ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

২০ হাজার ইয়াবাসহ গেফতার ২
ডাক্তার দেখানোর বাহানায় ইয়াবা পাচার
প্রকাশ: শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪, ১১:১৭ পিএম  (ভিজিট : ২৭২)
সারাদেশের মাদকবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। একের পর এক চিহ্নিত মাদক কারবারিও গ্রেফতার হচ্ছে। তবে বন্ধ হয়নি মাদকের পাচার। রয়েছে মাদকের সহজলভ্যতা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানামুখী অভিযানের কারণে অনেকটা ধরন পাল্টে পরিচালনা করছে মাদকের কারবার। আগের সব ধরণ পাল্টে নতুন রূপে, নতুন কৌশলে মাদক করাবারিরা মাদকের পাচার ও সরবরাহ পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বলছে, মূলত কক্সবাজারে টেকনাফের নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে মরণ নেশা ইয়াবা ট্যাবরেলট ও ক্রিস্টাল মেথ আইস মাদকসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। আগে ঢাকার মাদক কারবারিরা টেকনাফ গিয়ে মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা দিয়ে আসতো, এরপর সেখানকার কারবারিরা ঢাকার মাদকের কারবারিদের মাধ্যমে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মাদকের চালান পাঠাতো। ওই সময় কারবারিদের কৌশল ছিলো- সবজির পিকআপ, লড়ি, ট্রাক, দুরপাল্লার বাসের সিটের নিচে লুকিয়ে, কখনও লোক মারফত পাঠানো, অথবা প্রাইভেটকারে কক্সবাজারে যাওয়া ট্যুরিস্টের মাধ্যমে মাদক ঢাকায় পাঠানো হতো। অনেক সময়, কক্সবাজার থেকে শুটকির আড়ালে, বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে ট্রেনযোগেও ঢাকায় ঢুকতো এসব ইয়াবা-আইস মাদক। এসব মাদকের টাকা হুন্ডি, বাহক অথবা মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমেও পাঠানো হতো।

সাম্প্রতিক সময়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান ও বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট পরিচালনার কারণে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও আইস মাদকসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য জব্দ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ উপ অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মামুন দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, কক্সবাজারের মাদক কারবারীরা কৌশলে বিভিন্ন পরিমাণে ইয়াবা এনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াটিয়া সেজে অবস্থান নেয়। ঢাকায় চিকিৎসা, হকারি ব্যবসাসহ নানা কারণ দেখিয়ে তারা ঢাকায় অবস্থান করে। এক স্থানে বেশি দিন না থেকে কিছুদিন পর তারা নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করছেন। রাজধানীর মাদক কারবারীরা কক্সবাজারের মাদক কারবারীদের কাছে এখন লোক মারফত বা কোনো বাসের চালক-হেলপারে মাধ্যমে হাতে হাতে টাকা পৌঁছে দেয়। এরপর কক্সবাজারের মাদক কারবারিদের ঢাকায় অবস্থান করা সহযোগী বা বাহকের মাধ্যমে রাজধানীর কারবারিদের কাছে ইয়াবা ট্যাবলেট বা আইস মাদকের চালান পৌঁছে দেওয়ার কাজটি পরিচালনা করছে। কক্সবাজারে মাদক কারবারিরা এখন আগের মত কোনো মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে মাদকের টাকা নিচ্ছে না। তারা হাতে হাতে অথবা বাহকের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেফতার এড়াতে এখন মাদক পাচারের জন্য আগের মত বড় বড় চালান কক্সবাজার থেকে ঢাকায় পাঠাচ্ছে না কারবারিরা। তারা একেবারে ছোট ছোট চালান তাদের বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত মানুষের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠাচ্ছেন। তবে যাদের মাধ্যমে ঢাকার মাদক কারবারিদের কাছে মাদকের চালান পাঠানোর হয় এই কারবারে নতুন। তাদের নামে মাদক সংক্রান্ত কোনো মামলা বা অভিযোগ নেই।  

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিকাল থেকে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) মধ্যরাত পর্যন্ত রাজধানীর ওয়ারী ও ডেমরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারসহ মাদক কারবারী মো. তানজিল (৩২) কে হাতেনাতে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো দক্ষিনের একটি দল। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কলিমা আক্তার ওরফে রোজি (৩০) নামে এক মাদক বিক্রেতা ও সরবরাহকারীকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে ২০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ উপ অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (এডি) সুব্রত সরকার শুভ দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার তানজিল কাছ থেকে গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ-কেন্দ্রিক মাদক কারবারিদের একটি নতুন চক্রের সদস্যরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিক্রি ও সরবরাহ করছে। তানজিলের তথ্যের ভিত্তিতে ক্রেতা সেজে ডেমরার বামৈল এলাকায় পৌঁছে ইয়াবা কিনতে গিয়ে চক্রের এই্ নারী সদস্য কলিমা আক্তার ওরফে রোজি গ্রেফতার করা হয়। পরে তার ভাড়া বাসায় তল্লাশি করে ওয়ারড্রবের ড্রয়ার থেকে ২০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

ইয়াবা সরবরাহ করতে এসেছিলেন তখন চক্রের এই সদস্য সঙ্গে করে একটি প্রেসক্রিপশনের ফাইল নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, গ্রেফতার রোজি ভাষ্য, কেউ সন্দেহ যাতে না করে সেজন্য ডাক্তার দেখানোর বাহানায় তিনি এসব ইয়াবা ট্যাবলেট সরবরাহ করেছেন।  

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা তার হাতে থাকা ওই প্রেসক্রিপশনের থেকেই গ্রেফতার রোজির নাম-পরিচয় জানতে পেরেছি। গেফতার কলিমা আক্তার ওরফে রোজি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার পুরান পল্লান পাড়া (২নং ওয়ার্ড, টেকনাফ পৌরসভা) গ্রামের মো. আলমের মেয়ে। তার স্বামীর নাম মো. ইউসুফ। বেশ কয়েক মাস ধরে রোজি রাজধানীর ডেমরা এলাকার বামৈল এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন। গ্রেফতার আসামি মো. তানজিল বংশাল ও ওয়ারী এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারী। তার বিরুদ্ধে ডিএমপির ওয়ারী ও সুত্রাপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৩টি মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, তাদের এই চক্রে আরও সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে রোজির মত অনেক নারী সদস্য আছেন যারা কক্সবাজারে মাদকের করবারিদের নির্দেশে রাজধানীর ডেমরাসহ বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা, আইস সহ বিভিন্ন মাদক সরবরাহের কাজে নিয়োজিত। আমরা তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।  

সময়ের আলো/জেডআই




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close