ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

১১২ কোটি লোপাট ভারতীয় কোম্পানির
৬৪২ কোটিতেও হয়নি গরিবের তালিকা
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:৫২ এএম  (ভিজিট : ৪৮০)
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল দেশের দরিদ্র মানুষের তালিকা তৈরি করা হবে। এতে করে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কাজটি সহজ হবে। ১১ বছর আগে নেওয়া এ প্রকল্পে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩২৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এরপর পাঁচ দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৭২৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা করা হয়। এর মধ্যে প্রকল্পের ৬৪২ কোটি ৬০ লাখ টাকা খরচ করাও শেষ। যার মধ্যে ১১২ কোটি ৪৪ লাখ ২৫ হাজার ৬২২ টাকা উত্তোলন করে নেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘জেরক্স ইন্ডিয়া কোম্পানি লিমিটেড’। ওই প্রতিষ্ঠান ১৪টি জেলার তথ্য আংশিক সংশোধন ও ৫০টি জেলার ডাটা অসমাপ্ত রেখেই টাকা নিয়ে যায়। এত টাকা খরচের পরও দরিদ্র মানুষের তালিকা আর তৈরি করতে পারেনি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পের কাজ ঠিকমতো না করে অর্থ লোপাট করা হয়েছে।

জানা গেছে, এই বড় অঙ্কের অর্থ অপচয়ের পর আবারও এই প্রকল্পের জন্য নতুন করে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এ ক্ষেত্রেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আবারও চাতুরতার আশ্রয় নেন। কারণ বিবিএসের এই নতুন প্রকল্পে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) শ্রেণিভুক্তকরণ না করেই জমা দেয় পরিকল্পনা কমিশনে। পরিকল্পনা কমিশনের কাছে বিষয়টি ধরা পড়লে প্রকল্প প্রস্তাবটি ফেরত পাঠানো হয় বিবিএসের কাছে। একই সঙ্গে প্রকল্পটি ডিপিপিতে শ্রেণিভুক্ত করে তারপর কমিশনে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান মুহাম্মদ লুৎফর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, প্রকল্পটির পিইসি সভার দুই দফার তারিখ নির্ধারণ করা হলেও পরে তা হয়নি। ডিপিপিতে শ্রেণিভুক্ত করণ বা ক্রাইটেরিয়া অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ফলে তা আবার বিবিএসে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তারা আন্তঃমন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে ডিপিপি সংশোধন করবে। কাগজে সংশোধন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠালে সেটির বিষয়টি নিয়ে পুনরায় সভা ডাকা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে তালিকার আওতায় নেওয়া। তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি বিবিএস। ইতিমধ্যে ৭২৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তাতে ব্যয় হয় ৬৪২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এই ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই তারা পূরণ করতে পারেনি।

জানা যায়, ২০১৩ সালের জুলাই মাসে চার বছর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ন্যাশনাল হাউসহোল্ড ডাটাবেজ (এনএইচডি) প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পায়। সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩২৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। প্রথম দফায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ে। ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৯৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এবার ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৭২৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

আগের প্রকল্পে ৬৪২ কোটি টাকা অপচয়ের পর প্রায় ৫০ কোটি টাকার দারিদ্র্য ডাটাবেজ প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। সংস্থাটির পরিসংখ্যান ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ (এসআইডি) জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল (এনএসএসএস) বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য অন্য জেলার দুটি উপজেলাসহ দুই জেলার সব উপজেলায় আর্থ-সামাজিক ডাটাবেজ আপডেট করার জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

সূত্র জানাচ্ছে, ৪৯.৪৮ কোটি টাকার এই নতুন প্রস্তাবটি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো দ্বারা বাস্তবায়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে তিন বছরের জন্য। এর মেয়াদকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত। দরিদ্র পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করার লক্ষ্যে একটি জাতীয় পারিবারিক ডাটাবেজ তৈরিতে সরকারি তহবিলের ৬৪২.৬০ কোটি টাকা অপচয় করার পরও প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

এনএইচডি (ন্যাশনাল হাউসহোল্ড ডাটাবেজ) বাস্তবায়নের জন্য ৫৪৫ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগকৃত জনবলকে দাফতরিক বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদন করার জন্য উপজেলা ও জেলা পরিসংখ্যান অফিসগুলোতে সংযুক্ত করে। ২০২২ সালের জুন মাসে তাদের জেরক্স ইন্ডিয়া কোম্পানি লিমিটেডের অধীনে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠান ১৪টি জেলার তথ্য আংশিক সংশোধন ও ৫০টি জেলার ডাটা অসমাপ্ত রেখে প্রকল্পের ১১২ কোটি ৪৪ লাখ ২৫ হাজার ৬২২ টাকা উত্তোলন করে নেয়। এই প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ৭২৭ কোটি টাকার মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ছিল ৬৮৬ কোটি ৮০ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। আর সরকার থেকে ছিল ৪০ কোটি ৫২ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া ৫৪৫ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরকে মাসিক বেতন-ভাতা দেওয়া হয়নি। প্রকল্পের টিপিপির সুপারিশ অনুযায়ী তাদের রেভিনিউ খাতে নিয়োগ না দিয়ে সরকারি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে ভুক্তভোগী ৭৩ জন প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করেন।

সময়ের আলো/আরএস/




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close