ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

থমথমে পাহাড়ে কাটেনি আতঙ্ক
প্রকাশ: রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:০৬ এএম আপডেট: ২২.০৯.২০২৪ ৭:৫৫ এএম  (ভিজিট : ২০১)
পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের ঘটনায় গতকালও থমথমে অবস্থা বিরাজ করে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে। এদিন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও চারদিকে ছিল সুনশান নীরবতা, চাপা উত্তেজনা ও উদ্বেক-উৎকণ্ঠা। থমথমে ছিল পরিবেশ। পোড়া ঘরবাড়ি ও স্থাপনা জানান দিচ্ছিল সহিংসতার ভয়াবহতা। চলেনি যানবাহন, বন্ধ ছিল দোকানপাট। বসেনি হাটবাজারও। জরুরি প্রয়োজনে দুয়েকজন ঘর থেকে বের হলেও রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। তবে কিছুটা স্বাভাবিক ছিল অন্য পার্বত্য জেলা বান্দরবান।

শনিবার রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পরিদর্শনে আসেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন-স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল হাফিজ (অব.) উপস্থিত ছিলেন। তারা একাধিক মতবিনিময় সভায় প্রশাসনকে সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। অঙ্গীকার করেছেন দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির।

এদিকে পাহাড়িদের ওপর হামালার অভিযোগে তিন পার্বত্য জেলায় সকাল ৬টা থেকে ‘সিএইচটি ব্লকেড’ নামে সড়ক ও নৌপথ অবরোধ চলেছে। গত শুক্রবার ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে ৭২ ঘণ্টার এই অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। এতে সাজেকে আটকে পড়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ পর্যটক।
রাঙামাটি : সরেজমিন বনরূপা ও রাজবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা মিলেছে ভুতুড়ে পরিবেশের। বনরূপা, রাজবাড়ী যেন ধ্বংসস্তূপ। কোলাহলপূর্ণ জেলা সদরের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র বনরূপা বাজারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন পণ্য। লুটপাট ও ভাঙচুরের সাক্ষ্য দিচ্ছে স্পষ্ট। চারদিকে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ প্রধান কার্যালয়, সীমান্ত ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক, সেভরন ল্যাব, বাণিজ্যিক ভবন, অফিস ভবন ও দোকানপাট পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পাশাপাশি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটিয়েছে। দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে প্রান্তিক শাকসবজি বিক্রেতারাও রেহাই পায়নি। বনরূপা বাজারের গলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে শাকসবজিসহ বিভিন্ন পণ্য। দুর্বৃত্তদের আক্রমণ থেকে বাদ যায়নি বৌদ্ধবিহার ও মসজিদ। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ওপর সারি সারি পোড়া যানবাহন পড়ে রয়েছে। ভবনের ভাঙা কাচের জন্য রাস্তায় হাঁটা দায় হয়ে পড়েছে। এদিকে গতকালও দিনভর বলবৎ ছিল ১৪৪ ধারা।

খাগড়াছড়ি : অবরোধের প্রথম দিন খাগড়াছড়িতেও চলেনি যানবাহন। দিনভর ভোগান্তি ছিল দূরপাল্লার যাত্রীদের। তবে গতকাল জেলাটিতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে প্রশাসন। সংঘর্ষে নিহত চারজনের তিনজনই ছিল এই জেলার বাসিন্দা। ফলে গতকালও সেখানকার পরিবেশ বেশ গুমোট।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যারা মারা গেছে তাদের একজনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়েছে গতকাল। এই ঘটনার প্রতিবাদে সেখানে শোকসভা হয়েছে এবং ছাত্রসমাজ বিচার দাবি করেছে।

খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করছি। শান্তির জন্য পক্ষপাতমুক্ত থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে সবার কাজ করা উচিত বলে যোগ করেন এ কর্মকর্তা।

বান্দরবান : পার্বত্য এলাকার অন্য দুই জেলার তুলনায় বান্দরবানের পরিস্থিতি ছিল বেশ স্বাভাবিক। অবরোধের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। সকাল থেকে বান্দরবান, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকাসহ বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। বান্দরবান থেকে ছেড়ে গেছে দূরপাল্লার সব বাস। এ ছাড়াও বান্দরবানের অভ্যন্তরীণ সড়ক যেমন-রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি সড়কেও যথাসময়ে বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকে। তবে বান্দরবান থেকে রাঙামাটির উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এ ছাড়া অন্যদিনের মতো সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা এবং জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছিল। 

বান্দরবান পূর্বাণী চেয়ারকোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দাশ ঝন্টু জানান, পাহাড়ে ডাকা অবরোধের প্রভাব বান্দরবানে নেই বললেই চলে। সকাল থেকে বান্দরবানের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বাসগুলো চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। 

বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী বলেন, বান্দরবানে এখনও কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেনি। অপ্রীতিকর যেকোনো ধরনের ঘটনা এড়াতে জেলা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন রয়েছেন।

এদিকে গতকাল অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বান্দরবানে পাহাড়ি-বাঙালি নেতাদের সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসকের শান্তি আলোচনা হয়। জেলা প্রশাসক বান্দরবানের শান্তি সম্প্রীতি রক্ষা ও অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে যেকোনো ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। 

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলা এড়াতে একটি কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং পাহাড়ি-বাঙালি উভয়ই পক্ষের প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করা হয়েছে। সভায় পাহাড়ি-বাঙালিদের প্রতিনিধিরা সম্প্রীতি বজার রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close