ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

পদ্মায় পানি বৃদ্ধি
ভারতের পানিতে হঠাৎ বন্যা
চাঁপাইয়ে ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি, নাটোরে তলিয়ে গেছে চরাঞ্চল
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:১৬ এএম  (ভিজিট : ২৩২)
ভারত থেকে ধেয়ে আসা ঢলে পদ্মা, মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীতে বেড়েছে পানি। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ১ হাজার ৫৫৯ হেক্টর জমির ফসল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী ১০টি ইউনিয়নের ২ হাজার পরিবার হয়ে পড়েছে পানিবন্দি। বন্যাকবলিত নিম্নাঞ্চলের ইউনিয়নগুলো হচ্ছে-সদর উপজেলার আলাতুলি, নারায়ণপুর, শাহজাহানপুর ও চরবাগডাঙ্গা, শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর, পাকা, দুর্লভপুর, ঘোড়াপাখিয়া ও মনাকষা।

সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সাদ্দাম হোসেন বলেন, ১০ থেকে ১৫ দিন আগে ১২ বিঘা জমিতে মাষকলাই বীজ ছিটিয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার সব জমির মাসকালাই জলমগ্ন হয়ে গেছে। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর দারুল হোদা আলিম মাদরাসার শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশ করায় ছাত্রদের পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মালেক জানান, শিবগঞ্জ উপজেলায় পাকা ইউনিয়নের ২ হাজার ৫০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন জানান, হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের বিপুল পরিমাণ জমির মাসকালাই ডুবে গেছে। বেশি দামে মাসকালাই বীজ কিনে বপন করে তা ডুবে যাওয়ায় কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব  বলেন, উজানের ঢলে গত সপ্তাহ থেকে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ সেন্টিমিটার বেড়েছে পদ্মার পানি। পদ্মায় বিপদসীমা ধরা হয়েছে ২২ দশমিক ৫ মিটার। বর্তমানে পদ্মার পানি বিপদসীমার মাত্র ৮০ সেন্টিমিটার নিচ নিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে নদীর পানি কমতে শুরু করবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা, উজিরপুর, দুর্লভপুর ও সদর উপজেলার নারায়ণপুর, আলাতুলি, শাহাজাহানপুর, চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ১ হাজার ৫৫৯ হেক্টর মাসকালাই, রোপা আউশসহ সবজি ক্ষেত ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া মাসকালাইয়ের মধ্যে রয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলার ১ হাজার ২৫০ হেক্টর ও সদর উপজেলায় ২১২ হেক্টর। তিনি আরও জানান, দুটি উপজেলার প্রায় ৫ হাজার ৩১৫ জন কৃষকের মাসকালাই, আউশ ধান, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, চিনাবাদাম ও আখ ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর আল মনসুর শোয়াইব জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি সভায় বন্যা প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এরই মধ্যে বন্যা মোকাবিলায় যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

লালপুরে ফের তলিয়ে গেছে ফসলি জমি : এদিকে নাটোরের লালপুরে পদ্মায় দ্বিতীয় দফায় আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে চরাঞ্চলের প্রায় আটশ একর জমির আখ, মুলা, গাজর, বেগুন, কালাইসহ ৪৭৫ হেক্টর ফসল তলিয়ে গেছে।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী জানান, আগামী পাঁচ থেকে সাত দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি আরও জানান, বুধবার ঈশ্বরদী হার্ডিং ব্রিজ পয়েন্টে পানির লেভেল ১২ দশমিক ৩২ মিটার। সে অনুযায়ী বর্তমানে লালপুরে পদ্মার পানি বিপদসীমার দেড় মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বুধবার সরেজমিন পদ্মার চরাঞ্চলে দেখা যায়, গত দুদিন পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নওশারা সুলতানপুর, চাকলা বিনোদপুর, দিয়াড়শংকরপুর, আরাজি বাকনাই, রসুলপুর ও মোহরকয়া আংশিকসহ প্রায় ১৮টি চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

বিলমাড়িয়া গ্রামের মুনতাজ আলী জানান, তার তিন বিঘা জমিতে মুলা ও বেগুনের আবাদ তলিয়ে গেছে। আরাজি বাকনাই চরের কৃষক আলাল আলী জানান, তার মুলা, গাজর, বেগুনসহ সাড়ে ৪ বিঘা জমির ফসল ডুবে গেছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, লালপুরে এবার ৪১০ হেক্টর আখ, ৪৫ হেক্টর শাকসবজি, ১০ হেক্টর কলা ও ১০ হেক্টর মাসকালাই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে বন্যায় গোখাদ্য সংকটে বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলের গরু-মহিষ খামারিরা। ইলশামারী চরের খামারি আরিফ মণ্ডল বলেন, বন্যায় গরু-মহিষ নিয়ে চরম দুর্ভোগে আছি। কোথাও কোনো ঘাষ নেই, সব তলিয়ে গেছে।

বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য লাল মোহাম্মদ বলেন, গত দুদিন আকস্মিক বন্যায় আমার ওয়ার্ডের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমি। নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে প্রায় পাঁচশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে যাবে।

লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় জানান, নদীর পানি কমে যাওয়ায় কৃষকরা নতুন করে ফসল আবাদ করেছেন। হঠাৎ পানি বৃদ্ধি হওয়ায় এগুলো ডুবে গেছে। পানি কমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দিয়েছি সার্বিক খোঁজখবর রাখার জন্য এবং চর এলাকায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সময়ের আলো/আরএস/





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close