ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

মানবিক কাজে মন জামায়াতের
প্রকাশ: সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:৩৮ এএম  (ভিজিট : ৩৪০)
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর রাজনীতির মাঠে রয়েসয়ে এগোতে চায় জামায়াতে ইসলামী। তাদের মূল লক্ষ্য নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি করা। সে জন্য এখন থেকে সারা দেশে মাঠে সরব হয়েছে জামায়াত। মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমত তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে দলটি। জনমত ও সুবিধাজনক পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচনে একক বা জোটের সিদ্ধান্ত নেবে জামায়াত।

জামায়াত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়গুলো ওঠে এসেছে। তারা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য জামায়াত যৌক্তিক সময় দিতে চায়। তাড়াহুড়ো করে নির্বাচন করলে আমূলে পরিবর্তন আসবে না। নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে সংস্কার। সংস্কার ব্যতিরেকে নির্বাচন করলে ফ্যাসিবাদী ভাবনা জিইয়ে থাকবে। সংস্কার চলাকালীন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে জামায়াত। ইতিমধ্যে সংস্কার কমিশন গঠনকে স্বাগত জানানো হয়েছে। নির্বাচনে গিয়ে আগের সব রেকর্ড ভাঙতে  চান তারা। ৩০০ আসনেই নির্বাচন করার পরিকল্পনা আছে দলটির। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামায়াত দায়িত্বশীল নেতারা কারও সঙ্গে বিরোধে যেতে চাচ্ছেন না। নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন ছাত্র সমন্বয়কদের সঙ্গে কোনো বিবাদে না জড়াতে। তাদের মূল ফোকাস থাকবে মানবিক কাজ ও সংগঠনকে গতিশীল করা। এ লক্ষ্যে দলটি প্রতিদিন নানা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার দুই মহানগরকে শক্তিশালী করতে গত কয়েক দিন ধরে রুকন সমাবেশ, থানা ইউনিটের দায়িত্বশীল সম্মেলন, কর্মী সমাবেশ, সুধীজনের মতবিনিময় সভাসহ নানা সাংগঠনিক কাজ চলমান আছে।

এ প্রসঙ্গে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম সময়ের আলোকে বলেন, নির্বাচনে সবাই তো ভালো ফল করতে চায়। যে উপায়ে নির্বাচনে অংশ নিলে ভালো ফল অর্জন করা যাবে; জামায়াত সেভাবেই এগোবে। এটা তো খুবই স্বাভাবিক। আমরা এখনও ঠিক করিনি এককভাবে নির্বাচন করব নাকি জোটগতভাবে অংশ নেব। আগে জনমত তৈরির চেষ্টা করছি। পরিস্থিতি আমাদের করণীয় ঠিক করে দেবে। এজন্য আমরা সব দলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছি। অবস্থার আলোকে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন হলে যাতে বিষয়টি সহজ হয়। বিএনপি, ১২ দলীয় জোট, ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা সবার সঙ্গে আমাদের সখ্য রয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াত জোটে নেই, এটা বিএনপি বলেছে আমরা বলিনি। আমরা কারও সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক চাই না। কেউ যদি আমাদের কথা না বুঝে অপবাদ দেয়; তা হলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা চাচ্ছি প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন হোক। নির্বাচন ও সংস্কার উভয়ই জরুরি।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সম্প্রতি সময়ের আলোকে জানান, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত। তবে এর আগে দেশের স্থিতিশীলতা, আইনশৃঙ্খলার উন্নতিসহ জরুরি কিছু সংস্কার দরকার। আর বিএনপির সঙ্গে আমাদের আগের মতোই সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় আছে।

জামায়াতের ঢাকা মহানগরের দায়িত্বশীল নেতারা জানান, তারা এক ধরনের কৌশলী অবস্থানে থেকে দলকে সুসংগঠিতের কাজ করছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। দায়িত্বশীল নেতারা সারা দেশে চষে বেড়াচ্ছেন। সাধারণ মানুষের মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করছেন। জনসমর্থন বাড়াতে জনসম্পৃক্ত কাজের বিকল্প নেই। জামায়াত নিয়ে ইতিমধ্যে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। জামায়াত এটি আরও বাড়াতে চায় ভালো কাজ দিয়ে। শীর্ষ নেতারা হিংসাত্মক ভাষা পরিহার করে সংগঠনের কাজে মনোনিবেশের কথা বলেছেন।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ সময়ের আলোকে বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বলেছি। যতদূর সম্ভব প্রশাসন, আদালত, নির্বাচন কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্বিন্যাস করতে হবে। এ সময়টুকু তাদের দিতে হবে। এগুলোতে এখনও ফ্যাসিবাদী লোকজন বসে আছে। তাদের না সরিয়ে নির্বাচন দিলে নিরপেক্ষ হবে না।
ঢাকা দক্ষিণ জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আশরাফুল আলম সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের দলের কাজ সবসময় চলমান। আগেও ছিল। এখন পরিসরটা বেশি। সবাই দেখতে পাচ্ছে। আমরা এতদিন সরকার ও প্রশাসনের বাধায় দলকে ফোকাস করতে পারিনি। এখন সময় এসেছে দলের কার্যক্রম সবার সামনে তুলে ধরার। নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের প্রস্তুতি সবসময় আছে। আমরা ২০২৪ সালের নির্বাচনে ৩০০ আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। ১৫০ আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকাও তৈরি করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়েছে একতরফা।

জামায়াতে ইসলামীর উত্তরের এক নেতা বলেন, সাধারণ মানুষের চাওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে জামায়াত। কোনো দখলদারি সমর্থন করে না। আমরা এখন ত্রাণ কার্যক্রম ও আন্দোলনে শহিদ পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছি। সাংগঠনিক ও দাওয়াতি কাজে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। সরকারকে সময় দিতে হবে। কারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের পর্যাপ্ত সময় দরকার। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে জোট করা না করার বিষয়টি নির্বাচনের আগে সামনে আসবে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। দুয়েকটি বক্তব্যে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় না।

১৯৯৯ সাল থেকে জোটবদ্ধ বিএনপি ও জামায়াতের জোট ২০২২ সালে ভেঙে যায় বলে সে বছরের অক্টোবরে একটি রুকন সম্মেলনে প্রকাশ করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। পরে ৯ ডিসেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বীকার করেন, তারা ২০ দলীয় জোট ভেঙে দিয়েছেন। তবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে যোগাযোগ সবসময়ই ছিল, যুগপৎ কর্মসূচিও দিয়েছে দুই দল।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close