ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

জবি ক্যাফেটেরিয়া ও টিএসসিতে ছাত্রলীগের বাকি ১৫ লাখ টাকা
প্রকাশ: শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪, ২:২২ এএম  (ভিজিট : ২০২)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও এর আশপাশ এলাকায় একসময় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল জবি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। এই আধিপত্যের জেরেই ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন দোকানপাটে চাঁদাবাজি, বাকি খেয়ে টাকা পরিশোধ না করাসহ নানাবিধ অপকর্ম করেছে তারা। সূত্র জানায়, জবির টিএসসি ও ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়া মিলিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাকি খাওয়ার পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ টাকা। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব চিত্র।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন আরামবাগ হোটেল মালিক ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের কাছে অন্তত ৫ লাখ টাকা পায়। এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক প্যানেলের মেহেদী বাবুর কাছে অন্তত ১ লাখ টাকা, মিরাজের কাছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, শুধু সেক্রেটারি প্যানেলের কাছেই তার পাওনা টাকার পরিমাণ প্রায় ৫ লাখ। হোটেলের স্বত্বাধিকারী আবু লাল মিয়া বলেন, ছাত্রলীগের শুধু সেক্রেটারি প্যানেল এই বিগত এক বছরে ৫ লাখ টাকা বাকি খেয়ে ধার পরিশোধ করেনি। সেক্রেটারি তার অনুসারীদের খাবার খেতে পাঠিয়ে দিয়ে ফোন করে বলে দিত এবং পরবর্তীতে বিল চাইলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করত এবং ব্যবসা করতে দেবে না বলে হুমকি দিত। এ ছাড়াও সেক্রেটারি প্যানেলের আরেক নেতা মিরাজ ৫০ হাজার টাকা বাকি খেয়েছে। টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বোঝার পর থেকে আমরা তাদের হিসাব বাকি খাতায় তুলে রাখা থেকে বিরত থাকি।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির চায়ের দোকান থেকেও বাকি খেয়ে টাকা পরিশোধ করতেন না তারা। টিএসসির ‘খোকন মামা’ চায়ের দোকান থেকে বাকি খেয়ে বিল পরিশোধ করেননি অনেকেই। এই দোকানি জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মিলিয়ে অন্তত ১ লাখ টাকার বেশি বাকি পড়ে রয়েছে তার। ভাতের হোটেলেও একই চিত্র।

আনোয়ারের ভাতের হোটেল থেকে বাকি খেয়ে বিল দিতেন না শাখা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি আকতার হোসাইনের অনুসারীরা। সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী মিরাজের নির্দেশে বাকি খেত কর্মীরা। এই দোকানি জানায়, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা ১ লাখ টাকার বেশি বাকি খেয়েছে। এ ছাড়াও টিএসসির শিঙাড়া-সমুচার দোকানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাকি খাওয়ার হিসাবই নেই। দোকানিরা বলেন, প্রতিদিন ছেলেপেলেরা আসত, খেত, টাকা না দিয়ে চলে যেত। টাকা চাইলে গালাগাল করত। বিশেষত সভাপতি প্যানেলের রবি এবং সাধারণ সম্পাদক প্যানেলের মেহেদী বাবুর লোকজন প্রতিদিন অন্তত ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকার বাকি খেতেন।

ক্যাফেটেরিয়াতে ছাত্রলীগের বাকি প্রায় ৭ লাখ টাকা : বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ক্যাফেটেরিয়াতেও গত দুই বছরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যান্টিন থেকে প্রায় ৭ লাখ টাকার মতো বাকি খেয়েছে। পরবর্তীতে আর টাকা দেয়নি। এখন তাদের সবাই পলাতক। ক্যাম্পাসে আসেন না। ক্যাফেটেরিয়া সূত্র জানায়, জবির ক্যাফেটেরিয়ায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজীর নামে বাকি রয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইনের নামে বাকি রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়াও ক্যাফেটেরিয়াতে বাকির হিসাবে নাম রয়েছে ছাত্রলীগের আরও অন্তত ৫ নেতাকর্মীদের নামে। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির ‘মাই ম্যান’ খ্যাত রবিউল ইসলাম রবির নামে বাকি ৫২ হাজার টাকা। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের ‘গ্রুপ লিডার’ খ্যাত মিরাজের নামে বাকি রয়েছে ৭৫ হাজার টাকা, সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান বাবুর নামে বাকি ৫৫ হাজার টাকা।

ক্যাফেটেরিয়া থেকে বাকি খাওয়ার বিষয়ে জবি ক্যাফেটেরিয়া পরিচালক মো. মাসুদ বলেন, দীর্ঘদিন বাকি খেয়েছে ছাত্রলীগ। টাকা দেবে দেবে করে আর দেয়নি। এর বাইরে আরও অনেকে আছে যারা টুকটাক খেয়েছে, তার হিসাব নেই। খেয়ে তারা টাকা দিত না, আবার খাবার দিতে দেরি হলেও ক্যান্টিনের ওয়েটারদের মারধরও করেছে সাজবুলসহ বেশ কয়েকজন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি কমেন্টে ও প্রতিবেদকের মেসেঞ্জারে জবি ছাত্রলীগ সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজী বলেন, ‘আমি তো কখনোই মাসুদের কাছে বাকি খাইনি। পোলাপান খেলে মাসুদ আমাকে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে টাকা দিয়ে দিতাম। হয়তো অনেক সময় ২ হাজার ৫০০ টাকা হইছে ২ হাজার টাকা দিছি। মাসুদকে দিয়ে অনেক সময় প্রোগ্রামের খাবার রান্না করাতাম। তাকে দিয়ে বাজেট তৈরি করে পুরো টাকা নিজ হাতে দিয়ে দিতাম। আমরা মানুষ, মরতে হবে!’ মাসুদ আমার কাছে ১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা পায় এটা কী মাসুদ বলছে? কীসের টাকা পায়! আমি তো কখনো খাইনি। আর অন্য কেউ খেলে মাসুদের তো ব্যাপারটি আমাকে জানানো উচিত ছিল। আমি সবসময় খোঁজখবর নিতাম, কেউ ফাউ খায় কি না। যা হোক মাসুদ যদি আমার কাছে টাকা পায়, তা হলে ও আমাকে বলুক কীসের টাকা পায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. কেএএম রিফাত হাসান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে বিষয়টি সত্য হলে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা রেগুলার স্টুডেন্ট হলে তাদের থেকে টাকা আদায় করার ব্যবস্থা করা হবে এবং প্রশাসনিকভাবে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সময়ের আলো/আরএস/





এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close