ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ইরামতি খালের বাঁধ এখন গলার কাঁটা
বাঁধ নির্মাণের পর দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা পানির নিচে হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল
প্রকাশ: শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪, ৪:৪২ এএম  (ভিজিট : ১৮৪)


বগুড়ার আদমদীঘিতে ইরামতি খালে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বৃষ্টির পানি আটকে রাখার উদ্দেশ্যে সাত ফুট উঁচু করে দুটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল এ অঞ্চলের কৃষকদের উপকারের কথা ভেবে। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়েছে। এ বাঁধের কারণেই এখন চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের। এক পশলা বৃষ্টি হলেই পানি নিষ্কাশনের এই খালে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। জলাবদ্ধতায় নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল।

এ বিষয়ে আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ বলেন, বরেন্দ্র প্রকল্পের দুটি বাঁধ এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে আকস্মিক বন্যায় উপজেলার দুটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে প্রায় ৬০ হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বোরো আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। এতে করে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও আশ্বাস প্রদান করেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আদমদীঘি উপজেলা ও নওগাঁ জেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইরামতি খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ কিলোমিটার। ইরামতি খালের উৎপত্তি দুপচাঁচিয়া উপজেলার ভাতহান্ডা এলাকায়।

দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি, রানীনগর, আক্কেলপুর, ক্ষেতলাল উপজেলার মাঠের পানি গড়িয়ে এই খাল দিয়ে রক্তদহ বিলে গিয়ে পড়ে। রক্তদহ বিল থেকে এই পানি বিভিন্ন খাল পথে প্রবাহিত হয়ে আত্রাই নদীতে যায়। এটি হলো এই ইরামতি খালের স্বাভাবিক গতি ধারা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামান্য বৃষ্টি হলেই এই ইরামতি খাল ও রক্তদহ বিলে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা বাধ্য হয়েই ইরামতি খালের বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হচ্ছে না। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির পানি ও উজান থেকে নেমে আসা পানি এ খাল দিয়ে গড়িয়ে ভাটার দিকে সঠিকভাবে যেতে পারছে না। এ কারণে খালের দুই পাশের হাজার হাজার বিঘা আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে এ অঞ্চলের কৃষকরা লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে আশঙ্কা করছেন। এ ছাড়া এলাকার প্রভাবশালী এক ব্যক্তি রানীনগর উপজেলার চকপারইল গ্রামের দক্ষিণে রক্তদহ বিলের বিশাল অংশ দখল করে মাছের খামার গড়ে তোলায় সেখানে সরু পথে পানি ঠিকমতো নিষ্কাশন হয় না। স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসীর জোর দাবি, ইরামতি খালের দুটি বাঁধ ভেঙে ফেলে রক্তদহ বিলকে অবৈধ দখলদারমুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি ইরামতি খাল পুনঃখনন করে পানি নিষ্কাশন সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে এই অগভীর খাল ভরাট হয়ে গেলে খনন করা হলেও কোনো লাভ হয়নি। ২০১৩ সালে দায়সারাভাবে এই খাল পুনঃখনন করা হয়। এই খালটি পুনরায় ভরাট হয়ে বর্তমানে কচুরিপানায় ভরে আছে। সেই সময় আদমদীঘি উপজেলার কোঁচকুড়ি রেলওয়ে ব্রিজ থেকে পারইল রক্তদহের বিল পর্যন্ত না পৌঁছাতেই খালটির খনন কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাঁকি দিয়ে চলে যায়। যেখানে যতটুকু চওড়া ও গভীর করে খনন করার কথা ছিল তা করা হয়নি। এ ছাড়া চকপারইল গ্রামের পাশ দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের জন্য একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিজের পশ্চিম পাশে খালের কোনো অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। এলাকার একশ্রেণির প্রভাবশালী চক্র শত শত বিঘা সরকারি খাস জমি ও রক্তদহ বিল দখল করে তৈরি করেছে বিশাল মাছের খামার। উপজেলার কেশরতা গ্রামের কৃষক ইয়াছিন আলী বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই আমাদের জমির ধানপানির নিচে তলিয়ে যায়। আমরা এলাকার অনেক কৃষক মিলে বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে দিলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। বর্তমানে খালটি কচুরিপানায় ভরাট হয়ে গেছে। পানি প্রবাহের গতিধারা কমে গেছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close