ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সড়কের সুরক্ষা নিশ্চিত না করেই মাছ চাষ
ভাঙনে মরণফাঁদ অর্ধশতাধিক সড়ক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:৫২ এএম  (ভিজিট : ১৯৮)
সড়কের সুরক্ষা নিশ্চিত না করেই ঘেরে মাছ চাষ করায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার অর্ধশতাধিক সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঘেরে মাছ চাষের ক্ষেত্রে সড়কের পাশে আলাদা বেড়ি করার নিয়ম থাকলেও তা মানেননি স্থানীয় ঘের মালিকরা। এমনকি সড়কের সুরক্ষায় গাইডওয়াল কিংবা নিরাপত্তা জালও ব্যবহার করেননি। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক এখন মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে এলাকাবাসীর কাছে। সড়কগুলোর কোথাও অর্ধেক, আবার কোথাও অধিকাংশই বিলীন হয়ে গেছে। এ কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে এসব সড়কে চলাচল করা যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীরা। 

এ বিষয়ে কোটালীপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী শফিউল আযম বলেন, কোটালীপাড়ায় এলজিইডির ৫০টির বেশি সড়কের বেহাল দশা হয়েছে মাছের ঘেরের কারণে। বারবার ঘের মালিকদের বলা সত্ত্বেও সড়কের পাশে ঘেরে মাছ চাষে তারা মানছেন না সরকারি আইন। বর্তমানে বরাদ্দ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক মেরামতও করা যাচ্ছে না। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন এসব সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনুর আক্তার বলেন, সরকারি আইন মেনে ঘেরে মাছ চাষ করার জন্য একাধিকবার ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ঘের মালিকদের বলা হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক এলজিইডি এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের। তারা যদি সহযোগিতা চায় তা হলে ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ মাচারতা-নয়াকান্দি সড়কটির বেহাল দশা। মাছের ঘেরের কারণে সড়কের অধিকাংশ জায়গা বিলীন হতে চলেছে। স্থানীয়রা জানান, কান্দি ইউনিয়নের লেবুবাড়ি এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা এলবার্ট বাড়ৈয়ের মালিকানাধীন মাছের ঘেরের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়কটি। একাধিকবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাস্তা সুরক্ষার ব্যবস্থা করে ঘেরে মাছ চাষের কথা বলা হলেও মানছেন না তারা। 

কান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তুষার মধু বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এলজিইডি সড়কটি নির্মাণ করে। বর্তমানে সড়কটির যে অবস্থা তাতে সম্পূর্ণরূপে সংস্কারের যে বিশাল অর্থের প্রয়োজন ইউনিয়ন পরিষদের কাছে তা নেই। শুধু এই সড়কটিই নয়, আমার ইউনিয়নসহ উপজেলার সব ইউনিয়নে অসংখ্য সড়ক মাছের ঘেরের কারণে আজ হুমকির মুখে। মাছ চাষিদের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার জন্য আজ গ্রামীণ সড়কগুলো এই অবস্থায় পরিণত হয়েছে।

নয়াকান্দি গ্রামের হাচেন বেপারি বলেন, এই সড়কের পাশেই রয়েছে অন্তত ২০টি মুরগির খামার। মুরগি ও ডিমের পাশাপাশি খামারের মুরগির খাবার সরবরাহের জন্য নিয়মিত পিকআপ ভ্যান ও ট্রাক চলাচল করে এই সড়কে। এলবার্ট বাড়ৈয়ের মাছের ঘেরের কারণে আজ সড়কটি বিলীন হতে চলেছে। বিপাকে পড়েছেন কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। 

ইলিয়াছ হাওলাদার নামের এক পোল্ট্রি ফার্ম ব্যবসায়ী বলেন, আমার ফার্মে ১৩ হাজার মুরগি রয়েছে। প্রতিদিন এসব মুরগির ডিম বাজারজাত করতে হয়। বর্তমানে এই ঘেরের কারণে সড়কটি এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এখানে। ভাঙনের কারণে সড়কটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। 

এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে ঘেরে মাছ চাষ করা এলবার্ট বাড়ৈ বলেন, আমার জায়গার ওপর দিয়ে সড়কটি তৈরি হয়েছে। মাছ চাষের কারণে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এটা ঠিক। তবে সড়কটিতে যারা চলাচল করেন তারা সবাই সহযোগিতা করলে সড়কটির মেরামত কাজ সহজেই করা সম্ভব। 

অন্যদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী রহিম, এমরানসহ আরও কয়েকজন বলেন, যেহেতু সড়কটি এলবার্ট বাড়ৈয়ের মাছের ঘেরের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেহেতু তারই সড়কটি মেরামতের জন্য এগিয়ে আসা উচিত। সড়কটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেরামত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি আমরা।

এ ছাড়া কোটালীপাড়া-ধারাবাশাইল সড়ক সংলগ্ন দক্ষিণ ডহরপাড়া জামে মসজিদের সামনে ইদ্রিস শেখের মাছের ঘেরের কারণে সড়ক ভেঙে পড়েছে। ধারাবাশাইল থেকে কান্দি সড়কের তারাকান্দা এলাকায় মঙ্গল বৈদ্যের মাছের ঘেরের কারণে ভেঙে গেছে পিচঢালাই সড়ক। ধারাবাশাইল-কাচারীভিটা সড়কের মাচারতারা মিরাজ মুন্সী, বাবুল শেখসহ সড়কের উভয় পাশে একাধিক মাছের ঘেরের কারণে সড়ক ভেঙে গেছে অনেক স্থানে।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close