্তাটিও বন্ধ হয়ে গেছে।

ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলের সামরিক অভিযানে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১০০ জন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ইসরাইলি বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের সময় সংঘর্ষে এসব যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছেন।

আইডিএফ জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন গ্রামে পরিচালিত অভিযানে হিজবুল্লাহর ফেলে যাওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার এবং গোলাবারুদসহ অস্ত্রের মজুদ পাওয়া গেছে। ইসরাইলি ১৮৮তম আর্মার্ড ব্রিগেডের সেনারা একটি গ্রাম থেকে এগুলো উদ্ধার করে।

এদিকে ইসরাইলি শহর হাইফা, জিখরন ইয়াকভ, কায়সারিয়া ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় রকেট হামলার সতর্কতা হিসেবে সাইরেন বেজেছে। এ ছাড়া গ্যালিলি অঞ্চলের একাধিক গ্রামেও একই ধরনের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উত্তরের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে রকেট হামলার শঙ্কায় আতঙ্ক বিরাজ করেছে।

আইডিএফ বলছে, গত ১ ঘণ্টায় লেবানন থেকে প্রায় ২০টি রকেট ইসরাইলের হাইফা অঞ্চলের দিকে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এর বেশিরভাগই প্রতিরোধ করা হয়েছে। বাকিগুলো জনশূন্য এলাকায় আঘাত হেনেছে। সাম্প্রতিক হামলাগুলোতে কোনো প্রাণহানি বা গুরুতর ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে আইডিএফ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার কথা জানিয়েছে। তবে অন্যান্য সূত্রে ইসরাইলে আরও বেশি রকেট হামলা ও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ইসরাইল বরাবরই হামলার প্রভাব গোপন করে রাখে।
এদিকে আইডিএফ দক্ষিণ লেবাননের ৩৭টি গ্রাম ও শহরের বাসিন্দাদের দ্রুত এলাকা খালি করার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের উত্তর দিকে আওয়ালি নদীর ওপারে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। কয়েক দিন আগে, আইডিএফ দক্ষিণ লেবাননের কয়েক ডজন এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এর মধ্যে লিতানি নদীর উত্তরেও কয়েকটি অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আইডিএফের আরবি ভাষার মুখপাত্র কর্নেল আভিচাই আদ্রায়ি বলেছেন, হিজবুল্লাহর কর্মকাণ্ডের কারণে আইডিএফকে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। আইডিএফ সাধারণ জনগণকে ক্ষতি করতে চায় না। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত বাড়িঘর ছেড়ে যেতে হবে। যারা হিজবুল্লাহ যোদ্ধা বা তাদের অস্ত্রাগারের আশপাশে থাকবেন, তারা ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন। আইডিএফ জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় এলাকায় ফিরতে নির্দেশ দেওয়া হবে।

লেবাননের পরিবহনমন্ত্রী আলি হামিয়ে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে লেবাননের মাসনা সীমান্তে একটি ইসরাইলি বিমান হামলায় প্রায় ১২ ফুট চওড়া একটি গর্ত তৈরি হয়েছে। লেবাননের এই অংশে অবস্থিত সীমান্তের মহাসড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে লেবাননের নাগরিকদের সিরিয়ায় যেতে বাধা সৃষ্টি করছে।

এর আগে, আইডিএফ মুখপাত্র কর্নেল আভিচাই আদ্রায়ি বলেছিলেন, হিজবুল্লাহ এই সীমান্ত পয়েন্টটি অস্ত্র পরিবহনের জন্য ব্যবহার করছে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, অস্ত্র চালান বন্ধে আইডিএফ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না।

হিজবুল্লাহ দাবি করেছে, বৃহস্পতিবার মারুন আল-রাস ও ইয়ারুন এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে তারা ২০ জন ইসরাইলি সেনা ও কর্মকর্তাকে হত্যা বা আহত করেছে। এর আগে বুধ ও বৃহস্পতিবার আরও ১৭ জন ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে হিজবুল্লাহ।

তবে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর দাবি অনুসারে, বুধ ও বৃহস্পতিবার লেবাননে সংঘর্ষে তাদের ৯ জন সেনা নিহত হয়েছে। হিজবুল্লাহর দাবি ও ইসরাইলি তথ্যের মধ্যে এই পার্থক্য সংঘাতের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি অভিযান ও হিজবুল্লাহর পাল্টা হামলার ফলে উত্তেজনা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসরাইলি সামরিক কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎপর থাকলেও হিজবুল্লাহর পাল্টা আঘাত এই সংঘাতকে আরও বিস্তৃত করার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।

এদিকে ইসরাইলের বিমান ও স্থল হামলা শুরুর পর ২৪ ঘণ্টায় দায়িত্বে থাকা অন্তত ২৮ জন চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস অনলাইনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, অনেক স্বাস্থ্যকর্মী কাজে আসছে না। বোমা হামলার কারণে তারা যেখানে কাজ করে সেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

ইসরাইলের বোমা হামলার কারণে লেবাননের বর্তমান পরিস্থিতি বেশ ‘কঠিন ও বিপজ্জনক’ উল্লেখ করে গেব্রিয়েসুস স্বাস্থ্যকর্মীদের শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইসরাইলের হামলার কারণে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা কঠিন হচ্ছে। ইসরাইলের হামলায় বাস্তুচ্যুত হওয়ায় অনেক স্বাস্থ্যকর্মী কাজে যোগ দিচ্ছেন না। ফলে স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দক্ষিণ লেবাননে ৩৭টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি বৈরুতের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল কর্মী ও রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close