প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০২৪, ৫:২০ এএম আপডেট: ০১.১০.২০২৪ ৭:৫৭ এএম (ভিজিট : ২১৭)
বাঁশখালী পৌরসভায় সড়কবাতির জন্য ক্রয় করা বৈদ্যুতিক তার নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সড়ক বাতি স্থাপনের আগেই ১০ হাজার মিটার বৈদ্যুতিক তারের মধ্যে ৪ হাজার মিটার তারের হদিস মিলছে না। বাঁশখালী পৌরসভায় রাতের বেলায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সড়ক বাতি স্থাপনের কাজের জন্য চাহিদা মোতাবেক ১০ হাজার মিটার বৈদ্যুতিক তার ক্রয়ের বরাদ্দ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজ। দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ১০ হাজার মিটার বৈদ্যুতিক তার কেনার দায়িত্ব পেলেও ক্রয় করেছে মাত্র ৬ হাজার মিটার। অবশিষ্ট ৪ হাজার মিটার বৈদ্যুতিক তার ক্রয় না করেই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আনিসুজ্জামান আবিদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী পৌরসভার স্টোর কিপার আবু তাহেরের কাঁধে দোষ চাপিয়ে বাঁশখালী পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আরাফাত বলেন, মূলত স্টোর কিপারের কথার ওপর নির্ভর করে ভাউচার প্রস্তুত করে বিল পাস করে দিয়েছি আমি। যাচাই না করেই মনগড়া ভাউচারে কীভাবে বিল পাস করে দিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বাঁশখালী পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আরাফাত বলেন, স্টোর কিপার নজর রাখলে চার হাজার মিটার বৈদ্যুতিক তার গোপন করা কিংবা উধাও হওয়ার সুযোগ থাকত না।
বাঁশখালী পৌরসভার অভিযুক্ত স্টোর কিপার আবু তাহের বলেন, আমাকে ছয় হাজার মিটার বৈদ্যুতিক তার বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই ছয় হাজার মিটার তারের কথা বলতে পারব। বাকি তার কী করা হয়েছে বা কোথায় গেল সেটা আমি জানি না। কিন্তু ১০ হাজার মিটার তার বুঝে পেয়েছেন মর্মে ভাউচার প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে বাঁশখালী পৌর সচিব তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বৈদ্যুতিক তার কম থাকার বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঘুরিয়ে-প্যাঁচিয়ে জবাব দিলেও অভিযোগ মেনে নিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আনিসুজ্জামান আবিদ। তার দাবি, তার আমি নিজে ক্রয় করিনি। হয়তো কিছু তার কম আছে। তবে পৌরসভায় আমার সিকিউরিটি বিল বাকি আছে। বকেয়া বিলের টাকা দিলে যে পরিমাণ তার কম আছে তা আমি পুষিয়ে দেব।
সরেজমিন বাঁশখালী পৌরসভা কার্যালয়ের প্রধান ফটকে চারটি তারের বান্ডিলের দেখা মেলে। ওই চার বান্ডিল তারের প্রতি বান্ডিলে ১ হাজার ৫০০ মিটার করে তার রয়েছে। এই হিসাবে চার বান্ডিলে তার হয় ৬ হাজার মিটার। প্রতি বান্ডিলে ১ হাজার ৫০০ মিটার করে হিসাব করলে বরাদ্দ অনুযায়ী ১০ হাজার মিটারে সাড়ে ছয় বান্ডিল তার থাকার কথা থাকলেও চার বান্ডিলে পাওয়া গেছে মাত্র ৬ হাজার মিটার তার।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে তারা অভিযোগ করেন, বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র এসএম তোফায়েল বিন হোসাইনের সহযোগিতায় ঠিকাদার হিসেবে লাইসেন্স বাগিয়ে নেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আনিসুজ্জামান আবিদ। তার মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজ তার ক্রয় করার সময় নয়ছয়ের মাধ্যমে ৪ হাজার মিটার বৈদ্যুতিক তারের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। তার ক্রয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা প্রতি বান্ডিলে ২ হাজার ৫০০ মিটার তার আছে দাবি করলেও তদন্তকালে দেখা গেছে, প্রতি বান্ডিলে তার রয়েছে ১ হাজার ৫০০ মিটার। এই হিসেবে চার বান্ডিলে তার হয় মাত্র ৬ হাজার মিটার। অথচ ১০ হাজার মিটার তার বুঝে পেয়েছেন বলে মনগড়া ভাউচার করে দিয়েছেন বাঁশখালী পৌরসভার স্টোর কিপার আবু তাহের। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। মনগড়া সেই ভাউচারে বিল পাস করে দিয়েছেন বাঁশখালী পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আরাফাত।
সময়ের আলো/আরএস/