শুটকি বিক্রি করে বাড়ি ফেরার জন্য অপেক্ষমাণ আব্দু সালামকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায় দ্রুত গতির একটি বাস। পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ঘটা সে দুর্ঘটনায় প্রাণে বাঁচলেও কেটে ফেলতে হয় তার বাম পা। পঙ্গু হয়ে পড়ায় অন্যত্র বিয়ে বসেন তার স্ত্রী। কিন্তু মাথা না নুইয়ে দুই সন্তান ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যান পঙ্গুত্ব বরণ করা আব্দু সালাম। ছয় ও চার বছরের ছেলে-মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে টৈটং বাজারের ফুটপাতে শুরু করেন মরিচ মসলার ক্ষুদ্র ব্যবসা।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পেকুয়া উপজেলা সদরের চৌমুহনী স্টেশনে সেই পুরনো ঘাতক এবার তার প্রাণটাই কেড়ে নেয়। রাস্তা পারাপারের সময় লবণবাহী একটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে এসে তাকে চাপা দেয়। ভারী দানবের চাকায় পিষ্ট হয়ে থেঁতলে যায় পেট, কোমর ও মাথা। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
নিহত আব্দু সালাম (৪০) বকসো মোড়া এলাকার মৃত নুরুল আলমের ছেলে।
নিহতের প্রতিবেশী ওসমান গনি বলেন, এরমাঝেও বছর খানেক আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার নাপোঁড়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলো পঙ্গু আব্দু সালাম। আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে সম্প্রতি স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছিলো সে। আজ (রোববার) দুপুরে পাইকারি মরিচ মসলা কিনতে পেকুয়া বাজার যাচ্ছিলো সে। চৌমুহনী স্টেশনে নেমে একটি দোকান থেকে ঠাণ্ডা পানি কিনে পান করে। অবশিষ্ট পানির বোতল হাতেই ছিলো। আরেকটি গাড়িতে ওঠার জন্য রাস্তা পারাপারের সময় ঘাতক ট্রাক তাকে পিষে মারে। এভাবেই জীবন যুদ্ধে হার মানে লড়াকু আব্দু সালাম।
টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল জলিল বলেন, নিহত আব্দু সালামের বাবা অনেক বছর আগে মারা গেছেন। দুই ভাইও নিজেদের সংসার নিয়ে আলাদা থাকেন। স্ত্রী ছেড়ে যাওয়ার পর তার বৃদ্ধা মা দুই সন্তানের একমাত্র অবলম্বন ছিলো সে। তার অকাল মৃত্যুতে পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল মোস্তাফা বলেন, মরদেহটি উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। একইসাথে ঘাতক ট্রাকটি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।