ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

এবার তিস্তাপারে ভাঙন আতঙ্ক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০২৪, ২:১০ এএম  (ভিজিট : ১৫৮)
দেশের উত্তরের জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামে কমতে শুরু করেছে তিস্তাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। পানি কমলেও নদীর পার ভাঙতে শুরু করায় নতুন করে দুশ্চিন্তা ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের মধ্যে। ভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। চলে যাচ্ছেন নিরাপদ দূরত্বে। ভাঙনের কবলে পড়ে ইতিমধ্যে একটি স্কুলসহ বেশ কয়েকটি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড। সময়ের আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে গত তিন দিন ধরে কুড়িগ্রামের ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার নদের বৃদ্ধি পাওয়া পানি সকাল থেকে কমতে শুরু করায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এতে আতঙ্কে রয়েছেন জেলার রাজারহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার নদী তীরবর্তী মানুষজন।

সোমবার কুড়িগ্রাম জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকাল ৯টার তথ্য মতে, জেলার তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি কমে বিপদসীমার ২৯.৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া ধরলা নদীর তালুক শিমুল বাড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯.৮৭ সেন্টিমিটার ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ২০.৯৮ ও দুধকুমার নদে নুন খাওয়া পয়েন্টে ২৩.৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
রাজারহাট গতিয়াশাম এলাকার মো. আবদুল হাই বলেন, গত দুদিন ধরে তিস্তার পানি ঢুকে তিস্তার চরের বাদাম, সবজি ও ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হলেও ধান ক্ষেতের তেমন ক্ষতি হবে না। তবে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙনের মুখে পড়েছি। তিস্তা নদীতে পানি বাড়লেও ভাঙে, কমলেও নদীভাঙন শুরু হয়।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. কামাল হোসেন বলেন, পানি বাড়া নিয়ে আমাদের আতঙ্ক কমেছে; কিন্তু নদীভাঙন শুরু হয়েছে। তিন দিনে চর যাত্রাপুর গ্রামের প্রায় ৮-১০টি ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে।

কুড়িগ্রাম রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ২ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে আবারও বৃষ্টি হতে পারে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, তিস্তা তীরবর্তী গতিয়াশাম ও উলিপুরে স্কুল নদীভাঙনের মুখে পড়ার খবর পেয়েছি। ওসব এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজন।

গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে রোববার সকালে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে দুপুরে পানি কমে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। রাত থেকে পানি কমতে শুরু করে।

সোমবার সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুপুর ১২টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং ও বেলা ৩টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদরের গোকুন্ডা ইউনিয়নের গরিবুল্লা পাড়া, হরিণচড়া এলাকার বেশ কয়েকটি এলাকার আবাদি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে ও ৬টি বাড়ি তীরবর্তী এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাগডোরা এলাকা ও আদিতমারি উপজেলার গোবর্ধন এলাকার কিছু আবাদি জমি ও রাস্তা ভেঙে গেছে। তবে এসব এলাকার ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, আমরা কয়েকটি জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছি। এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সব তথ্য পাঠিয়েছি। অনুমতি পেলে ভাঙন ঠেকাতে আরও জিও ব্যাগ ফেলা হবে।

সিরাজ প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। তবে যমুনায় পানি বাড়লেও বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে সোমবার সকাল ৬টায় পানির সমতল রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৫২ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৬২ সেন্টিমিটার। এতে শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ২৩৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে কাজীপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে সোমবার সকাল ৬টায় পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২৭ মিটার। এ পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৬৩ সেন্টিমিটার। এতে মেঘাই ঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ২৫৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নাজমুল হোসাইন জানান, গত কয়েক দিন হলো যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আরও দুদিন যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ অংশে পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে যমুনায় পানি বাড়লেও সিরাজগঞ্জে বন্যার আশঙ্কা নেই।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close