ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

অয়েল ট্যাঙ্কারে অগ্নিকাণ্ড, বড় ক্ষতিপূরণের মুখে বিপিসি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০২৪, ১:২২ এএম  (ভিজিট : ২৪০)
অগ্নিকাণ্ডে অয়েল ট্যাঙ্কার বিকল হওয়ায় ৫০ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। কুতুবদিয়ার গভীর সাগরে নোঙর করা বৃহদাকার অয়েল ট্যাঙ্কার ‘এমটি ওমেরা লিগেসি’ থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড) খালাস শেষ করার কথা ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর। কিন্তু দুটি অয়েল ট্যাঙ্কারের একটি এমটি বাংলার জ্যোতি বিকল হয়ে যায়। 

এখন ক্রুড লাইটার খালাস করছে একটি মাত্র অয়েল ট্যাঙ্কার এমটি বাংলার সৌরভ। দুটি লাইটার ট্যাঙ্কারের পরিবর্তে একটিতে করে খালাস করলে আট দিনের স্থলে ১৬ থেকে ১৭ দিন লাগবে। নির্ধারিত সময় থেকে বেশি সময় লাগার কারণে বিপিসিকে প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার মার্কিন ডলার ডেমারেজ গুনতে হবে। বিপিসির পক্ষে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) বৃহদাকার ট্যাঙ্কারটি ক্রুড পরিবহনে ভাড়া করা হয়েছে।

ভাড়া চুক্তি অনুযায়ী এই ডেমারেজ পরিশোধ করতে হবে বিপিসিকে।বিএসসি সূত্র জানায়, প্রতি মাসে প্রায় ১ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয় সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। বিপিসি এসব অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। মধ্যপ্রাচ্যের দুটি দেশ থেকে দুই ধরনের ক্রুড আমদানি করা হয়। একটি আরব লাইট ক্রুড বা এএলসি। অন্যটি মার্বান ক্রুড। এসব ক্রুড পতেঙ্গায় অবস্থিত দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে (ইআরএল) পরিশোধন করা হয়। পরিশোধন করে কয়েক ধরনের জ্বালানি তেল উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে বেশি উৎপাদন করা হয় ডিজেল। এরপর পেট্রোল, অকটেন, কেরোসিন, ফার্নেস অয়েলও উৎপাদন করা হয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে উৎপাদন করা হয় বিমানের জ্বালানি তেল জেট ফুয়েল। উপজাত জ্বালানি হিসেবে উৎপাদন হয় বিটুমিন, ন্যাফতা ও এলপিজি। বছরে ১৫ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিশোধন করা হয় ইআরএলেই। দেশের চাহিদার জ্বালানি তেলের একটি বড় অংশের জোগান আসে ইআরএল থেকে। বাকি জ্বালানি তেল মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়।

বিপিসি ক্রুড আমদানির জন্য সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করে। আর ক্রুড পরিবহনের জন্য বৃহদাকার অয়েল ট্যাঙ্কার মালিকের সঙ্গে বিপিসির পক্ষে চুক্তি করে বিএসসি। ভাড়া চুক্তি বা চার্টার এগ্রিমেন্টে অনেক শর্তের মধ্যে একটি শর্ত থাকে ডেমারেজ নিয়ে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জাহাজ বন্দরে পৌঁছার পর বিএসসির কারণে আট দিনের মধ্যে ক্রুড খালাস করতে না পারলে ডেমারেজ দিতে হবে। প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার মার্কিন ডলার করে ডেমারেজ দিতে হবে বিপিসিকে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্রুড খালাসে দেরি হলে কোনো ধরনের ডেমারেজ দিতে হয় না।

