ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

অর্থাভাবে হচ্ছে না সংস্কার
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬:৩৪ এএম  (ভিজিট : ২৩০)
শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর ৫ ও ৬ আগস্ট রাজধানীতে ৫০টি থানার মধ্যে ২২টি থানায় ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। লুটপাটের পাশাপাশি পুড়িয়ে দেওয়া হয় ১৩টি থানা ভবন। এই ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলোর অন্যতম মোহাম্মদপুর থানা। গত মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় মোহাম্মদপুর থানার প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই দেখা যায় হাতের ডানপাশে ছায়ায় বসে আছেন একজন কনস্টেবল। তিনি মূলত থানার প্রধান গেটে কর্তব্যরত।

প্রবেশমুখ থেকে তাকিয়ে দেখা যায়, এখনও ক্ষত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। এক পাশে রঙের কাজ শেষ হলেও বাকি অংশের কাজ চলছে। ভবনটির সামনের অংশের জানালার অনেক গ্লাসই এখনও ভাঙা। একটু এগোতেই ভবনের সামনের সেবাপ্রত্যাশীদের বসার স্থান ও বঙ্গবন্ধু কর্নার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সাক্ষ্য বহন করছে। দেয়ালে এখনও পোড়া চিহ্ন। এদিকে সেবাপ্রত্যাশীদের জরাজীর্ণ বসার স্থানে দুটি মোটরসাইকেল রাখা।

থানা ভবনে ঢুকতে প্রথমেই চোখে পড়ে কলেজ ড্রেস পরা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। কথা বলে জানা যায়, তারা সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। থানায় অভিযোগ নিয়ে এসে কোনো সমাধান পাননি। শিক্ষার্থীদের একজন মো. সামি সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের কলেজের পাশেই বিহারি ক্যাম্প। কলেজের সামনে রিকশা পার্কিং করে রাখে। এ ছাড়া ফুটপাথে রয়েছে দোকান। কলেজের সামনে ফুটপাথে দোকান ও রিকশা পার্কিংয়ের জায়গায় বিহারি ক্যাম্পের মাদকাসক্তরা এসে নিয়মিত মাদক সেবন করে। পাশাপাশি কলেজের মেয়েদের হেনস্থা করে। এ কারণে আমরা থানায়, কিন্তু সমাধান পাইনি।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা শেষ করে ডিউটি অফিসারের কক্ষে ঢোকার আগে দেখা যায়, দরজার পাশে পোড়া নোটিস বোর্ডটি এখনও পড়ে আছে। ভেতরে ঢুকতেই সেবাপ্রত্যাশী ১১ জনকে দেখা যায়। এদের মধ্যে ৫ জন দাঁড়িয়ে সেবা নিচ্ছেন। বাকিরা বসে আছেন। দুপুর ২টার দিকে থানার হাজতখানার পাশে জুনিয়র সেরেস্তাখানায় সবাইকে কর্মতৎপর দেখা যায়। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তিনজনকে সেখানে সেবা নিতে দেখা যায়। নিচতলার এই গলিতেই ওসি, দুই পরিদর্শক ও উপ-পরিদর্শকদের বসার কক্ষ। প্রায় প্রতিটি কক্ষেই পোড়া কালির দাগ। সে সময় প্রত্যেকে যার যার কক্ষে কাজ করছিলেন। ওসির কক্ষের সামনেই বৈদ্যুতিক তারগুলো পুড়ে কিছুটা ঝুলে আছে। এসআইদের বসার জায়গাটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এই কক্ষের মেরামতে কাজ চলছে।

দুপুর সোয়া ২টায় দোতলায় উঠতে উঠতে সিঁড়ি ও দেয়ালের পোড়া কালির ক্ষত দেখা যায়। দুজন শ্রমিক দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে গ্রিল বসানোর কাজ করছিলেন। তারা জানান, থানা ভবন ও থানার বাউন্ডারির ভেতরে দুটি আবাসিক ভবনে বিভিন্ন স্থানে গ্রিল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা সেগুলো ঠিক করছেন। আগুন মূলত নিচতলা ও দোতলায় দেওয়া হয়েছিল। নামাজের কক্ষের প্রতিটি জানালার গ্লাস ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। দোতলাতেও দেয়ালজুড়ে কালি লেগে আছে। দোতলার পুলিশ সদস্যদের থাকার একটি কক্ষ রয়েছে। এই কক্ষের ভেতরে এখনও ভাঙা চৌকি দেখা যায়। পুরো কক্ষে রয়েছে মাত্র একটি ফ্যান। এই কক্ষের পুলিশ সদস্যরা গরমে অমানবিক জীবনযাপন করছেন বলে জানা যায়।

