ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ছড়াচ্ছে গুজব, থমকে গেছে অর্থনীতি
প্রকাশ: সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩:১৬ এএম আপডেট: ২৩.০৯.২০২৪ ৮:০৫ এএম  (ভিজিট : ৩৫৭)
রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের জেরে জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনার দুই দিন পর গতকাল রোববার বেলা ১১টায় ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হয়েছে। ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে নিয়োগ করা হয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট। এদিকে ঘটনার পর থেকেই গুজব ছড়াতে শুরু করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে থমকে গেছে কাঠ ও মাছনির্ভর পাহাড়ের অর্থনীতি। 

১৪৪ ধারা প্রত্যাহার : পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের জেরে গত শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে পৌরসভায় ১৪৪ ধারা জারি করেছিল জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মোহামদ মোশারফ হোসেন খান রোববার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বেলা ১১টা থেকে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি আগের চেয়ে স্বাভাবিক। ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়ার মাইকিং করা হবে। ধীরে ধীরে দোকানপাট খুলে যাবে।’ তবে ঘটনার প্রতিবাদে ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ চলায় জেলা শহরে যান চলাচল বন্ধ ছিল। 

খাগড়াছড়ির দিঘীনালায় সংঘটিত সংঘর্ষ -ভাঙচুর ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের প্রতিবাদকারী পাহাড়িদের সঙ্গে শুক্রবার বাঙালিদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাধে। শহরের বনরূপা বাজারে  সৃষ্ট দাঙ্গায় অনীক চাকমা নামের ১ জন পাহাড়ি শিক্ষার্থী নিহত ও নারী-শিশুসহ ৫৯ জন  আহত হয়। এ সময় দুর্বৃত্তরা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ প্রধান কার্যালয়, সীমান্ত ব্যাংক, সেভরন ল্যাব, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি-দোকানপাট পুড়িয়ে দেয় এবং ভাঙচুর, লুটপাট চালায়। দুর্বৃত্তদের আক্রমণ থেকে মৈত্রী বিহার ও মসজিদও বাদ যায়নি।

ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ : রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশাররফ হোসেন খান ও পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেনের নেতৃত্বে বিশেষ টিম ধ্বংসস্তূপ ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ি-বাঙালি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, লুটপাট ও জ্বালাও-পোড়াও পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়। তার নেতৃত্বে বিশেষ টিম দুপুর থেকে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। 

রোববার ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার হলেও ভীতি কাটিয়ে লোকজন এখনও বের হচ্ছে না। অবিশ্বাসের বিষবাষ্প ছড়িয়েছে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে। পাহাড়িরা যেমন বাঙালি এলাকা এড়িয়ে চলছে, তেমনি বাঙালিরাও পাহাড়ি এলাকার কাছাকাছি ঘেঁষছেন না।  বনরূপা ও রাজবাড়ি এলাকায় দোকানপাট বন্ধ থাকায় নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। রোববার কয়েকটি দোকান খুললেও ক্রেতা উপস্থিতি ছিল না বলা চলে। বনরূপা আলিফ মার্কেটে অস্থায়ী কাঁচাবাজার চালু হয়েছে। তবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ও ইউপিডিএফের ৭২ ঘণ্টার অবরোধে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল। এ কারণে শহরে পণ্য সরবরাহ কমে গেছে। চাহিদার তুলনায় মালামালের পরিমাণ খুবই অপ্রতুল। দূরপাল্লার কোনো যানবাহনও চলছে না। পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটির প্রধান বাহন সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।  

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রোববার বিকাল ৩টায় প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে এক সম্প্রীতি সভা হয়। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশাররফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্প্রীতি সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতাগণ, মিডিয়াকর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। 

ছড়াচ্ছে গুজব, অর্থনীতি স্থবির : সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও জ্বালাও-পোড়াওয়ে রাঙামাটির পাহাড়ি-বাঙালির আস্থার সংকট চরমে পৌঁছেছে। এই অবস্থায় এক শ্রেণির মানুষ ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ইনিয়েবিনিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। শান্তির জনপদ রাঙামাটি শহরকে অশান্ত করতে শনিবার রাত ও রোববারও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে গুজব ছড়ানো হয়।  শহরের বিভিন্ন পাড়ায় বিশেষ কিছু লোকজন পাহাড়িরা হামলা করতে আসছে বলে বাঙালিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। একই কায়দায় পাহাড়ির পাড়া বা গ্রামে বাঙালিরা হামলা করার জন্য আসছে এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। শনিবার রাতে লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঠেকাতে রাত জেগে ছিল পাহারা।

এদিকে ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ হাটবাজারে যাওয়া-আসা করছে না। পণ্যের জোগান কমতি, শ্রমজীবী মানুষের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে আর্থিক দুর্ভোগে পড়েছে। এদিকে সোনালী, কৃষি ও ইসলামী ব্যাংক খোলা থাকলেও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে লেনদেন হয়নি। টাকা তুলতে না পেরে গ্রাহকরা ফিরে গেছে। কর্মসংস্থান ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংকসহ অনেকগুলো ব্যাংক-বীমা অফিস বন্ধ ছিল। জেলা প্রশাসনে সম্প্রীতি সভার জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকলেও  সরকারি-বেসরকারি দফতরগুলোতে  উপস্থিতি ছিল খুবই নগণ্য। শহরের স্কুল-কলেজসহ  সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। 

রোববার বিকালে সরেজমিন দেখা গেছে, শহরের ব্যস্ততম বনরূপা বাজার, রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি বাজার, কলেজগেট বাজার ও ভেদভেদী বাজারের ব্যবসায়ীরা ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়ায় আবারও  দোকানপাট খুলতে শুরু করেছেন।  কাঁচাবাজার ও মৎস্য মার্কেটে পসরা সাজাতে ব্যস্ত দোকানিরা। কিন্তু তেমন কোনো ক্রেতা নেই। আতঙ্কিত লোকজন ঘর থেকে বের হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ জানান। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে পাহাড়ের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কাঠ ও মাছ আহরণ ও ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। 

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close