ইসলামের প্রধানতম ইবাদত নামাজ। নামাজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে। সৃষ্টিকর্তা ও মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়। এমনকি এই নামাজে আল্লাহ বান্দাদের জন্য রেখেছেন অগণিত কল্যাণ ও উপকারিতা। নামাজ আদায়কারীর জন্য আল্লাহ ঘোষণা করেছেন অকল্পনীয় পুরস্কার। তাই মুমিন বান্দা কখনো নামাজে অলসতা করে না।
নামাজের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন বান্দার কাছ থেকে সর্বাগ্রে যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে, তা হলো নামাজ। সুতরাং নামাজ সঠিক হয়ে থাকলে তার অন্যান্য আমলও সঠিক বলে বিবেচিত হবে। অন্যথায় অন্য সব আমল নিষ্ফল ও ব্যর্থ হবে।’ (তিরমিজি : ৪১৩)
আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এই উম্মতের জন্য সবচেয়ে বড় দান দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্বপূর্ণ নামাজ হলো জোহরের নামাজ। এমনকি হযরত জিবরাঈল (আ.)-এর ইমামতিতে রাসুল (সা.) সর্বপ্রথম যে নামাজ আদায় করেছেন, তা হলো জোহরের নামাজ। অর্থাৎ মেরাজ থেকে ফিরে রাসুল (সা.) সর্বপ্রথম জোহরের নামাজ আদায় করেছেন।
যেমন হাদিস শরিফে এসেছে, হযরত আবু বারযা আসলামি (রা.)-কে রাসুল (সা.)-এর নামাজের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাসুল (সা.) জোহরের নামাজ-যাকে তোমরা প্রথম নামাজ বলে থাক, সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন’ (বুখারি : ৫৪৭)। এ হাদিস থেকে জোহরের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলতের বিষয়টি অনুধাবন করা যায়। অন্যত্র নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন গরম বেড়ে যায় তখন তোমরা তা কমে এলে জোহরের নামাজ আদায় করো। কেননা গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপের অংশ’ (বুখারি : ৫৩৬)। হাদিসের বর্ণনায় এই নামাজে কষ্টের বিবরণ রয়েছে। যেহেতু এই নামাজের সঙ্গে কষ্টের সম্পর্ক রয়েছে সুতরাং তা আদায়ে নেকির পরিমাণও আল্লাহ বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেবেন। এমনকি আল্লাহ কুরআনে বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে কষ্টের সঙ্গে স্বস্তিও থাকে।’ (সুরা ইনশিরাহ : ৫)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ মুমিনদের কর্মফল নষ্ট করেন না।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৭১)
জোহরের ফরজ নামাজের পাশাপাশি জোহরের সুন্নত নামাজেরও যথেষ্ট গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। সুন্নত নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। নামাজ পুরোপুরি আদায় করে থাকলে তো ভালো কথা, অন্যথায় আল্লাহ বলবেন, দেখ, আমার বান্দার কোনো নফল নামাজ আছে কি না? নফল নামাজ থাকলে বলবেন, এই নফল নামাজ দ্বারা ফরজ নামাজ পূর্ণ করে দাও’ (নাসায়ি : ৪৬৭)।
জোহর নামাজের পূর্ববর্তী সুন্নত নামাজ সম্পর্কে আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কখনোই জোহরের পূর্বের চার রাকাত সুন্নত ছাড়তেন না’ (বুখারি : ১১৮২)। ফরজ নামাজের আগে-পরের সুন্নত নামাজগুলো আদায় করাকে হাদিস শরিফে জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম বলা হয়েছে। রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি জোহরের ফরজের আগের চার রাকাত ও পরের দুই রাকাত সুন্নত আদায় করে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হয়’ (তিরমিজি : ৬৩৬২)। অন্য এক হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত জোহরের নামাজের পূর্বে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত (দুই রাকাত সুন্নত এবং দুই রাকাত মুস্তাহাব) আদায় করবে আল্লাহ তায়ালা তার ওপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন’ (তিরমিজি : ৪২৯)।
মধ্য দুপুরে সূর্য যখন মধ্য আকাশ থেকে একটু পশ্চিম দিকে হেলে যায় তখন জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং যেকোনো জিনিসের মূল ছায়া ব্যতীত তার ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত জোহরের ওয়াক্ত থাকে। জুমা আর জোহরের নামাজের ওয়াক্ত এক ও অভিন্ন (আল বাহরুর রায়েক : ১/৪২৩)। উল্লেখ্য, ঠিক ভর-দুপুরে প্রত্যেক জিনিসের ছায়া যে পরিমাণ থাকে তাকে ওই জিনিসের মূল ছায়া বলা হয়।
কোনো ইমামের মতে, মূল ছায়া ছাড়া প্রত্যেক জিনিসের ছায়া যখন একগুণ হয়ে যায় তখনই জোহরের সময় হয়ে যায়। হানাফি মাজহাবের ফতোয়া এমন নয়। তাই একান্ত অপারগতা ছাড়া এই মতের ওপর আমল করা সমীচীন নয়। শীতকালে যত তাড়াতাড়ি জোহরের নামাজ পড়া যায় তত ভালো। গরমের দিন এক মিসিলের (ছায়ার পরিমাণ) শেষ চতুর্থাংশে পড়া ভালো। তবে জুমার নামাজ সব মৌসুমে আউয়াল ওয়াক্তে পড়া উত্তম (আল বাহরুর রায়েক : ১/৪২৯)। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে গুরুত্বের সঙ্গে নামাজগুলো আদায় করার তওফিক দান করুন।
সময়ের আলো/আরএস/