ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

ধরলা ও নবগঙ্গায় ভাঙন
উলিপুরে নদীগর্ভে বিলীন ৪০টি বসতবাড়ি, কমিউনিটি ক্লিনিক
প্রকাশ: বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০২৪, ৭:৪৯ এএম  (ভিজিট : ১২৬)
কুড়িগ্রামের উলিপুরে বন্যার পানি কমলেও নদীভাঙনে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার এক প্রান্তে তিস্তার বন্যা আরেক প্রান্তে ধরলায় চলছে তীব্র ভাঙন। গত চার দিনে ধরলার ভাঙনে উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০টি পরিবারের বসতি ধরলার গর্ভে বিলীন হয়েছে। সোমবার রাতে নদীগর্ভে চলে গেছে এলাকার প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসার প্রথম আশ্রয়স্থল খুদিরকুটি আকেল মামুদ কমিউনিটি ক্লিনিক ও খুদিরকুটি আবদুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়সহ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র।

মঙ্গলবার সকালে উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত চার দিন ধরে ধরলা নদীর তীব্র ভাঙন চলছে। ভাঙনে একের পর এক বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। ইউনিয়নের খুদিরকুটি, রসুলপুর ও কবিরাজপাড়া গ্রামের কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। সোমবার রাতে ধরলার ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে ৪ নং ওয়ার্ডের খুদিরকুটি আকেল মামুদ কমিউনিটি ক্লিনিক। ধরলার তীব্র স্রোত আর আগ্রাসী ভাঙনে ঝুঁকিতে আছে ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুদিরকুটি আবদুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়সহ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। ভাঙনের তীব্রতায় ঝুঁকিতে থাকা অর্ধশতাধিক পরিবারের হাহাকার তৈরি হয়েছে। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বসতভিটা থেকে ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ভাঙনে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। আলামিন বাজার থেকে খুদিরকুটি বাজার হয়ে কবিরাজপাড়ার শেষ পর্যন্ত তীব্র স্রোত আর ভাঙন। ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদ কিছুই থাকছে না। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে এলাকা শেষ হয়ে যাবে।

ওই এলাকার বাসিন্দা নুর আলম বলেন, গত রাতে আমার বসতভিটে চলে গেছে। কমিউনিটি ক্লিনিকটাও গেল। একের পর এক বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। কোনো প্রতিকার নেই। সাবেক ইউপি সদস্য মহুবর রহমান বলেন, ভাঙন শুরু হয়েছে। যেভাবে ভাঙছে তাতে আশ্রয়কেন্দ্র আর স্কুলটাও থাকবে না। শতাধিক পরিবার ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। এ মুহূর্তে কিছু জিও ব্যাগ ফেললে কমপক্ষে স্কুল আর আশ্রয়কেন্দ্রটা রক্ষা করা যেত।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া জানান, তার পরিবারের সদস্যরাও ভিটে হারাতে বসেছেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি নিজেও তার বসতি সরাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) অতিসত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানির উন্নয়ন বোর্ডেও (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ভাঙনের খবর পেয়েছি। ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ পাঠিয়েছি।

নড়াইল প্রতিনিধি জানান, জেলার কালিয়া উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের পূর্বপাড়ায় নবগঙ্গা নদীতে আকস্মিক ভাঙনে পথে বসেছে অন্তত ২০ থেকে ২৫টি পরিবার। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারগুলোর সদস্যরা।

মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান ও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী উজ্জল কুমার সেন ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। গত ২১ ও ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আকস্মিক এ নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত হয় পরিবারগুলো।

ভুক্তভোগীরা জানায়, আকস্মিক নদীভাঙনে মুহূর্তের মধ্যে গ্রামের রিলু ফকির, মাকসুদ ফকির, মাহাবুর ফকির, রোকেয়া বেগম, মহাদত শেখ, জনি শেখ, ইমদাদ মাস্টার, ঝর্না বেগম, রিপনা বেগম, কালু সরদার, শহিদুল মোল্যাসহ ১১টি পরিবারের বসতঘর নবগঙ্গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরে আরও ১৫-১৬টি পরিবার কিছু মালামাল সরাতে পারলেও রক্ষা হয়নি বসতভিটা।

এ ছাড়া তীরবর্তী একটি মসজিদসহ অনেক পরিবার রয়েছে মহাআতঙ্কে। অনেকের ফসলি জমিও বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। অতি দ্রুত নদী শাসনের ব্যবস্থাসহ পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তিনি বিষয়টি জানার পর সরেজমিন এসেছেন। এখানকার ভাঙন কীভাবে দ্রুত রোধ করা যায় সে ব্যবস্থা নেবেন এবং শিগগিরই নবগঙ্গা নদীতে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা চিহ্নিত করে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close