ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিভাগে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
প্রকাশ: রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:০৯ পিএম  (ভিজিট : ২১২)
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আমির হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নারী শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হেনস্থা করা, ছাত্রছাত্রীদের বডি শেমিং করা এবং নাম্বার দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে সাতটা থেকে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের (স্নাতকোত্তর) শিক্ষার্থীরা বিভাগের ফটকে তালা ঝুলিয়ে এ বিক্ষোভ শুরু করেন। ফলে বিভাগের অন্যান্য ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ ছিল।

শিক্ষার্থীরা জানান, গত ৮ সেপ্টেম্বর বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জামালউদ্দিন রুনু বরাবর আমির হোসেনের বিরুদ্ধে ৮ দফা লিখিত অভিযোগপত্র দেন তারা। এর প্রেক্ষিতে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানকে অবগত করা হয়। কয়েকদিন আগে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তবে ফলপ্রসূ কোনো সিদ্ধান্ত তারা পাননি। যার কারণে আজ রোববার সকাল থেকে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন।

৮ দফা অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ এনেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-প্রেজেন্টেশনের সময় ছেলেদের যথাযথ অগ্রাধিকার না দেওয়া এবং নাম্বার দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য করা; এক ব্যাচের শিক্ষার্থী নারী কেলেংকারীতে জড়িত, এমন গুরুতর মিথ্যা তথ্য অন্যান্য ব্যাচের ক্লাসে গিয়ে প্রচার করা; ৪৭ ব্যাচ প্রথমবর্ষে থাকাকালীন তাদের একটি ব্যক্তিউদ্যোগে ভ্রমণ নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষকদের কাছে ও অন্যান্য ব্যাচের ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে গিয়ে কটুক্তি করা; ছেলে-মেয়েদের নামে অত্যন্ত নিন্দনীয় কথা ছড়ানো ও তাদের চারিত্রিক বিষয়ক প্রশ্নও তোলা; ভাইভা চলাকালে কারা ঘুরতে গিয়েছিল তাদের তালিকা নিয়ে ভাইভা বোর্ডে থাকা শিক্ষকদের কাছে জমা দিয়ে ওই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা। উক্ত ভাইভাতে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের এই ভ্রমণটি নিয়ে নানারকম প্রশ্ন করা; ক্লাসে পড়ানো বাদ দিয়ে যত অপ্রাসঙ্গিক বিষয় (যেমন গীবত করা, শিক্ষকসুলভ আচরণ না করা, অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য) নিয়ে আলোচনা করা; কোন শিক্ষার্থী তিনি ব্যতিত অন্য কোন সুপারভাইজারের অধীনে কাজ করলে এই নিয়ে ক্লাসে তাদের হেনস্তা করা, ক্লাসে অন্যান্য শিক্ষকদের নামে কটূক্তি করা ও তাদের নানারমক ব্যাঙ্গাত্মক নামে ডাকা; শিক্ষকদের বডি শেমিং করা, শিক্ষকদের গবেষণা ও টাকা পয়সার উৎস নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা, মিথ্যাচার করা, বিভাগের সাবেক একজন সভাপতি ও তার ছেলেকে নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের কাছে কুৎসাও রটানো ইত্যাদি।

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবিগুলো হলো: ২০২১-২২ স্নাতোকোত্তর শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কমিটি থেকে তাকে অপসারণ করা; তিনি যে কোর্স পড়ান সেটার দায়িত্ব থেকে তাকে অপসারণ করে অন্য দায়িত্বশীল ও যোগ্য শিক্ষককে নিযুক্ত করা; ৪৭ ব্যাচের কোন কোর্সের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় পরীক্ষক হিসেবে তিনি থাকবেন না সেটি নিশ্চিত করা; ভবিষ্যতে যাতে বিভাগের কোনো ব্যাচ বা শিক্ষার্থী যেন এ ধরনের ঘটনাগুলোর সম্মুখীন না হয়, সে জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা; তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুনরায় ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে যেন পরীক্ষার ফলাফলে কোন প্রভাব না পড়ে তা নিশ্চিত করা; উল্লেখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অধ্যাপক আমির হোসেন ভূঁইয়াকে সকলধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি পূর্বক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন ও শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী তদন্ত কমিটি গঠন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৪৭ ব্যাচের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমরা প্রথম বর্ষে থাকতে একটা ট্যুরে গিয়েছিলাম। সেই ট্যুর নিয়ে স্যার (আমির হোসেন) আমাদেরকে জড়িয়ে বিভিন্ন ব্যাচের সাথে মানহানিকর কথাবার্তা বলছে। এই ঘটনার জের ধরেই আমাদের রেজাল্ট খারাপ হওয়া শুরু করে এমনকি স্যার আমাদের অভিভাবকদের ফোন দিয়েও বিভিন্নভাবে হেনস্তা করে। সে এর পাশাপাশি একজন যৌন নিপীড়ক। কিন্তু তিনি এমন ভাবে এই কাজগুলো করে যার শক্ত কোনো প্রমাণ থাকে না। প্রতিবছর নতুন ব্যাচ আসার পরে নির্দিষ্ট কিছু নারী শিক্ষার্থীকে সে টার্গেট করে৷ এরপর ৪/৫ বছর ধরে সে ওই টার্গেট করা মেয়েদেরকে বিভিন্নভাবে জ্বালায়। তার যৌন নিপীড়নের উপায়গুলো হলো, বিভিন্ন ভাবে মেয়েদের গা ঘেঁষে দাঁড়ানো, বাজে নজরে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকা বিভিন্ন ভাবে স্পর্শ করা ইত্যাদি। এগুলোর আসলে শক্ত কোনো প্রমাণ দেওয়া সম্ভব না। তিনি সবসময় ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে নাম্বার দেওয়ার সময় বৈষম্য করে। ছেলে ও মেয়েদের নাম্বারের পার্থক্য চোখে পড়ার মতো। কিন্তু তিনি কোনো সময় ক্লাসে ঠিকমতো পড়ান না৷ তিনি ক্লাসে এসে বিভিন্ন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা করেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অধ্যাপক আমির হোসেন ভূঁইয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, "আমার কাছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা যেমন গুরুত্বপূর্ণ আমার সহকর্মীও তেমন গুরুত্বপূর্ণ। একটি অভিযোগ আসছে সেটার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এটার একটি যথাযথ বিচার হওয়া উচিত। সেই স্বার্থে প্রশাসনকে অবগত করেছি নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে বিভাগের কোনো শিক্ষককে যাতে সত্যাসত্য তদন্ত কমিটিতে না রাখা হয়। অতিদ্রুত একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি করলে সত্যটা বের হয়ে আসবে এবং অতিদ্রুত এটার সমাধান করে বিভাগে অ্যাকাডেমিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।"

সময়ের আলো/জিকে




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close