ময়মনসিংহের ত্রিশালে একটি পেট্রোল পাম্পের মালিকানা নিয়ে ২ ভাইয়ের মধ্যে তুমুল বিরোধ দেখা দিয়েছে। পেট্রোল পাম্পটি অত্যন্ত লাভজনক হাওয়ায় ছোট ভাই সোহেল রানা বড় ভাই আব্দুল মান্নানের অংশের মালিকানা না দিয়ে উল্টো বড় ভাইকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। সোহেল রানা ত্রিশালে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে পাম্পটির পুরো মালিকানা দখলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ত্রিশাল উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বাগান এলাকায় যৌথ মালিকানায় মেসার্স মোজাদ্দেদীয়া ফিলিং স্টেশন প্রতিষ্ঠা করেন প্রয়াত সিদ্দিকুর রহমানের ২ ছেলে আব্দুল মান্নান ও সোহেল রানা। ২০১১ সালে ১৯ শতাংশ জমির উপর পাম্পটি স্থাপন করার পর সোহেল রানা ৬০ ভাগ ও আব্দুল মান্নান ৪০ ভাগ মালিকানায় চুক্তিপত্র হয়।
২০১৭ সাল পর্যন্ত লভ্যাংশ বণ্টন হলেও পাম্পটি সারা বাংলাদেশের মধ্যে সেরা হওয়ার ২০১৭ সালের পর থেকে সোহেল রানা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রভাব খাটিয়ে নকল দলিল তৈরি করে পাম্পটির একক মালিকানা দাবি করে এবং বড় ভাই আব্দুল মান্নানকে পাম্প থেকে বের করে দেয়।
সামাজিকভাবে একাধিক বার মীমাংসা করার চেষ্টা করা হলেও সোহেল রানা কোনভাবেই বসতে রাজি হয়নি বরং উল্টো হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী আব্দুল মান্নান ত্রিশাল থানায় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিলেও কোন সুরাহা পাননি।
অন্যদিকে সোহেল রানা একক মালিকানায় পাম্পটির লভ্যাংশ দিয়ে একের পর এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণ করেছেন। পেট্রোল পাম্প থেকে মাছের খামার, ইটভাটা, পৌর এলাকায় কোটি কোটি টাকার সম্পদ, বিলাসবহুল ব্যক্তিগত গাড়ি, ত্রিশাল পৌর শহরের শপিং মল করার জন্য সাড়ে চার কোটি টাকার জায়গা, ময়মনসিংহ শহরে একাধিক জমিও কিনেছেন বলে কথিত আছে।
আরও জানা যায়, সোহেল রানা আওয়ামী লীগের দোসর ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের ডোনার হিসেবে পরিচিত।
অভিযোগকারী আব্দুল মান্নান জানান, আমার ছোট ভাই সোহেল রানার সাথে পার্টনারশিপ ব্যবসার পূর্বে তার অর্থ-সম্পদ বলতে তেমন কিছুই ছিলনা, সে আমার একক মালিকানাধীন মান্নান ফিলিং স্টেশন থেকে ৫/১০ ড্রাম তেল বাকিতে নিয়ে বিক্রি করতো। আমি নিজেই তাকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত করতে মোজাদ্দেদীয়া ফিলিং স্টেশনে অর্থ ইনভেষ্ট করি। সে যখন দেখলো এই ফিলিং স্টেশন থেকে অনেক টাকা লাভ আসছে তখন সে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের নিয়ে ফিলিং স্টেশন দখল নেয়। আমি আমার অংশ ফেরত পেতে অনেক জায়গায় গেলেও সে টাকার বিনিময়ে তাদের মুখ বন্ধ করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, এ পাম্পটি নিয়ে ২০১১ সালে অক্টোবর মাসের ১৯ তারিখ চুক্তি হয়। কিন্তু সে ঐ মাসেরই ২৫ তারিখ আমার স্বাক্ষর নকল করে ভুয়া আরেকটি চুক্তিনামা করে ফিলিং স্টেশন দখলে নেয়। আমার কাছে আসল চুক্তি নামা থাকা স্বত্বেও প্রতিকার পাচ্ছিনা।
এ বিষয়ে সোহেল রানার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ফিলিং স্টেশনের মালিকানা আমার একক। বড় ভাইয়ের সাথে চুক্তি হলেও সে পরবর্তীতে আমাকে লিখে দেয়। আপনার ভায়ের কাছে ২০১১ সালে অক্টোবর মাসের ১৯ তারিখের যৌথ মালিকানার চুক্তি রয়েছে। আপনার ২৫ তারিখের চুক্তি বানানো এমন প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি বলেন, ১৯ তারিখের পর ২৫ তারিখ আরেকটি চুক্তি হয়। সে চুক্তিতে বড় ভাই আমাকে একক তার ৪০ শতাংশ লিখে দেয়। ২৫ তারিখের অরিজিনাল চুক্তি দেখাতে পারবেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি চুক্তিপত্র দেখাতে রাজি নন।
ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুয়েল আহমেদ বলেন, এই বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ করা হলে আমি তাদের দুপক্ষকে শুনানির জন্য ডাকি। পরে তাদের দুপক্ষকে আদালতের শরণাপন্ন হতে বলছি।
সময়ের আলো/আরআই