ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

গাইবান্ধা পৌর শহরের গলার কাঁটা জমে থাকা বর্জ্য
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:৪০ এএম  (ভিজিট : ৩৬৮)
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর স্থানীয়দের বিক্ষোভ ও প্রতিরোধের মুখে গাইবান্ধা পৌরসভার বর্জ্য ফেলার নির্ধারিত জায়গা ডাম্পিং স্টেশনে বর্জ্য ফেলা বন্ধ রয়েছে। এর ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিপাকে পড়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে পৌর এলাকায় বর্জ্য ফেলার পর্যাপ্ত আস্তাকুঁড় (ডাস্টবিন) না থাকায় বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় যত্রতত্র বর্জ্য ফেলছেন বাসিন্দারা। ফলে রাস্তায় রাস্তায় বাড়ছে বর্জ্যরে স্তূপ। ডাস্টবিনগুলো উপচে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে আবর্জনা। এতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব, বাড়ছে জনদুর্ভোগ। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনায় গোটা পৌর এলাকা যেন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনের প্রায় ২২ টন বর্জ্য এখন পৌরসভার ‘গলার কাঁটায়’ পরিণত হয়েছে। 

এ বিষয়ে গাইবান্ধা পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. শরিফুল আলম বলেন, আগে যেখানে ময়লা ফেলা হতো এখন সেখানে ময়লা ফেলতে দিচ্ছেন না স্থানীয়রা। সে কারণে আমরা ওয়ার্ডের ময়লা আপাতত সেই ওয়ার্ডেরই কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা যায় কি না তা বিবেচনা করছি। আর যদি কোনো খাসজমির ব্যবস্থা করতে পারি তা হলে সেখানে পৌর এলাকার সব বর্জ্য ফেলা হবে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপর সাবেক সরকারের মন্ত্রী, এমপিসহ অন্য নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা ধারাবাহিকভাবে কর্মস্থলে আসছিলেন না। এমন বাস্তবতায় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ করে সরকার। এর ফলে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকরা পৌরসভাগুলোর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন। 

স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসক নিয়োগের পর পৌরসভা দফতর খোলা থাকলেও থমকে গেছে কাজের গতি। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় সরকারের নাগরিকসেবা ও উন্নয়ন প্রকল্প। পৌর এলাকায় আবর্জনার গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ এলাকাতেই দেখা মিলছে না পরিচ্ছন্নতাকর্মীর। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে পৌরসভার নাগরিকসেবা কার্যক্রম। সেবা কার্যক্রমে গতি আনতে শিগগির পৌরসভার প্যানেল মেয়রের পদটিকে সক্রিয় করতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের কথাও বলছেন তারা।

গাইবান্ধা পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে পৌর মেয়র অপসারণ হওয়ার পর থেকেই গাইবান্ধা পৌর এলাকার বানিয়ারজানে স্থাপিত কেন্দ্রীয় বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশনে বর্জ্য ফেলতে এলাকাবাসী বাধা প্রদান করছেন। অন্যদিকে একাধিক সরকারি খাস জমিতে বর্জ্য ফেলতে গেলে সেখানেও এলাকাবাসীর বাধার মুখে পড়ে মারধরের শিকার হচ্ছেন পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। ফলে উপায়ান্তর না পেয়ে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম সীমিত আকারে চালু রেখেছেন তারা। প্রতিদিন পৌর এলাকা থেকে প্রায় ১৯ টন বর্জ্য সংগ্রহ করা হতো। সীমিত আকারে এসব আবর্জনা অপসারণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন ঘটায় শহরের রাস্তার মোড়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এবং আবাসিক এলাকায় আবর্জনা ফেলার নির্ধারিত স্থানগুলোতে এখন প্রতিদিনই ময়লার স্তূপ জমছে। 

এদিকে নাগরিকদের অভিযোগ, শহরে প্রতিদিনের বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ডাস্টবিন নেই। কিছু এলাকায় পুরোনো ডাস্টবিন থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী। ফলে শহরবাসী যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। ডাস্টবিন না পেয়ে বাসিন্দারা অনেক সময় পয়ঃনিষ্কাশন নালায় (ড্রেনে) ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। এতে নালা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সমস্যা নিরসনে দ্রুত ভ্রাম্যমাণ ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করার দাবি তাদের। অপরদিকে পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, পৌরসভার অন্তত ৩০টি স্থানে ডাস্টবিন আছে। এ ছাড়া বেশকিছু এলাকায় আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কিছু কিছু এলাকায় নতুন করে ডাস্টবিন স্থাপনের চেষ্টা চলছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে জায়গার অভাবে ডাস্টবিন স্থাপন করা যায়নি। 

