ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

হার্ট অ্যাটাক বেশি হচ্ছে তরুণদের
প্রকাশ: রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:২৬ এএম  (ভিজিট : ৩৮২)
একসময় হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের সমস্যা শুধু ৬০ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে দেখা যেত। কিন্তু এখন আর কোনো বয়স নেই। ১৮ বছর থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ, যে কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন হৃদরোগে। সম্প্রতি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ২৫ ভাগেরই বয়স ৫০ বছরের নিচে।

আর বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস ২০২২ অনুসারে দেশে হার্ট অ্যাটাকে মোট মৃত্যুর প্রায় ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ তরুণসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে ঘটছে। এর মধ্যে হার্ট অ্যাটাকে গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি মানুষ মারা যায়। এর কারণ হচ্ছে-শহরে বসবাসকারীদের মধ্যে মানসিক চাপ, অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং দূষণের মাত্রা বেশি। যদিও বাংলাদেশের তরুণদের নিয়ে হার্ট অ্যাটাকের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। 

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে প্রতি ৫ জন তরুণের একজন হৃদরোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৫০ বছরের নিচে ৩০ শতাংশ রোগীর মধ্যে হৃদরোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটে এবং তার মধ্যে ৩০ শতাংশের মৃত্যু হার্টের সমস্যাজনিত কারণে হচ্ছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার পালন হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘হৃদয়ের যন্ত্র হোক সর্বজনীন’। হার্টের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে প্রতি বছর আজকের এই দিনে দিবসটি পালন করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন পরিশ্রম কমে যাওয়া, অস্বাস্থ্যকর খাবার, উচ্চ কোলেস্টেরল, ওজন বৃদ্ধি, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও ধূমপানের কারণে দেশের তরুণদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই তরুণদের মধ্যে এই হার নিয়ন্ত্রণে আনতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন যেমন-সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন তারা।

চিকিৎসকরা জানান, হার্ট বা হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য হার্টে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ দরকার হয়। হার্টে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালি যদি বন্ধ হয়ে যায় এবং এর ফলে যদি রক্ত
হার্টে পৌঁছাতে না পারে, তা হলে হার্টের মাংসপেশিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। আর তখনই হয় হার্ট অ্যাটাক। এ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থেকেও হার্টের রক্তনালি ব্লক হতে পারে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে মোট মৃত্যুর ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ ঘটেছে হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগে। এর মধ্যে হৃদরোগে ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে মৃত্যুর হার ২১ দশমিক ১২ শতাংশ। 

 এ ছাড়াও বিবিএস জানিয়েছে, হার্ট অ্যাটাকে শহরে মৃত্যুর হার ২৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ ও গ্রামে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হার ১৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হার ছিল ২২ দশমিক ৬ শতাংশ। 

তবে ২০২২ সালের তথ্য অনুসারে, দেশে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হার ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এর পরেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা, ব্রেন স্ট্রোক, হাঁপানি, অন্যান্য জ্বর, লিভার ক্যানসার, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ব্লাড ক্যানসার, কিডনি রোগ, সড়ক দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যায়। এ ছাড়াও বৃদ্ধ বয়সে হার্টের সমস্যার কারণে ২৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ মানুষ মারা যায়। হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। 
অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, ৫ কারণে দেশে অল্প বয়সের তরুণদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ছে। এর মধ্যে চল্লিশ বছরের নিচে যেসব রোগীর হার্টের সমস্যা হচ্ছে তার প্রথমত কারণ হচ্ছে-অতিরিক্ত তামাকজাত দ্রব্য বা ধূমপানের ব্যবহার। এ ছাড়া শারীরিক পরিশ্রম কম করা, শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া, অস্বাস্থ্যকর ও চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার কারণেও অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বাড়ছে। আবার লবণ বেশি খাওয়ার কারণে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়, পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি না খাওয়া এবং শব্দদূষণের কারণেও দিন দিন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে ৩৫ শতাংশের বেশি মানুষ তামাক ব্যবহার করে। ফলে ছোটবেলা থেকেই তামাকের ব্যবহারের কারণে ধোঁয়া শরীরে প্রবেশ করে। আর আমাদের দেশে সাধারণত ১৫-১৬ বছর বয়স থেকেই ধূমপান শুরু করে। ফলে ৪০ বছরের মধ্যে গিয়ে হার্টের সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা গেছে। এ ছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী খুব বেশি। অনেকেই জানে না তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। দেশে মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে হৃদরোগে মৃত্যুর হারও বাড়ছে। তবে বংশগত কারণেও অনেকের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। আর হার্ট অ্যাটাকের কিছু উপসর্গ রয়েছে যেগুলো দেখা দিলে সময়মতো চিকিৎসা না পেলে যে কারো মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে করণীয় সম্পর্কে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ সময়ের আলোকে বলেন, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে স্থানান্তর করতে পারলে হৃদরোগের অনেক আধুনিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু পূর্বে হৃদরোগ শনাক্ত করা না গেলে অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা দেওয়ার পূর্বেই রোগীর মৃত্যু ঘটে। তাই প্রতিরোধটাই সবচেয়ে জরুরি। আশার কথা হৃদরোগ নামক নীরব ঘাতক শতকরা ৭০ ভাগই প্রতিরোধ যোগ্য।

তিনি বলেন, একবার হার্ট আক্রান্ত হয়ে ভালো হলেও সারা জনম ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হবে এবং সাবধানে নিয়ম অনুযায়ী অন্যান্য রোগের চিকিৎসাসহ নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। হার্টকে ভালো রাখতে হলে সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের কোনো বিকল্প নেই। তাই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও অতিরিক্ত লবণ নিয়ন্ত্রণ, চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন, ধূমপান বর্জন অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা হ্রাস করতে হবে। কারণ যথেষ্ট পরিমাণে ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম না করলে শরীরে ওজন বেড়ে যেতে পারে। এতে হৃদযন্ত্রকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, ফলে অধিক ওজনসম্পন্ন লোকদের উচ্চ রক্তচাপসহ ধমনী, শিরার নানা রকম রোগ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও নিয়মিত ব্যায়ামসহ মানসিক ও শারীরিক চাপ সামলাতে হবে।

হৃদরোগ প্রতিরোধের তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসা সহজলভ্য করারও পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close