দেখা গেছে, আগের মতোই উচ্চ শব্দে হর্ন বাজিয়ে ইচ্ছেমতো চলছে যানবাহন। হাতেগোনা দুয়েকজন ছাড়া কেউ ব্যানার বা প্ল্যাকার্ডের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না। শব্দদূষণ রোধে সংশ্লিষ্টদের কার্যক্রম এবং চালকদের বেপরোয়াভাবে মনে হয়েছে, ‘নীরব এলাকা নীরব’ করা খুবই কঠিন কাজ।
বেবিচক বলছে, এটি স্টোক হোল্ডাররা মিলে সমন্বিতভাবে করা হচ্ছে। আপাতত সচেতনতার দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে।
চালকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করা গ্রিন ভয়েসের আলমগীর কবির সময়ের আলোকে বলেন, লা মেরিডিয়ান থেকে ৩ কিলোমিটার এলাকার কয়েকটি পয়েন্টে ২ শিফটে ৮৭ জন চালকদের সচেতন করতে কাজ করছেন। লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। সকালে মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে চালকদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। বেবিচক উত্তর সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। শনিবার দুই চালককে ২০০ টাকা করে জরিমানা করেছেন ম্যাজিস্ট্রেট।
ফিল্ড সার্ভেয়ার হাসিবুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, এই এলাকায় শব্দ মাপার জন্য ৪টি যন্ত্র বসানো হয়েছে। আবাসিক এলাকায় ৬০ থেকে ৯০ ডিসিমেল এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় ৭০ থেকে ৮০ ডিসিমেল শব্দ হওয়ার কথা। বিমানবন্দর এলাকায় এর চেয়ে অনেক বেশি শব্দ হয়। হর্ন না বাজালেও শব্দদূষণ হচ্ছে। ইঞ্জিনের প্রচুর শব্দ। কারণ যেসব যানবাহন চলছে তার বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ। দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ ১২০ ডিসিমেল শব্দ পাওয়া যায়। যদিও সাউন্ড লেভেল মিটারের সক্ষমতা মাত্র ১৩০ ডিসিমেল। একাধিক চালক জানান, শাহজালাল এলাকা যে নীরব এলাকা-এ বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। এখন থেকে হর্ন না বাজানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।
বেবিচকের ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফারুক সুফিয়ান সময়ের আলোকে বলেন, শব্দদূষণের জন্য ২০১৮ সালের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ অর্থদণ্ড ১০ হাজার টাকা। গতকাল আমি দুজনকে ২০০ টাকা করে জরিমানা করেছি। আজকে করা হয়নি। রাত ১২টা পর্যন্ত আছি প্রয়োজন হলে করব। তিনি জানান, এখন সচেতনতার দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ দেখবেন।
গত মঙ্গলবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর উত্তর-দক্ষিণে তিন কিলোমিটার ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণার পর এ অভিজ্ঞতা রাজধানীর অন্য এলাকাতেও কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, পৃথিবীর আর কোনো দেশে এ রকম গাড়ির হর্ন কানকে বিদীর্ণ করে না। এটি দেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করে। আর বিমানবন্দরের ভেতরের এলাকাটা অপেক্ষাকৃত নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে এখানে আমরা মনে করেছি এই বিধিনিষেধটা আরোপ করা সম্ভব হবে। এখানকার অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢাকা শহরের অন্যান্য সড়কে, হাসপাতালের আশপাশে, সচিবালয় এলাকায় এই কর্মসূচি চালাব।
তবে বুধবার এ এলাকায় অবস্থানকারী ১৫ জন মানুষের সঙ্গে কথা হয় সময়ের আলোর। তারা জানান, মাত্র এক দিন হলো এই এলাকা নীরব কার্যকর করা হয়েছে। কিন্তু কারও কোনো ভ্রƒক্ষেপ নেই। এটি ভালো উদ্যোগ। তবে সচেতনতার পাশাপাশি কঠোর আইন প্রয়োগ ছাড়া কখনোই শব্দদূষণ কমানো সম্ভব নয়।
সময়ের আলো/আরএস/