ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে বসতবাড়িতে হামলা, ভাংচুর-লুটপাটের অভিযোগ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৮:৫১ এএম  (ভিজিট : ১৯৬)
ঢাকার ধামরাইয়ের আমতা ইউনিয়নের বড় নারায়ণপুর এলাকায় ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে এক নারীর বসতবাড়িতে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। ওই ইউপি সদস্যের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে বাড়িতে দেহব্যবসা করে আসছিলেন ওই নারী। এরই জেরে গ্রামবাসীকে নিয়ে তিনি তা বন্ধ করে দেন। এলাকাবাসী মিলেই বাড়িঘর ভাংচুর করেছে বলে জানান তিনি।

ভুক্তভোগী নারীর দাবি, তার বাড়িতে ওরশ ও মেলা হতো। সেটা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন ইউপি সদস্য। তাতে ব্যর্থ হয়ে সরকার পতনের পর তিনবার হামলা ও লুটপাট করা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারটি জানায়, সর্বশেষ গত ১৩ সেপ্টেম্বর চতুর্থ দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে, গত ৫ আগস্ট একবার ও ৬ আগস্ট দুইবার হামলা করে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় বাড়িটিতে।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলের দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটিতে একটি পাকা ঘর, একটি টিনের ঘর ও একটি টিনের দোকান ঘর রয়েছে। এরমধ্যে মুদি দোকানটি ভাংচুর করা হয়েছে। দোকানটির সামনের বেড়ার সবগুলো টিন ভাংচুর করে খুলে নেওয়া হয়েছে। একটি জানালাও ভাংচুর করা হয়েছে। চার কক্ষের টিনের ঘরের পুরোটা ভাংচুর করে চারটি বেড়ার টিনই খুলে নেওয়া হয়েছে। লুটপাট করা হয়েছে কক্ষে থাকা জিনিসপত্র। ভাঙা টিনগুলো ফেলে রাখা হয়েছে মেঝেতে। এছাড়া পাকা ঘরের সবগুলো থাই গ্লাসের জানালা ভাংচুর করা হয়েছে। কক্ষের ভেতরের মালামাল লুটপাট করা হয়েছে।

পরিবারটির দাবি, পাকা ঘর থেকে দুটি টেলিভিশন, দুটি ফ্রিজ, একটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। বাইরে থাকা একটি মোটর লুট করা হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ভুক্তভোগী পরিবারটি জানায়, স্থানীয় আবুল বাশারের মেয়ে রুপালি তার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে বাড়ি করে বসবাস করছেন। রুপালি প্রায় ১০ বছর তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। এরপর বাড়িতে একটি গরুর খামার, মুরগির খামার ও একটি মুদি দোকান পরিচালনা করে আসছিলেন। প্রায় ৪-৫ বছর ধরে তিনি বাড়িতে চিশতিয়া ঘরানার ওরশ ও মেলা আয়োজন করে আসছিলেন। গত বছর ওরশের সময় বাধা দেন ইউপি সদস্যসহ তার কয়েকজন অনুসারী। ওই নারীর কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে সেই ওরশ পালন করা হয়। এরপর থেকেই তার নামে বিভিন্ন কুৎসা রটানো হয়। সরকার পতনের পর ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন মিলে ওই নারীর বাড়িতে তিন দিন চার দফা হামলা করে।

