ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

রোগীদের ভোগান্তি দুর্ভোগ
প্রকাশ: বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০২৪, ২:০৫ এএম  (ভিজিট : ৯৮)
এক দফা দাবিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালসহ সারা দেশের হাসপাতাল ও নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন নার্সরা। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের ব্যানারে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করা হয়। যদিও হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, জরুরি অস্ত্রোপচার, ডায়ালাইসিস, আইসিইউ, সিসিইউ, পিআইসিইউ এবং এইচডিইউ এই কর্মসূচির বাইরে ছিল। তবু কর্মবিরতির ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীর স্বজনদের কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আবার অনেককেই বেসরকারি হাসপাতালে চলে যেতে দেখা গেছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালগুলোতে এমনিতেই ডাক্তারের দেখা পাওয়া অনেকটা দুষ্কর। এর মধ্যে নার্সরা এভাবে কর্মবিরতি পালন করলে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও ভর্তি হওয়া সাধারণ রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখে নার্সদের কর্মবিরতি পালন ঠিক নয়। নার্সদের দাবি যদি যৌক্তিক হয় তবে তাদের দাবি মেনে নেওয়া উচিত।

এমন অবস্থায় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদ জানিয়েছে, দাবি পূরণ না হলে আজ বুধবারও সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। এরপরও দাবি আদায় না হলে কমপ্লিট শাটডাউনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা।

জানা গেছে, নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, পরিচালক এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও রেজিস্ট্রার পদ থেকে সব ক্যাডার কর্মকর্তাকে অপসারণ করে সেসব পদে অভিজ্ঞ নার্স পদায়নের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরে আন্দোলন করে আসছে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদ। গত ২৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলেনে দাবি পূরণের জন্য সরকারকে তিন দিন সময় দেওয়া হয়। দাবি মানা না হলে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিল সংগঠনটি। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে কোনো আশ্বাস না পেয়ে রোববার থেকে ঘণ্টা করে কর্মবিরতি শুরু করেন নার্সরা। সোমবারও তা চলে ও আজ বুধবারও পাঁচ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন হাসপাতালের নার্স যারা দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা। সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে চাকরিতে প্রবেশ করেন তারা। যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি পেলে তারা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পর্যন্ত হতে পারেন।

এ বিষয়ে নার্সিং ও মিডওয়াইফাইরি সংস্কার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাব্বির মাহমুদ সময়ের আলোকে বলেন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর ও কাউন্সিলের দায়িত্বশীল পদে থেকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা অব্যাহতভাবে নার্স ও মিডওয়াইফদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকেন। আমরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমাদের একটাই দাবি, নার্সিং সেক্টর থেকে আমলা সরাতে হবে, নার্সদের বসাতে হবে। 

মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন ঢামেক হাসপাতাল, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্স ও মিডওয়াইফারি সেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি পালন করতে দেখা গেছে। 

সকাল ৯টা থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাগান গেটে সব ক্যাডার প্রত্যাহার করে যোগ্য ও অভিজ্ঞদের পদায়নের এক দফা দাবিতে কর্মসূচি শুরু করা হয়। নার্সরা যার যার ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে হাসপাতালটির গেটে জড়ো হন। সেখানে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে সেøাগান দিতে থাকেন তারা।

ঢামেকের শিশু বিভাগে ভর্তি হওয়া জরিনা আক্তার নামের এক রোগীর স্বজন সময়ের আলোকে বলেন, দেড় বছর বয়সি ছেলের সর্দি-জ্বর নিয়ে এখানে ভর্তি আছি। নার্সদের কর্মবিরতির কারণে তাদের ডেকেও পাওয়া যায়নি। 

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের এক সিনিয়র নার্স সময়ের আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা আমাদের দাবি তুলে ধরছি। রোগীদের এতে কোনো ভোগান্তি হচ্ছে না। বরং মুমূর্ষু রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে আলাদা টিম কাজ করছে।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের ঢাকা মেডিকেলের আহ্বায়ক মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, দাবির পক্ষে কোনো প্রকার ইতিবাচক সাড়া পাইনি। শুধু আমাদের কাছ থেকে শুধু সময় নিচ্ছেন। 

আন্দোলনের বিষয়ে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক ড. মো. শরিফুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, নার্সিং সেক্টরের শীর্ষ পদে আমলাদের বসানো হচ্ছে। এই সেক্টরে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) ৩ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন নার্সরা। এ সময় রোগীদের সেবা কিছু সময়ের জন্য বিঘ্নিত হয়। কর্মসূচি চলাকালে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।

হাসপাতালে কর্মরত বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা জানান, কর্মবিরতি সীমিত পরিসরে পালন করা হয়েছে। এ সময় রোগী সেবা কিছুটা বিঘ্নিত হলেও বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল এবং নরসিংদী জেলা সদর হাসপাতালসহ জেলার সব সরকারি হাসপাতালে কর্মরত নার্স ও মিডওয়াইফাররা কর্মবিরতি পালন করেন।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close