ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রে লেবাননে হামলা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:৫৯ এএম  (ভিজিট : ২৫৮)
হাজার হাজার পেজার, ওয়াকিটকিসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিযন্ত্রে বিস্ফোরণের সপ্তাহ পার হতে না হতেই লেবাননে ব্যাপক আকারে বোমা হামলা শুরু করে ইসরাইল। সাম্প্রতিক এ হামলা লেবাননের স্মরণকালের সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। লেবাননে ২০০৬ সালের পর এটাই ইসরাইলের সবচেয়ে বড় আগ্রাসন। সবাই বলছে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী ১৩০০টি লক্ষ্যবস্তুতে বোমাবর্ষণ করেছে। আর সেসব বোমার আঘাতে ৯০ জনেরও বেশি নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ৫৬৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ২ হাজারের কাছাকাছি মানুষ। ইসরাইল বলেছে তারা হিজবুল্লাহর অস্ত্র সরবরাহকে লক্ষ্যবস্তু করেছে; কিন্তু লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানাচ্ছেন, বোমার আঘাতে হাসপাতাল, চিকিৎসাকেন্দ্র এবং অ্যাম্বুলেন্সেও প্রাণ যাচ্ছে মানুষের।

ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজা এবং পশ্চিম তীরে অভিযান চালাতে চালাতে লেবাননে হামলার মধ্য দিয়ে যুদ্ধের নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে দখলদার ইসরাইল। এ অবস্থায় মার্কিন নীতির সমালোচকরা সংঘাত বাড়তে থাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরাইলে অস্ত্র না পাঠাতে নতুন করে আহ্বান জানিয়েছে।
বৈরুতের মার্কিন দূতাবাসের মার্কিন নাগরিকদের লেবানন ছাড়া সংক্রান্ত এক টুইটের ক্যাপশনে রিপাবলিকান কনগ্রেসওম্যান রাশিদা তালিব লিখেছেন, লেবানন থেকে সব আমেরিকানদের সরিয়ে নেওয়ার চেয়ে ইসরাইলি সরকারকে অস্ত্রের জোগান না দেওয়া ঢের সহজ।ইসরাইলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার প্রতিশ্রুতি আদায় সংক্রান্ত এক আন্দোলনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস আলাউইহ বলেছেন, ইসরাইলি বোমায় লেবাননে আমার গ্রামেই এক বাড়িতে থাকা মা- মেয়ের নির্মম মৃত্যু হয়েছে। আশপাশের সব গ্রামেই একই রকম দৃশ্য দেখা গেছে। তিনি লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, আপনি যত বেশি অস্ত্র পাঠাবেন, তত বেশি বেসামরিক লোক নিহত হবেন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে আমরা দেখেছিলাম যে, গত মে মাসে গাজার রাফাহ শহরে হামলায় আগে বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলে ২০০০-পাউন্ড এবং ৫০০-পাউন্ড বোমা স্থানান্তর বন্ধ রাখে। কিন্তু একমাস পর জুলাইতেই ইসরাইলপন্থি লবি গ্রুপগুলোর চাপে ৫০০ পাউন্ড বোমার চালান পাঠাতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের দীর্ঘদিনের মিত্র ও সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী।

লেবাননে সাম্প্রতিক বোমা হামলায় ব্যবহৃত বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র কোথাকার তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে নিরাপত্তা নীতি সংস্কার ইনস্টিটিউটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিফেন সেমলার যিনি ইসরাইলে মার্কিন অস্ত্রের জোগান সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে কাজ করেন তার বিশ্বাস, লেবাননে হামলায় আমেরিকার তৈরি অস্ত্রশস্ত্রই ব্যবহৃত হয়েছে। 

দ্য ইন্টারসেপ্টকে সেমলার বলেন, লেবাননে বহু তথ্য-প্রমাণ মিলেছে যেখানে মার্কিন চিহ্ন দেখে অবাক হওয়ার কিছুই নেই এবং এমন প্রমাণ আরও মিলবে। যে ইসরাইল যুদ্ধাস্ত্রের জন্য ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল, তারা এমন এক হামলায় মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করবে না সেটি ভাবাই বরং আমার জন্য আশ্চর্যের হবে।

চলতি বছরে মার্কিন যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তালিকা সংকলন করতে গিয়ে সেমলার দেখেছেন, মার্চ মাসে দক্ষিণ লেবাননের হেব্বারিয়েহ গ্রামে ইসরাইল বোমা হামলা চালায়। হামলায় লেবানিজ সাকার অ্যাসোসিয়েশনের জরুরি সেবা ও ত্রাণকাজে ব্যবহৃত একটি ভবন বিধ্বস্ত হয়। ওই হামলায় ব্যবহৃত ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমাটি ইসরাইলের তৈরি হলেও, এর জয়েন্ট ডাইরেক্ট অ্যাটাক মিউনিশন গাইড কিট-একটি বোল্ট-অন প্রযুক্তি, যা বোমাগুলোকে তাদের লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করে তা ছিল আমেরিকার তৈরি। গত বছরের ১৬ অক্টোবর দক্ষিণ লেবাননের গ্রাম ধইরা-তে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী সাদা ফসফরাস ভর্তি ১৫৫ মিমি আর্টিলারি শেল নিক্ষেপ করে। হামলায় নয়জন বেসামরিক লোক নিহত এবং ব্যাপক বেসামরিক সম্পত্তির ক্ষতি হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং ওয়াশিংটন পোস্টের মতে, আর্টিলারি শেলের উৎপাদন সিরিয়াল নম্বরগুলোয় প্রমাণ দেয় যে, সেগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করা হয়েছিল।

সেমলার বলেন, বর্তমান সংকট গাজায় ইসরাইলের চলমান যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। সাধারণভাবে, ইসরাইল এখন যা করছে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া কখনই সম্ভব হবে না। মার্কিন কংগ্রেস তো এই বছরেই ইসরাইলকে ১৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা অনুমোদন করেছে।

তিনি আরও বলেন, বাইডেন প্রশাসন আমাদের শোনায় যে তারা গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করছে, কিন্তু তারা ঠিকই অস্ত্র পাঠানো অব্যাহত রেখেছে। তারা বলে আমরা এটি একটি বৃহত্তর সংঘাতে প্রসারিত করতে চাই না, কিন্তু একই সঙ্গে তারা দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে দিতে ইসরাইলে অস্ত্র পাঠাতে থাকে।
কেবল সেমলারই নন, আরও অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ইসরাইল যেখানেই যুদ্ধে জড়াক না কেন তাকে মার্কিন অস্ত্র নিয়েই ময়দানে নামতে হবে। সুতরাং এটা সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, গাজা-লেবাননে হামলায় মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার ইসরাইলের জন্য অপরিহার্য। তাই এখন দেখার বিষয়, এত গণহত্যা ও আগ্রাসনের পরও মার্কিন প্রশাসন ইসরাইলকে সামরিক সহায়তার প্রশ্নে কতখানি কঠোরতা অবলম্বন করতে পারে।


সময়ের আলো/আরএস/









https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close