ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

লাল শাপলার সাতলা বিল
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:১৯ এএম  (ভিজিট : ৩৩২)
মৌসুমের শেষেও বরিশালের সাতলা বিল এখনও লাল শাপলায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে। প্রকৃতির এমন ছোঁয়া যেন মন কেড়ে নেয় সৌন্দর্যপিপাসুদের। রাত পোহাতেই গ্রামীণ এ জনপদে লাল শাপলার রূপ দেখতে জড়ো হন পর্যটকরা। শুধু দেশ নয় বিদেশ থেকেও আসেন পর্যটকরা। কিন্তু পর্যটকদের যাতায়াতে নেই কোনো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। স্থানীয়ভাবে দাবি উঠেছে এই অপরূপ লীলাভূমিকে পর্যটন মর্যাদায় অভিষিক্ত করার।

বরিশাল নগরী থেকে ৬৫ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমের অবর্ণনীয় সৌন্দর্যের জনপদ সাতলা বিলের অবস্থান উজিরপুর ও আগৈলঝাড়া উপজেলার সীমান্ত এলাকায়। প্রায় ৫ হাজার একর (দুই হাজার হেক্টর) পতিত জমিতে আষাঢ় মাসে পানি এলেই ফুটতে শুরু করে লাল শাপলা। ভাদ্রের শেষ পর্যন্ত এর মৌসুম থাকলেও এবার আশ্বিনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এর শোভা জিইয়ে থাকার আভাস মিলছে। এখন বিলের পানির ওপরে শাপলা ভেসে বেড়ায়। আর তাই পর্যটকদের ভিড়ও বাড়ে প্রতিদিন।

লাল শাপলার বিলে ঘুরতে আসা শারমি আক্তার বলেন, এখানকার শাপলার সৌন্দর্য সম্পর্কে যা শুনেছি বাস্তবে তার চেয়ে সৌন্দর্য অনেকগুণ বেশি। যেন রং তুলিতে আঁকা প্রকৃতির একটি নির্মল ছবি। ১০ কিলোমিটার গ্রামীণ পথ অনেক কষ্টে পেরিয়ে এখানে এসে মুগ্ধ হয়েছি।

আরেক দর্শনার্থী নীলিমা বলেন, একসঙ্গে এত শাপলা দেখতে পারাটা আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। অনেক শুনেছি এখানকার কথা। প্রকৃতির এমন দৃশ্য দেখতে খুব ভালো লাগে। আর লাল শাপলার বিলে নৌকায় করে মানুষকে আনন্দ উপভোগ করতে দেওয়া স্থানীয় মাঝিরা বলেন, এখানে আষাঢ় মাস থেকে তিন মাস শাপলার সঙ্গে মাছ, ফড়িং ও পাখিরও দেখা মেলে। আমরা পর্যটকদের জন্য বসে থাকি। একসঙ্গে বেশ মজাই হয়। দেশ-বিদেশের দূর-দূরান্ত থেকে এখানে শাপলার অপরূপ দৃশ্য দেখতে পর্যটকরা প্রতি বছরই এখানে আসেন। ১০ থেকে ১২ বছর ধরে এখানে সৌন্দর্যপিপাসুদের ভিড় বেশি পরিলক্ষিত হয়।

স্থানীয় কুটিবাড়ি, মুড়িমারি, নয়াকান্দা জনতাবাজ ও বটিবাড়িসহ অন্তত ১৬ গ্রামের তিন হাজার পরিবারের কাছে প্রকৃতির এই দান মৌসুমি আয়ের পথ করে দিয়েছে। পর্যটকদের জন্য ৭টি ঘাটে প্রতিদিন অপেক্ষা করে ১০০ সাঁজোয়া নৌকা। প্রতি ঘণ্টায় এর ভাড়া ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। শাপলা তুলে বিক্রি করাও এখানকার মানুষের পেশা। পর্যটকদের যা কিছু সুবিধা দেওয়ার তা অর্থের বিনিময়ে এসব গ্রামের মানুষরাই দিয়ে থাকে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, সুন্দরের এমন সমারোহ আর কোথাও নেই। আমেরিকা, চীন, জাপান, ভারত থেকে শুরু করে ঢাকা, পঞ্চগড়, চট্টগ্রাম, সিলেট, ভোলা ও নোয়াখালীর প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও এখানে পর্যটকরা আসেন। ক্রমাগত পর্যটক বাড়ছে কিন্তু সুবিধা বাড়ছে না।

স্থানীয় মাঝি আনোয়ার হোসাইন বলেন, আমরা শাপলা দিয়েই নৌকা সাজিয়ে রাখি পর্যটকদের জন্য। যদি এখানে সরাসরি গাড়ি আসতে পারত তবে পর্যটক আরও বাড়ত। শাপলার মৌসুমে আমরা শাপলা দেখাই, অন্য সময়ে ধান ও মাছের চাষ করি।

পর্যটকদের বেশিরভাগই দাবি জানিয়েছেন অপরূপ সৌন্দর্যের চারণক্ষেত্র এই এলাকাকে পর্যটন এলাকার মর্যাদা দিয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়ার। তারা দাবি জানিয়েছেন, সরকারিভাবে ভ্রমণপিপাসুদের এ এলাকায় আসতে উৎসাহিত করতে সড়ক নির্মাণ ও যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্থানীয়রা এ বিষয়ে পর্যটন করপোরেশনকে মনোযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন যারা লাল শাপলা সমৃদ্ধ সাতলা বিল দেখতে চান পর্যটন করপোরেশনকে তাদের জন্য নিয়মিতভাবে বিশেষ ট্রিপের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্থানীয়রা আক্ষেপ করে বলেন, এত সুন্দর এই জনপদ নিয়ে প্রশাসনিক কোনো উদ্যোগ নেই, নেই নিরাপত্তার চাদর। অনেকটাই অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এই জনপদ।
কৃষি বিভাগ বলছে কৃষি, প্রকৃতি ও পর্যটনের এমন মিলন ক্ষেত্র আর কোথাও মিলবে না। একই জমিতে ধান, মাছ আর শাপলার সমাহার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। দেশের পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করে তুলতে পারে লাল শাপলার সাতলা বিল। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মুরাদুল হাসান বলেন, ৫ হাজার একরের এই জমিতে শুকনোকালে বোরো চাষ হয়, বর্ষায় হয় মাছ ও শাপলার ফলন। প্রকৃতি ও কৃষির এমন মিলন এক বিরল উদাহরণ। পর্যটন শিল্পের বিকাশে প্রকৃতির এ অবদানকে কাজে লাগাতে হবে।

তবে জেলা প্রশাসন থেকে দাবি করা হয়েছে, সাতলা বিলকে কেন্দ্র করে বিল সন্নিহিত এলাকায় ইতিমধ্যেই নানা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। অচিরেই এর সুফল পর্যটকরা ভোগ করতে পারবেন। উজিরপুরে শাপলার বিলের এ সৌন্দর্য দেখতে প্রতিনিয়ত প্রচুর পর্যটক আসেন। পর্যটকদের জন্য এখানে কোনো সুবিধা ছিল না। সে কারণে ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে পর্যটকদের জন্য অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close