সোমবার বিএসসির লাইটার ট্যাঙ্কার এমটি বাংলার জ্যোতিতে কাজ করছিলেন মেরিন ওয়ার্কশপের কর্মীরা। এ সময় আগুন ধরে গেলে বিকল হয়ে যায় বাংলার জ্যোতি। সোমবার বৃহদাকার ট্যাঙ্কার থেকে ক্রুড খালাস শেষ করার কথা ছিল। জ্যোতি বিকল হওয়ায় এখন একমাত্র অয়েল লাইটার ট্যাঙ্কার এমটি বাংলার সৌরভে করে ক্রুড খালাস করতে হবে। তাই আগামী ৪-৫ অক্টোবরের আগে ক্রুড খালাস শেষ করা যাচ্ছে না। এতে প্রতিদিন ১০ হাজার ডলার করে চার দিনের জন্য ৪০ হাজার মার্কিন ডলার ডেমারেজ গুনতে হবে। পাঁচ দিন হিসাব করলে ৫০ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে বিপিসিকে।

ক্রুড নিয়ে আসা জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট প্রাইম ওশান ট্রেড লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক (অপারেশন্স) পিকে রায় সময়ের আলোকে বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর কুতুবদিয়ার কাছে গভীর সাগরে ভিড়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসা বৃহদাকার অয়েল ট্যাঙ্কার এমটি ওমেরা লিগেসি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে বিএসসির দুই অয়েল ট্যাঙ্কার এমটি বাংলার সৌরভ এবং এমটি বাংলার জ্যোতির মাধ্যমে ক্রুড খালাস শুরু হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর ক্রুড খালাস শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এমটি বাংলার জ্যোতি বিকল হওয়ায় বৃহদাকার অয়েল ট্যাঙ্কার থেকে ক্রুড খালাসে দেরি হবে। আগামী ৪-৫ অক্টোবর পর্যন্ত লাগবে ক্রুড খালাস শেষ করতে। বাংলাদেশি পতাকাবাহী এই ট্যাঙ্কারে করে নিয়ে আসা হয় ৯৯ হাজার টন মার্বান ক্রুড। তুলনামূলকভাবে উন্নত ধরনের এই ক্রুডের প্রতি টনের দাম আরব লাইট ক্রুড বা এএলসি থেকে বেশি।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ সময়ের আলোকে বলেন, একটি চার্টারপার্টি এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী বিএসসি বৃহদাকার অয়েল ট্যাঙ্কার ভাড়া করে। এই ট্যাঙ্কার সময়মতো ক্রুড খালাস শেষ করতে না পারলে প্রতিদিনের জন্য ডেমারেজ বা ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে। ক্ষতিপূরণের এই অর্থ পরিশোধ করবে বিপিসি।

কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং কত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তা নিয়ে জানতে বিপিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোন দেওয়া হলেও কেউ রিসিভ করেননি। বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেককে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এমটি সৌরভের ভাগ্যবরণ জ্যোতির : ২০০৭ সালের জুনে চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙরে ছিল এমটি বাংলার সৌরভ। হঠাৎ ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মুহূর্তেই উধাও হয়ে যায় এক ডেক ক্যাডেট। প্রচণ্ড বিস্ফোরণের কারণে দুর্ঘটনায় বাংলার সৌরভ দুভাগ হয়ে যায়। এরপর জাহাজটি এক বছরের বেশি সময় বিকল ছিল। পরে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জাহাজটি মেরামত করে। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পর জাহাজটি মেরামত করে সচল করা হয়। এমটি বাংলার সৌরভ অচল হওয়ার পর বিএসসি দীর্ঘ সময় একটি লাইটার ট্যাঙ্কার এমটি বাংলার জ্যোতির মাধ্যমে ক্রুড খালাস করেছে। ওই সময় প্রতিটি বৃহদাকার অয়েল ট্যাঙ্কার থেকে ক্রুড খালাস করতে আট দিনের স্থলে ১৬ দিন লাগত। ওই সময় বিপুল ডেমারেজ গুনেছে বিপিসি।

প্রাইম ওশান ট্রেড লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানান, পাইপলাইনে ক্রুড পরিবহন হলে দ্রুত এবং স্বল্প সময়ে ইআরএলের স্টোরেজ ট্যাঙ্কে ভর্তি করা যেত। কিন্তু পাইপলাইনে পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে দুটি ট্যাঙ্কারে ক্রুড পরিবহন করতে হচ্ছে। এতে ক্রুড পরিবহনে ঝুঁকির পাশাপাশি সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কাও সত্যি প্রমাণিত হলো।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close