দোতলায় মোহাম্মদপুর জোনের এসি মাসুদ রানার কক্ষে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা হয়। তার কক্ষে নতুন করে বসানো হয়েছে একটি এয়ার কন্ডিশন ও ফ্যান। এসি মাসুদ রানা সদ্য ঢাকার বাইরে থেকে এসে যোগদান করেছেন। সময়ের আলোকে তিনি বলেন, থানা সংস্কারে প্রয়োজন মতো অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

থানা ভবনের তিন তলা ও চার তলায় রয়েছে পুলিশ সদস্যদের থাকার মেস। এ ছাড়া তিন তলায় সিটি এসবির একটি কক্ষ রয়েছে। সেখানে এক কর্মকর্তা তার কাজ করছিলেন। দুপুর পৌনে ৩টার দিকে তিন ও চারতলার ব্যারাকে গিয়ে দেখা যায়, দুই পাশের বড় দুই কক্ষে পুলিশ সদস্যরা বিশ্রাম নিচ্ছেন। কেউ দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করছিলেন। এখনও ৫ আগস্টের ক্ষতচিহ্ন পুলিশ সদস্যদের থাকার কক্ষগুলোতে রয়েছে। এখানেও বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়। তারা অনেকে হতাশার কথাও শোনান। কথার ফাঁকে তারা জানান, এখনও বেশ কয়েকটি বিছানার ওপরে ফ্যান নেই। এ গরমে তারা কষ্টে জীবনযাপন করছেন। ব্যারাকগুলো ঘুরে এর সত্যতা পাওয়া যায়। তবে টাকার অভাবে এগুলো ঠিক করা হচ্ছে না বলে জানা যায়।

থানা লুটের সময় বেশ কয়েকটি সিএনজি ও মোটরসাইকেল লুটপাট করা হলেও সেগুলো এখনও থানায় জমা পড়েনি বলে জানা যায়। থানা পরিদর্শন শেষে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসানের কক্ষে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে কথা হয় তার সঙ্গে। প্রথমে থানায় প্রবেশ পথে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সময়ের আলোকে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল অবৈধ যানবাহন তাদের কলেজের সামনে রাখা হয়েছে। এটি আসলে ট্রাফিকের বিষয়। ট্রাফিক পুলিশ আমাদের সাহায্য চাইলে আমরা সেটি দেখব।’ শিক্ষার্থীদের মাদক ও ইভটিচিংয়ের বিষয়েও অভিযোগ ছিল। সেটির সমাধান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের বলেছি নির্দিষ্ট কারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে আমরা তাদের গ্রেফতার করে চালান দিয়ে দেব।’ থানার সংস্কার ও কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘থানায় হোয়াইওয়াশের কাজ চলছে। বাজেট কম তাই, যতটুকু পাচ্ছি তাই দিয়েই সংস্কারের কাজ করছি। থানায় যতটুকু যা আছে তাই দিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আস্তে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।’

বিকালে বের হয়ে আসার সময় দেখা যায়, ধীরে ধীরে থানায় সেবাপ্রত্যাশীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
অস্ত্র-গোলাবারুদের বেশিরভাগই উদ্ধার হয়নি : নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহাম্মদপুর থানার এক কর্মকর্তা সময়ের আলকে বলেন, থানায় সরকারি অস্ত্র ১৯০টির মধ্যে প্রায় ১০০টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। ৫৮০টির বেশি পাবলিকের (ব্যক্তি মালিকানা) অস্ত্র ছিল। এর মধ্যে ২০-২৫টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। থানায় জমা রাখা পাবলিকের এই অস্ত্রগুলোর মধ্যে পিস্তলের সংখ্যা বেশি। কিছু শটগানও ছিল। থানার সরকারি অস্ত্রের মধ্যে উদ্ধার না হওয়া অস্ত্রের মধ্যে বেশিরভাগই পিস্তল। থানা ও থানায় জমা রাখা পাবলিকের মোট গুলি ছিল ২০ হাজারের মতো। এগুলো উদ্ধার হয়নি।

সময়ের আলো/আরএস/ 




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close