ভুক্তভোগী রুপালী বেগম বলেন, ‘আমি ১০ বছরের বেশি সময় গার্মেন্টসে চাকরি করেছি। টাকা জমিয়ে একটা গরুর ফার্ম, মুরগির ফার্ম ও দোকান দিয়েছি। এগুলো দিয়েই সংসার চালাই। বাড়িতে আমি ও আমার ছেলের বউ থাকি। ছেলে বাইরে থাকে। আমি তরিকা ভক্ত। একটা মেলা ও ওরস করি। গ্রামের কিছু লোক আর আশরাফুল মেম্বার আমাকে বাধা দিচ্ছিল। এবারে চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে মেলা করছি। উনি আমাকে বাধা দিয়ে ২০ হাজার টাকা চায়। তবে তাকে দেয়নি। তারা আমার নামে এরপর থেকেই নানা কু কথা ছড়াতে থাকে। কিন্তু আমাকে নিয়ে কোনোদিন কোনো বিচার শালিস হয়নি, আমাকে কোনো দিন কোনো খারাপ কাজে পাওয়া যায়নি। গত ৫ আগস্ট বিকেলের দিকে আমার ছেলের বউ দোকানে বসেছিল। সেখানেই হামলা করে। আমার ছেলের বউ গর্ভবতী ছিল। তার গর্ভ নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর দিন আবারও হামলা করে। ঘরবাড়ি ভাংচুর করে, দুইটা টিভি, দুইটা ফ্রিজ ও একটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। একটা মোটর লুট করে। দোকানের ঘরের বহু জিনিসপত্র লুট করে। থাই গ্লাস সবগুলো ভেঙে ফেলে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘গত এক মাস ধরে আমি বাড়ি ছাড়া। তাদের ভয়ে বাড়ি যেতে পারছি না। মারতে আসে। আমি দেশের নাগরিক। আমার নামে অভিযোগ থাকলে থানাপুলিশকে বলুক, অভিযোগ করুক। জোর করে আমার বাড়িতে লুটপাট করলো। আমি কার কাছে যাব। আমাকে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানাই।’

ওই নারীর সঙ্গে অন্যায় হয়েছে উল্লেখ করে স্থানীয় বাসিন্দা মো. হোসেন আলি বলেন, এই মেয়েটা গার্মেন্টসে চাকরি করে খাইত। মোটামুটি এক দেড় মাস ধরে বাড়িতে থাকতে পারতেছে না। তাকে তাড়িয়ে দিছে এবং বাড়ি ভাঙচুর করছে। তার বিরুদ্ধে কোনদিন বিচার শালিস হয়নি কিছু হয়নি। এই প্রথম কি ব্যাপারে তাও জানিনা আমরা চাই সুবিচার। যাতে সুস্থভাবে সবাই আমরা চলতে পারি।

এদিকে হামলার বিষয়ে আমতা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘দেহব্যবসা করতো এতো দিন। সে নিজেই এলাকা ছাড়ছে। কোয়াটার ভাড়া দিয়ে মহিলা এনে এলাকার ছেলেপেলেকে নিয়ে এসব করতো। কেউ কিছু বললে হামলা-মামলার ভয় দেখায়। লজ্জা সরম ছিল না। মানুষ খুব কষ্টে চিপা কান্নার মধ্যে ছিল। সরকার পতনের পর উনি এলাকা ছেড়ে যায়। অনেকবার থানায় জানাইছি। কিন্তু আওয়ামী লীগের দলীয় থাকায় এরা সবাই কোনো ব্যবস্থা নিতো না। আমার ওপরও জিডি করছে। আমি গ্রামবাসীদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নিছি এরা আর থাকতে পারবে না। ওরে আর বাড়ি করে থাকতে দেওয়া যাইব না। ও থাকলে আবার অবৈধ কাজ চালু হবে। তাই এলাকার লোক নিয়ে গিয়ে এটা করছি।’

ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই বিষয়ে ওই নারী থানায় এখনও কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘২০০৬ সালের আইন অনুযায়ী গ্রাম আদালত ছোটোখাটো বিষয় যেগুলো সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা মূল্যমানের এমন ঘটনা মীমাংসা করতে পারে। কিন্তু ঘরবাড়ি ভাঙা এটা তো কোনো আইনে দেওয়া নেই। এটা শতভাগ আইন বিরোধী কাজ। দেশের রাষ্ট্রের কাঠামোতে কেউই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। কেউ যদি এটা করে থাকে, সেটা নিশ্চয়ই আইন বহির্ভূতভাবে করেছে।’


সময়ের আলো/এএ/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close