ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

ইলিশের বদলে পাঙাশ
প্রকাশ: শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩:২১ এএম  (ভিজিট : ৩২৪)
স্ত্রী-সন্তান ও মা-বাবাসহ ছয়জনের পরিবার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমি। আমার ছোট মেয়ে দিশা ক্লাস নাইনে পড়ে। পরিবারের সবার বেশ আদরের। দেখতে দেখতে এবার পনেরো বছরে পড়েছে দিশা। বড় ছেলে সিয়াম এ বছর সবেমাত্র ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে। পড়ালেখা নিয়েই ব্যস্ত থাকে বেশিরভাগ সময়। কিছুটা শান্ত প্রকৃতির। এটা চাই, ওটা চাই-এসবের ধার ধারে না। কিন্তু দিশার বেলায় এর উল্টো চিত্র। তার অনেক দাবি-দাওয়া থাকে।

মাসের আজ শেষ শুক্রবার। মাছ-তরকারি কিনতে বাজারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। দিশা-সিয়ামের মাকে ডাক দিলাম, কই গেলা? বাজারের ব্যাগ আনো তাড়াতাড়ি। আমার কথার আওয়াজ পেয়ে দিশা চলে এলো। আর বলল, আব্বু অনেক দিন হয় ইলিশ মাছ খাই না। বাজার থেকে একটা বড় সাইজের ইলিশ মাছ আনবে কিন্তু!

আমি ক্ষণিকের জন্য চুপসে গেলাম। সোশ্যাল মিডিয়া, টেলিভিশন কিংবা পত্র-পত্রিকায় ইলিশের দামের কথা জেনে কেনার কথা ভাবতে পারিনি এখনও। আমার মতো মোটামুটি বেতনের চাকরিজীবীদের ইলিশ মাছ কেনার সামর্থ্য আসলে হারিয়ে গেছে। নিত্যপণ্যের দামের বেসামাল অবস্থায় নাজেহাল হচ্ছি প্রতিনিয়ত। এদিকে আবার চলতি মাসের এটা-ই শেষ সপ্তাহ। পকেটের যা অবস্থা! নানা দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে মনের মধ্যে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচও লাগামহীন। সে কথা না হয় বাদই দিলাম। 

দিশা আবারও আমাকে উদ্দেশ করে বলল, তুমি কি ইলিশ মাছ আনবে না, আব্বু? আমি রোবটের মতো কোনোরকমে মাথা নেড়ে জবাব দিলাম, ঠিক আছে মামণি বাজার থেকে আজ একটা বড় সাইজের মাছ কিনে আনব। এরমধ্যেই দিশার মা এসে বলল, এই নাও বাজারের ব্যাগ।

বাজারের তরকারি পট্টিতে অনেক দিন পর বন্ধু আমিনুলের সঙ্গে দেখা। আমাকে দেখে তার চোখে-মুখে উৎফুল্লতার ছাপ। আমাকে বলে উঠল, কী খবর কবি বন্ধু? লেখালেখি তো ভালোই চলছে। আমি মুচকি হেসে বললাম, ভালো আছি তোমাদের দোয়ায়। তোমার শরীর-স্বাস্থ্য কেমন যাচ্ছে? সে উত্তর দিল, এই তো আছি আলহামদুলিল্লাহ। নানা বিষয়ে কথাবলার ফাঁকে দুজনের-ই পরিচিত এক ভদ্রলোক সামনে পড়ল। হাতে একটা পলিথিন ব্যাগের ভেতর নাকি প্রতিটি এক কেজির সামান্য বেশি ওজনের দুটি ইলিশ মাছ। আমি দাম জিজ্ঞেস করলাম, মাছ দুটো কত দিয়ে কিনেছেন? তিনি উত্তর দিলেন, তিন হাজার নয়শ চল্লিশ টাকা। এবার আমি বললাম, আপনাদের মতো লাখ টাকা বেতনের চাকরিজীবীর পক্ষেই কেবল সম্ভব এত দামের ইলিশ মাছ খাওয়া। 

ভদ্রলোক বললেন, কী যে বলেন আপনি! উনি মনে হয় ভেবেছেন, আমি রসিকতা করেছি। অথচ সত্য এটাই। আর মাছের বাজারে কয়েক মিনিট দাম-দর হাঁকাহাঁকি করে ইলিশ কেনার সাধ মিটে গেল আমার। যে কয় টাকা নিয়ে বাজারে এসেছি, ইলিশ মাছ কিনলে আর সব বাজার করা বাদ দেওয়া লাগবে। তাই কম দামের দুয়েক প্রজাতির মাছ এবং সঙ্গে দুই কেজির বেশি ওজনের একটা পাঙাশ মাছ কিনে ব্যাগে ভরলাম।

এবার সবজির পট্টিতে প্রবেশ করলাম। এক পরিচিত সবজি দোকানের পাশ থেকে কম দামের বড় বড় এক কেজি ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ও এক কেজি আলু কিনলাম। দাম কষাকষি করে কিছু সবজিও নিলাম। জানি না কেন যেন ইদানীং সবকিছুতে দর কষাকষি করি আগের তুলনায় অনেকটাই বেশি। পকেটে হাত দিয়ে দেখি বাড়ি থেকে যে টাকা নিয়ে বের হয়েছি, তা প্রায় শেষ পর্যায়ে। 

কী দিনকাল পড়েছে! আগের মতো ফলমূলও খেতে পারি না টাকা-পয়সার অভাবে। তাই চল্লিশ টাকা কেজি দরে বড় সাইজের এক কেজি বরিশাইল্যা আমড়া ও ত্রিশ টাকা দিয়ে একটা জাম্বুরাও কিনলাম সবজি কেনাকাটার এক ফাঁকে।

বাজার থেকে বাড়ি ফিরলাম দ্রুত। বাড়িতে এসেই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলাম, কই গেলা দিশার মা? এই নাও তোমার বাজার। এদিকে দিশা আমার গলার আওয়াজ শুনতে পেয়েই দৌড়ে এলো। আর বাজারের ব্যাগ চেক করে ভ্রু কুঁচকে মুখে অমাবস্যার অন্ধকার নিয়ে বলে উঠল, ইলিশের বদলে পাঙাশ?


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close