গাইবান্ধা পৌরসভার ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০০২ সালে ‘ক’ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয় গাইবান্ধা পৌরসভা। ১০ দশমিক ৫৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাইবান্ধা পৌরসভা ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এখানে লোকসংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। এর বাইরে একটি জেনারেল হাসপাতাল, একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র, ২৩টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক, ৫৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, একটি কসাইখানা, তিনটি কাঁচাবাজার, ছয়টি মার্কেটসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন দফতর থেকে গড় হিসাবে প্রতিদিন ২২ টন বর্জ্য তৈরি হয়। প্রতিদিন ছয়টি গার্বেজ ট্রাক এলাকা ভাগ করে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ১৯ টন বর্জ্য সংগ্রহ করে। প্রতিদিনের এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পৌরসভায় রয়েছে মাত্র একটি ট্রান্সফার স্টেশন আর একটি সলিডওয়েস্ট ডিসপোজাল গ্রাউন্ড। 

সরেজমিনে শহরের বানিয়ারজান এলাকায় ভাগাড়ে গিয়ে দেখা যায়, এটি আবর্জনায় ভরে গেছে। ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে গাইবান্ধা পৌরসভার কেন্দ্রীয় বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশন ছোটখাটো একটি পাহাড়ের আকার নিয়েছে। পৌরসভার ময়লা পরিবহনের গাড়িগুলো শহরের আর্বজনা নিয়ে এসে এখানে ফেলে। এমনকি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিভিন্ন মেডিকেল বর্জ্যও এখানে ফেলা হয়। অথচ গড়ে তোলা হয়নি আবর্জনা শোধনাগার। বেশ কয়েক বছর আগে এখানে একটি সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বায়োগ্যাস উৎপাদন প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও তা কার্যকর হয়নি। বর্তমানে এ প্রকল্পটি বন্ধ আছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় শহরের মধ্যপাড়া, মাস্টারপাড়া, থানাপাড়া, কলেজপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বাড়ির বাইরে খোলা জায়গায় ময়লা ফেলছেন। কুকুর, বেড়াল, মুরগি ও গরু-ছাগল খাবার খুঁজতে গিয়ে রাস্তার ওপর ময়লা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিচ্ছে। ফলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।

কলেজপাড়া এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, এখানে নির্দিষ্ট কোনো ডাস্টবিন নেই। লোকজন বাড়ির সামনে আরেকজনের পড়ে থাকা ফাঁকা জমিতে ময়লা ফেলে।

পরিবেশ আন্দোলন গাইবান্ধার নেতা ওয়াজিউর রহমান বলেন, গাইবান্ধা পৌরসভার বর্জ্য ফেলার নির্ধারিত জায়গায় আবর্জনা শোধনাগার নির্মাণের দাবি জানিয়ে গত ৫ আগস্টের পর থেকে স্থানীয়দের বিক্ষোভ-প্রতিরোধে সেখানে বর্জ্য ফেলা বন্ধ রয়েছে। ফলে পৌর এলাকার বর্জ্য মধ্যরাতে কোনো ফাঁকা স্থানে ফেলে আসছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। আবর্জনায় গোটা পৌর এলাকা যেন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ফলে বাড়ছে নাগরিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি।

নাগরিক সংগঠন জন-উদ্যোগের সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী বলেন, একটা পৌরসভার সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বর্জ্য নিষ্কাশনব্যবস্থা। এখন পৌরসভার ডাস্টবিন করতে জায়গা পাওয়াটাও বড় বিষয়। ডাস্টবিন না থাকায় বেশিরভাগ লোকই বাইরে ময়লা ফেলে চলে যান। তবে যদি পৌর এলাকার পাড়া-মহল্লায় ভ্রাম্যমাণ ডাস্টবিন দেওয়া হয় এবং প্রতিদিনের ময়লা যদি প্রতিদিন নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে হয়তো ভোগান্তি কিছুটা কমবে।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close