ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪২৮ কোটি টাকা জরিমানা
প্রকাশ: বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০২৪, ১:৪৪ এএম  (ভিজিট : ১৬৮)
শেয়ার কারসাজির অপরাধে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪২৮ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মূলত সংঘবদ্ধভাবে বেক্সিমকোর শেয়ার লেনদেন এবং কৃত্রিমভাবে দর বাড়ানোর দায়ে ৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। 

মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) রেকর্ড জরিমানার এ তথ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিএসইসি। দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে কারসাজির দায়ে এত বড় জরিমানার নজির নেই। বিএসইসি বলছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘বেক্সিমকোর শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করায়’ এসব কোম্পানিকে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। একক কোম্পানি থেকে গ্রুপে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের (বেক্সিমকো) ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। তিনি গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।

এ কোম্পানির শেয়ারদর কারসাজির ঘটনায় এককভাবে সর্বোচ্চ ১২৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে মুসফেকুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে শেয়ার কারসাজির ঘটনায় একবার তাকে ১০০ কোটি টাকা এবং অন্যটিতে ২৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয় ক্রিসেন্ট লিমিটেডকে। এ ছাড়া আর্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে ৭০ কোটি টাকা, ট্রেডনেক্স ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে ৪ কোটি ১ লাখ টাকা, মারজানা রহমানকে ৩০ কোটি টাকা, মমতাজুর রহমানকে ৫৮ কোটি টাকা, জুপিটার বিজনেস লিমিটেডকে ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, অ্যাপেলো ট্রেডিংকে ১৫ কোটি ১ লাখ টাকা ও আবদুর রউফকে ৩০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। বিএসইসি বলছে, ২০২১ সালের ২৮ জুলাই থেকে একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেক্সিমকোর শেয়ারদরে কারসাজি করা হয়।

পরের বার ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত আবার কারসাজির ঘটনা ঘটে। উভয় সময়ে কারসাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন জরিমানার মুখে পড়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো।

ছাত্র-জনতার আন্দোলন আগস্টের শুরুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের রূপ পাওয়ার পর সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ৫ অগাস্ট আন্দোলনকারীদের ঢাকামুখী লং মার্চের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।

এরপর সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ আগেই দেশ ছেড়েছেন বলেও খবর আসে। পরে গত ১৩ আগস্ট নৌ-পথে পালানোর সময় ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে সালমান এফ রহমানকে গ্রেফতারের তথ্য দেয় পুলিশ। পুঁজিবাজারে বেক্সিমকো গ্রুপের বেক্সিমকোসহ চারটি কোম্পানি ও বন্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৯ মার্চ বেক্সিমকোর শেয়ারদর ছিল ১১ টাকা ২০ পয়সা। আর ২০২০ সালের শেষের দিকে কোম্পানিটির শেয়ার ২২ টাকায় লেনদেন হয়। সেখান থেকে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে প্রতিটি শেয়ারের দাম ১০০ টাকার ওপরে নিয়ে যাওয়া হয়।

অবশ্য কোম্পানিটির শেয়ার দাম ১০০ টাকাতে নিয়েই থামেনি কারসাজি চক্র। দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে ২০২১ সালেই কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দাম ১৯০ টাকা পর্যন্ত তোলা হয়। এভাবে দাম বাড়িয়ে একটি চক্র শেয়ারবাজার থেকে মোটা অঙ্কের মুনাফা তুলে নিলেও সার্বিক শেয়ারবাজার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বেক্সিমকোর শেয়ার কারসাজি নিয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে একটি তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে পাঠানো হয়। তবে বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন তা ধামাচাপা দিয়ে রাখে।

ওই তদন্ত প্রতিবেদনে আবদুর রউফ, ক্রিসেন্ট লিমিটেড, মোসফেকুর রহমান, মমতাজুর রহমান অ্যান্ড দেয়ার অ্যাসোসিয়েটস, জুপিটার বিজনেস, অ্যাপেলো ট্রেডিং লিমিটেড, মারজানা রহমান ও ট্রেডেনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের বিরুদ্ধে বেক্সিমকোর শেয়ার নিয়ে কারসাজির তথ্য উঠে আসে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই আট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে রিয়ালাইজড গেইন করেছে ২১৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা এবং আনরিয়ালাইজড গেইন করেছে ৫২৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ তারা রিয়ালাইজড ও আনরিয়ালাইজড গেইন করে ৬৪৬ কোটি ২২ লাখ টাকা।

২০২২ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত বেক্সিমকোর শেয়ারের টার্নওভার মূল্য ছিল ৪ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে ভিন্ন ভিন্ন ক্লায়েন্ট কোডের মাধ্যমে যার ৭০ শতাংশের বেশি লেনদেন করে এই আট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান।

ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বেক্সিমকো শেয়ার কারসাজি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ধারা ১৭-এর বেশ কয়েকটি উপধারা লঙ্ঘন করেছে। ধারা ১৭ লঙ্ঘন অনুযায়ী এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ।

এদিকে কমিশন সভায় ৯টি কোম্পানির আইপিও-আরপিওর অর্থ ব্যবহার পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নয়টি কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বেস্টহোল্ডিং, ইনডেক্স এগ্রো, জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট মেনুফ্যাকচারিং, লুব-রেফ বাংলাদেশ, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, রিং শাইন টেক্সটাইল, সিকদার ইন্স্যুরেন্স এবং সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close