ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

রাজশাহীতেও ডেঙ্গুর বাড়াবাড়ি
হাসপাতালে বাড়ছে রোগী, রাসিকের কাজে অসন্তোষ
প্রকাশ: রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:১৭ এএম আপডেট: ২২.০৯.২০২৪ ৭:৫৯ এএম  (ভিজিট : ১৫৯)
রাজধানী ঢাকার মতো রাজশাহীতেও চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে হঠাৎ করেই বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। যদিও বিগত বছরগুলোতে বর্ষা মৌসুসেই দেখা যেত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। কিন্তু বর্তমানে ডেঙ্গুর এখন আর কোনো সময় বা মৌসুম নেই। যেকোনো সময় মহামারি আকার ধারণ করছে। এদিকে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে রাসিকের কার্যকরী ভূমিকা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কার্যত ডেঙ্গুর এই ভয়াবহ পরিস্থিতে রাসিক একপ্রকার হাত গুটিয়ে বসে আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

স্বৈরাচার হাসিনার আমলে গত বছরও ডেঙ্গুতে ভয়ানক সময় পার করেছে রাজশাহীর মানুষ। ওই বছরেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিল ৫ হাজার ৪৩১ জন রোগী। এদের মধ্যে রাজশাহী জেলার আক্রান্ত ছিল ৪ হাজার ১৯৮ জন। ডেঙ্গুর হটস্পট হয়ে উঠেছিল বাঘা ও চারঘাট উপজেলা। এবারও চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। 

২০২৩ সালের জুলাইয়ে রাজশাহী নগরীর ৫টি স্থানে এডিস মশার লার্ভা পেয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরপর নড়েচড়ে বসে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নখ্যাত রাজশাহী নগরীতেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সারা দেশের মতো বেড়ে গিয়েছিল। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মৃত্যুর ঘটনাও ছিল নিত্যনৈমত্তিক। তবে বর্ষার শুরু থেকে এবারও কার্যক্রম চালাতে দেখা যায়নি রাসিককে। আর ৫ আগস্টের পর থেকে রাসিকের পরিচ্ছন্নতা অভিযানও বন্ধ হয়ে গেছে। 

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে মোট ৫২৯ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে এই হাসপাতালে। এদের মধ্যে ৫২৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। মারা গেছে ৬ জন। এরপর ২০২৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৩১ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এরপর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে আবার রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। যে রোগীরা ভর্তি হচ্ছে তারা ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরে এসে চিকিৎসা নিচ্ছে।

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ করেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে ভিন্ন ভিন্ন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে রোগীর চাপ বাড়লে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড করা হবে। চলতি ডেঙ্গু মৌসুমে রামেক হাসপাতালে মোট ১৫২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১৩৮ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ১৪ জন চিকিৎসাধীন। তবে এই মৌসুমে হাসপাতালটিতে ডেঙ্গুতে কেউ মারা না গেলেও আইসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছে দুজন। চিকিৎসাধীন রোগীর মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে। 

এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় রাসিকের কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে জনসাধারণের মনে বিরাজ করছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। বিগত সরকারের শাসন আমল তো বটেই, ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পরও ডেঙ্গু প্রতিরোধে রাসিকের কার্যকরী ভূমিকা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গুর এই ভয়াবহ পরিস্থিতে রাসিক হাত গুটিয়ে বসে আছে বলে অভিযোগ করছেন নগরবাসী।

যদিও রাসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গু নিয়ে সতর্কতামূলক বার্তা দিয়ে আসছে তারা। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের স্কুল, কলেজ ও পাড়া-মহল্লার জনসাধারণের মাঝে প্রায় ২ লাখ সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রোধে চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সচেতনতা তৈরিতে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে স্কুল পর্যায়ে ওরিয়েন্টশন কার্যক্রম পরিচালনার কথাও রয়েছে।

এ ছাড়া প্রতি মাসে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে সিটি পর্যায়ে গঠিত ডেঙ্গু ও মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ কমিটি সামগ্রিক কাজের অগ্রগতি ও প্রতিবেদন তৈরি করে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের মাধ্যমে হালনাগাদও হয়ে থাকে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের অব্যাহত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের তত্ত্বাবধানে মসজিদগুলো ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রোধে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর ৩ মাসব্যাপী মাইকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মসজিদে খুতবার সময় ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতামূলক নানা বার্তা মসজিদের ঈমামের মাধ্যমেও দিয়ে আসছে সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া ডেঙ্গুর চিকিৎসাসেবা সচল রাখতে সিটি করপোরেশনের ৪০ জন স্বাস্থ্য সহকারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা সিটি এলাকার বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন বলেন, ডেঙ্গুর এখন আর কোনো সময় বা মৌসুম নেই। যেকোনো সময় মহামারি আকার ধারণ করতেই পারে। সেজন্য রাসিক সারা বছরই সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে শুরু করে বিনামূল্যে ডেঙ্গু চিকিৎসাসহ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নানা কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কাজ করছেন। তাদের তদারকির জন্য সুপারভাইজর আছে। এখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে।  

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম এ শামীম আহমেদ বলেন, গত মৌসুমে হাসপাতালে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিল। তাদের জন্য তখন আলাদা ওয়ার্ড করা হয়েছিল। এবার বর্ষা শুরুর আগে থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। সবাই যদি সচেতন হয় তা হলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close