ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য
নিয়ম ভাঙায় এগিয়ে যাত্রীরা
প্রকাশ: শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬:৪১ এএম  (ভিজিট : ২৯৪)
রাজধানীর জিগাতলা থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সড়কটির উভয় পাশে অনেকটা জুড়ে রয়েছে অভিজাত এলাকা ধানমন্ডি। শুক্রবার ওই সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় যাচ্ছিলেন এক তরুণী। তাকে বহনকারী অটোরিকশার চালককে থামিয়ে ট্রাফিক পুলিশ অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে যেতে বলেন। আর তখনই ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ শুরু করেন রিকশাযাত্রী। তিনি পুলিশের কাছে জানতে চান, কোন আইনে বলা আছে, এ রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে পারবে না। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনা নিজেই মোবাইলের ভিডিওতে ধারণ করেন তরুণী। পুলিশের তোয়াক্কা না করে একপর্যায়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে জোরপূর্বক চলে যান তিনি।

ইদানীং রাজধানী ঢাকার সড়কগুলোতে এমন চিত্র হরহামেশাই চোখে পড়ছে। ট্রাফিক পুলিশ বাধা দিলে খোদ যাত্রীরাই চড়াও হচ্ছে পুলিশের ওপর। তবে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরাও সড়কে উঠতে চান না। তারা মনে করেন, সরকার যে আইন করবে সে আইনের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু যাত্রীদের পীড়াপীড়িতে মূল সড়কে উঠতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। এ বাহনটির দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়েছে যে, কোনো ধরনের নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করেই মূল সড়কে দেদার চলছে। তাই ব্যাটারিচালিত এসব রিকশা ও ইজিবাইককে নিয়ন্ত্রণ করতে গত কয়েক দিন থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ অভিযান চালিয়ে আসছে। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্টের মাধ্যমে এ অভিযান চালিয়ে আসছে ট্রাফিক বিভাগ। অভিযানের সময় অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে ডাম্পিং, ব্যাটারি জব্দ ও জরিমানাসহ বিভিন্ন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতেও দমছে না তাদের চলাচল।অনেকটা নিষেধ অমান্য করেই চলছে।

ডিএমপির দাবি, যাত্রীদের ইচ্ছাতেই মূল সড়কে উঠছে চালকরা। আর তাতে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। গত ৬ দিনে চার হাজার ১৫৪টি মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ১৪ লক্ষাধিক টাকা। তবু সড়কের বিশৃঙ্খলা কোনোভাবেই রোধ করতে পারছে না ট্রাফিক পুলিশ। 

রাজধানীর সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট, কলাবাগান, ধানমন্ডি ৩২, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, বাংলামোটর, উত্তরার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার মূল সড়কগুলোতে দিব্যি চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। কোনো আইন ও নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করেই দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব ক্ষুদ্র বাহন। এমনকি ট্রাফিক সিগন্যাল পর্যন্ত মানছে না তারা। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ থেকে মূল সড়কে না ওঠার জন্য কড়াভাবে বললেও চালকরা তা মানছে না। এসব অটোরিকশা যখন তখন দ্রুতগতির যানবাহনের সামনে চলে আসে। কোথাও হঠাৎ করেই বাঁক নেয়। এতে পেছনের যানবাহনের চালকদের বিভ্রান্ত হতে দেখা যায়। আবার দ্রুতগতিতে সড়কের উল্টোদিকে চলে অন্য যানবাহনের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। এ ছাড়া মূল সড়কগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি করছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। রাজধানীতে প্রতিদিন দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠছে এসব ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। 

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাস্তা থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা বা ইজিবাইক সরাতে হলে নিজেদের সচেতন হতে হবে। কারণ আমরা যদি রিকশায় না উঠি তারা মূল সড়কে আসতে পারবে না। বড় যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সড়কে চলতে যাওয়ায় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠছে অটোরিকশা। অনেক সময় পুলিশ চালকদের বাধা দিলেও যাত্রীরা তার প্রতিবাদ করে। ফলে পুলিশও তাদের কাজ করতে পারছে না। আমরা যদি তাদের সাহায্য না করি তা হলে কখনো এ সমস্যার সমাধান হবে না। তবে অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশের খামখেয়ালিপনার কারণেও তারা চলার সুযোগ পায়।

ডিএমপির সূত্র মতে, ২০ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে চার হাজার ১৫৪টি মামলা করা হয়েছে। আর এসব মামলায় এক কোটি ৪৭ লাখ সাত হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। এ ছাড়া অভিযানকালে ৩৫২টি গাড়ি ডাম্পিং ও ২৪৭টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে। নগদ জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৩৫ লাখ ৪৩ হাজার ১৫০ টাকা। কিন্তু তাতেও কমেনি ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করার সংখ্যা। এগুলোর মধ্যে বেশি অনিয়ম করছে ব্যাটারিচালিত রিকশা বা ইজিবাইক।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন এবং যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. মো. হাদিউজ্জামান সময়ের আলোকে বলেন, ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর ঢাকার বাইরে থেকে অনেক ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করেছে। যেগুলোর অধিকাংশ চালকের নেই কোনো ধরনের নিবন্ধন ও অভিজ্ঞতা। ফলে তারা শহরে বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এসব বাহনকে বিআরটিএ বা সিটি করপোরেশন থেকে কোনো ধরনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে অবৈধভাবে চলার কারণে সিগন্যাল ও নিয়মনীতি না মেনে তৈরি করছে যানজট। ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা একবার যদি মূল সড়কে চলার সুযোগ পেয়ে যায় তা হলে পরে তাদের সরানো কষ্টকর হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো রাজধানীর কোন কোন রুটে চলতে পারবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া জরুরি। ঢাকাতে এমনিতেই যানবাহনের পরিমাণ অনেক বেশি। ব্যাটারিচলিত রিকশা মূল সড়কে চলার কারণে আরও যানজট ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। এসব বাহন কোন সড়কে চলবে তা ঠিক করার পাশাপাশি আধুনিকায়ন ও ব্যাটারি যেন পরিবেশের ক্ষতি না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বর্তমানে ব্যাটারিচালিত যানবাহন প্রায় ৫০ লাখ হবে। তাই এক বছরে এত পরিমাণ গাড়িকে অনুমোদন দেওয়া সম্ভব নয়। তবে সবকিছু তদারকি করতে হবে বিআরটিএকে। এর ফলে অনিয়ম কমে আসবে এবং জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খন্দকার নাজমুল হাসান সময়ের আলোকে বলেন, চালকরা কিছুটা মানলেও যাত্রীরা মূল সড়কে চলতে বেশি উৎসাহ দিচ্ছে। তাই রাজধানীর মূল সড়ক থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা সরাতে হলে যাত্রীদের সচেতন হতে হবে। আমরা প্রতি দিনই অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। তবে যানজট নিরসনে সবাইকে সচেতন না হলে সম্ভব নয়। যানজট ও ভোগান্তি কমাতে এখনও অ্যাকশন চলমান। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে কমে যাবে। 

তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকে ওঠা থেকে বিরত থাকতে হবে। পুলিশ চালকদের বাধা দিলে সাধারণ যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়। অনেক সময় তারা পুলিশের সঙ্গে তর্ক ও খারাপ ব্যবহার করে। তাই যাত্রীরা সচেতন না হলে এ সমস্যার সমাধান কখনোই সম্ভব নয়। তবে এ সমস্যা সমাধানে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেব। প্রতিনিয়ত ডাম্পিং ও রেকার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যেই একটা দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close