ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

আস্থার বার্তা ওয়াশিংটনের
প্রকাশ: রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫:১৬ এএম  (ভিজিট : ৪৯২)
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দফতরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে তিন সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার ঢাকায় এসেছেন। এই দলে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুও রয়েছেন। এই সফরে অর্থনৈতিক উন্নতি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিয়ে অংশীদার রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে অঙ্গীকার রয়েছে তা নতুন করে নিশ্চিত করবে ওয়াশিংটন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র যে আস্থা রেখেছে এই সফর তারই বার্তা দিচ্ছে। উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিনিধি দলই প্রথম, যারা সবার আগে দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে ঢাকা সফর করছেন।

গত জুলাই-আগস্টের শিক্ষার্থী আন্দোলনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস একাধিকবার বলেছেন যে আগের সরকার বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছেন। অন্যদিকে বৈশ্বিক একাধিক কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল। তার মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতি এবং অনিয়মের ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও নাজুক আকার ধারণ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে ঘুষ-দুর্নীতি হচ্ছে বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাধা। অন্যান্য বাধার ক্ষেত্রে রয়েছে সরকারি কেনাকাটা, মেধা-সম্পদ সংরক্ষণ, ডিজিটাল বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও পূর্ণ শ্রমিক অধিকার না থাকার মতো বিষয়। বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এসব বাধার মুখোমুখি হয়ে থাকে। আসন্ন সফরে এসব ইস্যুতে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব ইস্যুতে উন্নতির জন্য বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাইতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড) আর্থিক খাতে কারিগরি সহযোগিতা হিসেবে ২০০ কোটি ডলার দিতে পারে। এই বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে এই সফরে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।

এ ছাড়া দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু নয়াদিল্লি হয়ে শনিবার ঢাকায় আসেন। এই সময়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন। যেহেতু ডোনাল্ড লু নয়াদিল্লি হয়ে ঢাকা এসেছেন তাই ভারত ইস্যুতেও বার্তা থাকতে পারে। কেননা ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গত ৫ আগস্ট উত্তর প্রদেশের লক্ষৌতে সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডারদের প্রথম যৌথ সম্মেলনে শান্তি রক্ষার জন্য দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন। ওই সময়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইসরাইল-হামাস সংঘাতের পাশাপাশি বাংলাদেশের পরিস্থিতি উল্লেখ করে এমন মন্তব্য করেন। এরপর বাংলাদেশে উগ্রবাদের উপস্থিতি নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন বলে দেশটির কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ওয়াশিংটনের প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে গত সপ্তাহে মন্তব্য করেন। মূলত গত ১৫ বছরে ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্কে সোনালি অধ্যায় চলছে বলা হলেও গত ৫ আগস্টের পর সেই সোনালি সম্পর্কে টানাপড়েন লক্ষ্য করা গেছে। এমন পরস্থিতিতে প্রভাবশালী দেশের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নয়াদিল্লি হয়ে ঢাকা সফরে এসেছেন। ধারণা করা হচ্ছে যে ডোনাল্ড লু ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক বার্তা দেবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিনিধি দলের সফর নিয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন  সাংবাদিকদের বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম দলের আসার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তারা যে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় তার একটা বড় প্রতিফলন এবং এর মধ্যে কারা কারা থাকছেন (প্রতিনিধি দলে) আপনারা জেনেছেন। এই যে প্রতিনিধি দলে কারা থাকছেন এটি থেকে বোঝা যায়, এই আলোচনাটা বহুমাত্রিক হবে, এটি শুধু একটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট গত ১০ সেপ্টেম্বর জানিয়েছে, ঢাকায় ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই বৈঠকে ডোনাল্ড লু যুক্তরাষ্ট্রের এক আন্তঃসংস্থা (ইন্টারজেন্সি ডেলিগেশন) বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেবেন। আন্তঃসংস্থা বাহিনীতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রতিনিধি, ইউএসএইড (যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা) এবং বাণিজ্য বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবেন। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আলোচনা করবেন যে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. শাহিদুল হক সময়ের আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিনিধি দলের সফর বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যক্তরাষ্ট্রের যে আস্থা রয়েছে, এই সফর সেই বার্তা দিচ্ছে। এই সফর অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি নৈতিক শক্তি। এখনও দেশের মধ্যে অনেক গোষ্ঠী গোলমাল করার চেষ্টা করছে। তাদের জন্যও এই সফর একটি ভালো বার্তা হিসেবে কাজ করছে। ভারতীয়রা বিভিন্ন জায়গা থেকে বাংলাদেশ নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি করছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। ভারতীয়দের জন্যও এই সফর ভালো বার্তা বহন করে। ডোনাল্ড লু হয়তো ঢাকা আসার আগে বাংলাদেশ ইস্যুতে নয়াদিল্লিকে কোনো বার্তা দিয়ে এসেছেন। এ ছাড়া এই সফরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা হিসেব আর্থিক সহযোগিতা করতে পারে।

ঢাকা সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দফতরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যান, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ। প্রতিনিধি দলটি মূলত অর্থ ও বাণিজ্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন। এর আগে বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিকবার ঢাকা সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডোনাল্ড লু। সবশেষ গত মে মাসে ঢাকা সফর করেছিলেন ডোনাল্ড লু।

ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক : যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দফতরের আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যান শনিবার সকালে ঢাকায় এসেই বাংলাদেশ-আমেরিকান ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকটি ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে হয়। ওই বৈঠকে দেশের শিল্প কারখানার চলমান অস্থিরতাসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া পাওনা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়। ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এই বৈঠক সম্পর্কে জানিয়েছে, জ্বালানি নিরাপত্তা থেকে শুরু করে ডাটা সেন্টার এবং পরিবহন পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসাগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। সঠিক অর্থনৈতিক সংস্কারের করা হলে, আমেরিকার বেসরকারি খাত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে সহায়তা করতে পারে।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close