ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত কি আসন্ন
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:৪৮ এএম  (ভিজিট : ২৮৮)
বহুদিন ধরে বাইডেন প্রশাসনের আশঙ্কা ছিল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বড় কোনো অভিযান একটি বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের জন্ম দেবে। তবে বরাবরই ইসরাইল এসব উদ্বেগে কোনো রকম কর্ণপাত তো করেইনি, উল্টো লেবাননে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে শত শত প্রাণহানি ঘটিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরের মতো মুখে মুখে যুদ্ধের বিপক্ষে থাকলেও দেশটির কর্মকাণ্ড সর্বদাই উসকানিমূলক। আবার সাম্প্রতিক ইসরাইলি কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে, অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকে অস্ত্র-মদদ দিয়ে পাশে থেকেছে ইরান।

এই সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমেই নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনা করে দেশটি। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা হয় ইরানকে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতকাল ধরে এই অঞ্চলে যে লড়াই চলছিল, এটি একদিকে মূলত ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া এবং অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তাদের মিত্রদের মধ্যকার টিট ফর ট্যাট হামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ এই আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে যে, উভয়ের মধ্যে চলমান প্রক্সি লড়াই সরাসরি যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।

তিন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, লেবাননে আক্রমণের পর এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল যে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরাইল ওয়াশিংটনকে একটি নতুন আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে। কয়েক মাস ধরে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নিরসনে গাজা যুদ্ধবিরতির দিকে মনোনিবেশ করেছিল বাইডেন প্রশাসন। কিন্তু নাসরুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর সব মনোযোগ গিয়ে পড়েছে লেবানন এবং ইরানের কথিত ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স/প্রতিরোধ অক্ষ’-এর ওপর। গাজায় যুদ্ধবিরতি অর্জনে কূটনীতিতে ব্যর্থ হওয়া এবং লেবাননে হামলা ঠেকাতে না পারার পর পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে হোয়াইট হাউসের। এমনিতেই মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-সমর্থিত বহু মিলিশিয়া গ্রুপ আছে। তারমধ্যে হিজবুল্লাহ ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। গাজায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ায় এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।

নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ড লেবাননের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের পুরোনো কূটনীতির বিলোপ ঘটিয়েছে বলে মনে করেন মার্কিন কূটনীতিকরা। কয়েক মাস ধরে বাইডেনের দূত আমোস হোচস্টেইন, হিজবুল্লাহ এবং ইসরাইলকে তাদের সীমান্ত যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য এবং প্রায় ২০ বছরের পুরোনো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য লবিং করে আসছিলেন।

ওবামা প্রশাসনে থাকা ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি আলোচনার জন্য প্রাক্তন বিশেষ দূত ফ্রাঙ্ক লোয়েনস্টাইন মিডল ইস্ট আইকে বলেন, বাইডেন প্রশাসন সম্ভবত আশা করে বসেছিল যে, হিজবুল্লাহর ওপর ইসরাইলের বোমা হামলা সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে গাজার হামাসকে সাহায্য করা থেকে নিবৃত্ত করবে। যখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে গাজা বা লেবাননে যুদ্ধবিরতি হবে না, তখন বিমান হামলা চালিয়ে ইসরাইলের পক্ষে যতটা সম্ভব হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করার আশা করতেই পারে বাইডেন প্রশাসন। 
এমন পরিস্থিতিতে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার নির্দেশ নিউইয়র্ক থেকে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। শনিবার নাসরুল্লাহর মৃত্যুতে এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন তিনি।  ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। গত ৩১ জুলাই, পেজেকশিয়ানের শপথ গ্রহণের রাতে তেহরানের অভিজাত অতিথি ভবনে খুন হন হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়া। মাস তিনেক না যেতেই মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের বিশ^স্ত মিত্র হিজবুল্লাহ-প্রধান নাসরুল্লাহকে হারাল ইরান।

ইরানি প্রেসিডেন্টের ভাষ্য, নিউইয়র্কে বসেই নাসরুল্লাহকে হত্যার নির্দেশ এবং অনুমোদন দিয়েছেন নেতানিয়াহু। একই সঙ্গে নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বিবৃতিতে মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভুলে যাবে না যে এই সন্ত্রাসী হামলার নির্দেশ নিউইয়র্ক থেকে এসেছিল। 

এমন পরিস্থতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরান সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে। এমনিতেই বহু আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র প্রক্সি ওয়ারে জড়িত। ইয়েমেনে সৌদি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র যেমন বহু আগে থেকেই সহযোগিতা করে আসছিল, তেমনি ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করে আসছিল ইরান। একইভাবে ইরাকের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী, গাজায় হামাস, লেবাননে হিজবুল্লাহসহ বহু সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন করে ইরান। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রও একচেটিয়াভাবে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে আসছে। উভয়ের মধ্যে চলমান প্রক্সি লড়াই সরাসরি যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। এখন পর্যন্ত একে অপরের সম্মুখ লড়াই এড়াতে পেরেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ইয়েমেন, সিরিয়া ও ইরাকে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলা করছে। অপরদিকে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন সময়েই নানা প্রেক্ষাপটে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও শেষ পর্যন্ত তেমন বিপর্যয়কর কিছু ঘটেনি। তবে ক্রমাগত ইসরাইলের প্রতি মার্কিন মদদ পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তুলবে বলেই অভিমত তাদের। সত্যি বলতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের অভিজ্ঞতা ততটা সুখকর না হওয়ায়, বছরের পর বছর ধরে এ অঞ্চল থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ভাগ্য ফের তাদের মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে ফিরিয়ে এনেছে।

এদিকে লেবাননে সম্ভাব্য স্থল অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে ইসরাইল। এরই মধ্যে সীমান্তে সেনা সমাবেশও ঘটিয়েছে দেশটি। হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার পর এ খবর জানানো হয়। পাশাপাশি লেবাননে বোমা হামলাও চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। গত বছরের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০ জন লেবানিজ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। বিবিসি বলছে, গত সোমবার থেকে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ৮ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। অপরদিকে গাজায় হামলাও থামায়নি ইসরাইল। আলজাজিরা জানিয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায়  ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি হামলায় ৫২ জন নিহত এবং ১১৮ জন আহত হয়েছে। এসবের মধ্যে ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথি। আলজাজিরার খবরে বলা হয়, সংগঠনটির সামরিক শাখা জানিয়েছে, ইসরাইলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র থেকে ওই বিমানবন্দরে যখন ফিরছিলেন, তখন এই হামলা চালানো হয়েছে। তবে এতে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরাইলি বাহিনী হুথিদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার কথা জানিয়েছে।

এদিকে লেবানন থেকে ছোড়া রকেট জর্ডানের রাজধানী আম্মানে পড়েছে বলে জানিয়েছে জর্ডানের সশস্ত্র বাহিনী। শনিবার সশস্ত্র বাহিনীর বিবৃতিতে এ কথা বলা হয় বলে জানিয়েছে সিএনএন। বিবৃতিতে জানানো হয়, মুওয়াকার এলাকায় রকেট পড়েছে। সেখানে মানুষের বসতি নেই। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। মধ্যপ্রাচ্যের এমন অস্থিতিশীলতার জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশন ডাকার আহ্বান জানিয়েছে ইরান। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির ইরাভানি ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা কাউন্সিলে চিঠি দিয়ে এই আহ্বান জানিয়েছেন। হাসান নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ইরান এ ধরনের হত্যাকাণ্ড মেনে নেবে না। পাশপাশি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, মিসরসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোও ইসরাইলের বিরুদ্ধাচরণ করে বিবৃতি দিয়েছে।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close