সৌন্দর্য চোখে মেখে
অনিন্দ্য জসীম
শরতে জলের লাবণ্য বাড়ে
আকাশের বাড়ে রূপ
নির্মল নীলের বুকে তুলট মেঘেরা
ঘরবাড়ি পাহাড় বানায়, ময়ূর পেখম মেলে
মেঘেরা শূন্যে বালিয়াড়ি আঁকে
আকাশ কিছুটা নিচে নেমে আসে।
শরৎ সাদা মনের ঋতু, সাদা মনের মানুষের মতো
কারও সাতেপাঁচে নেই-
নেই ঝড়ঝঞ্ঝা, খরার পূর্বাভাস,
সবুজ বাতাস দোলে ফসলের মাঠে
জেলে জল ছুঁয়ে বলে দিতে পারে রাতের বয়স,
নদীর মাছের আলাদা স্বাদ জিবে লেগে থাকে।
নৌকা ভ্রমণে আয়না লাগে না শরতে।
জলের ভেতর তল দেখা যায়,
আকাশ রাঙিয়ে শাপলা ফোটা জালিয়া বিলের
সৌন্দর্য চোখে মেখে-
সুন্দরের সকল দরজা খুলে যায় শরতে।
মৃত্যুপ্রান্ত
প্রণব মজুমদার
বঞ্চনার কষ্টে জীবন থিতু হয়ে যায়
হৃদয়ঘাতে প্রাণমৃত্যুর কূলে ভিড়ে।
উষ্ণ মন চন্দ্রালোকের মতো ছড়ায়,
স্বপ্ন দেখে মানুষ শেষ শ্বাস অবধি।
বেদনার বালুচরে আটকে গেছে শরীর।
মুক্তি নেই, দুঃখও ঘুমায় বদ্ধঘরে!
কে নেবে ভালোবাসার সমুদ্রে-
তরু পল্লবের ছায়া নির্জনে?
যেখানে ভালোবাসার মাখামাখি হয়
আঁচলের মধ্যে থাকে রক্তপি-ের ঘ্রাণ!
আনন্দের অশ্রু চুইয়ে চুইয়ে পড়ে;
নোনাজলে সিক্ত হয় আবৃত বসন!
ক্লান্ত দিগ্্ভ্রান্ত পথিক মৃত্যুর প্রান্তে এসে
শুধু কষ্ট বিরহের সুতোয় জাল বুনে।
ফোটাও হৃৎপদ্ম
আলী সিদ্দিকী
সময়ের গল্পে তুমি জমা করো শুধু অতীতের গান
ঝরাপাতাদের বিরহের কথকতা
পূর্ণিমায় উছলে ওঠা মাছ আর জলপরীদের কাব্য
পাতার খোলে আয়েশে ভ্রমণকারী পিঁপড়ের বাবুগিরি
পাখিদের পালক দিয়ে লেখা পরিযায়ী প্রণয় গাঁথা
হৃদয়ের জলছবিতে আঁকা বিগত প্রেমের রম্য কাহিনী
আমার আলোকিত আঙুল ছুঁয়ে আছে তোমার স্বপ্ন
চোখের তারায় রচিত হচ্ছে বহুমুখী জীবন প্রকল্প
রোদের ভাষায় সবুজাভ প্রণয় প্রণালি প্রখর দীপ্রমাণ
তোমার হৃদয়ের তাঁতশিল্পে নেই কোনো বুনন উৎসব
নেই নবান্নের সৌরভে মুগ্ধতার একান্ত কোনো আয়োজন
নেই জীবনগ্রন্থির রসময় কোনো প্রাণজ উদযাপন
তোমার এই উপেক্ষাকুসুম আলোবিমুখ অহংময় মুখ
আজকের এই তাচ্ছিল্যের শতমুখো শরের দংশন
শতগুণে ফিরে আসবে, নিশ্চয় আসবে একদিন
কেড়ে নেবে সহস্র উপায়ে সংরক্ষিত তোমার অলীক সুখ
সময়ের গল্পে হয়ে ওঠো তুমি একক কাব্যের শব্দসুহৃদ
ভেঙে পড়া পৃথিবীর কার্নিশে ফোটাও তোমার হৃৎপদ্ম
দাও মুছে মালিন্য
বহমান রক্ত নহর
হৃদয়ের হৃৎগৌরব পুনরুদ্ধারে বাড়িয়ে দাও উষ্ণীষ হাত
মৃতপ্রায় প্রণয় সভ্যতা জাগুক তোমার অলৌকিক স্পর্শে।
যদি
শামসুল বারী উৎপল
যদি বলো ভুল তবে ভেঙে ফেলব
যন্ত্রনির্ভর সত্যের সংজ্ঞা,
হেবা করে দেব তোমার নামে
একমাত্র ভিটেমাটি,
যদি বলো চলে যাব একেবারে
ফেলে রেখে উদ্ভাবনের শেষ সফলতা,
যদি চাও রাত হব নদীর উঠোনে
কিংবা রোদ্দুর তাও হতে পারি,
একবার যদি ফিরে আসো
পুরোনো অ্যালবাম, চিঠির খাম কিংবা
অ্যানালগ টেলিফোন,
নিলুদের জ্যোৎস্নার বাগানে
সেই একদিন উদ্ভিন্ন কৈশোর
যান্ত্রিক পৃথিবীর সাম্প্রতিক উঠোন ছুঁয়ে
একবার যদি ফিরে আসো!
কাশবনের চিঠি
শেলী সেনগুপ্তা
কাশবন দেখানোর ছলে
কেউ ছুঁয়েছিলো অনাঘ্রাতা মন
সেই থেকে নির্জনে
খুব একলা হতে ইচ্ছে করে,
ইচ্ছে করে খেয়ালি বাতাসে উড়াই
শ্লথ বসন
কোনো এক
চাঁদ-গলা আলোয় রুপোর কাঠির ছোঁয়ায়
স্বপ্নগুলো শুভ্র হলো
যে আমাকে
কালপুরুষ থেকে সপ্তর্ষি ম-ল ভ্রমণের
স্বপ্ন দেখিয়েছিল
তার হাতে এখন কাশবন পোড়া ছাই
নাকের ওপর জমা-ঘাম-ছোঁয়া হাত
এখন অজগর পোষে
সেই থেকে
শরতের নীল খামে আর আসে না
কাশবনের চিঠি ...।