ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

দুই কন্যাশিশুর এখন কী হবে
প্রকাশ: শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:১৯ এএম  (ভিজিট : ২৭৪)
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী তৌফিকুল ইসলাম ও ইসমত জাহান ইলোরা দম্পতি দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে মেরুল বাড্ডা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বজনদের তথ্য মতে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় পারিবারিক প্রয়োজনে বাইরে বেরিয়েছিলেন। ঠিক এমন সময় আকস্মিকভাবে পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তৌফিকুল। চাকরি সূত্রে মেরুল বাড্ডায় বসবাস করা তৌফিকুলের মৃত্যুর খবরটি সেভাবে গণমাধ্যমেও আসেনি। এ কারণে কেউ খোঁজখবরও নেয়নি নিহতের ছোট্ট দুই শিশুকন্যা বা তার স্ত্রী ইলোরার।

জানা গেছে, স্বামীকে হারিয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করছেন স্ত্রী ইলোরা। তার চোখেমুখে গভীর দুশ্চিন্তা। দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ এখন পুরোপুরি অনিশ্চয়তার মুখে। তাদের নিয়ে বাকি জীবন কীভাবে কাটবে তা-ও বুঝতে পারছেন না। কেউ তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না বলে জানা যায়।

নিহতের স্ত্রী ইলোরা সময়ের আলোকে বলেন, আমার স্বামী পেড্রোলো ওয়াটার পাম্প কোম্পানির সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তার চাকরির সুবাদে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতাম দুই সন্তানসহ আমরা। তবে আন্দোলনের সময় স্বামী মারা যাওয়ার পর ভাড়া বাসা ছেড়ে দিতে হয়েছে। কারণ আমার পক্ষে ভাড়া দিয়ে থাকা সম্ভব না। তাই মেয়েদের নিয়ে গ্রামে চলে আসি।

তিনি আরও বলেন, আমার বড় মেয়ের বয়স সাত বছর আর ছোট মেয়ের বয়স হলো দুই বছর। বড় মেয়েটি রাজধানী ঢাকার সিরাজ মেমোরিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়াশোনা করে। কিন্তু স্কুলের মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি দিতে পারছি না বলে বর্তমানে মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ রয়েছে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পড়াশোনা বন্ধ করতে হয়েছে। তবে তার ভবিষ্যতের জন্য হলেও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতির কাছে আমাদের হার মানতে হয়েছে। সবার কাছে শুনি অনেকেই নাকি সাহায্য করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ বা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। অনেকে কিছু দেবে আশ^াস দেয় কিন্তু কিছু দেয় না। তা ছাড়া সমন্বয়কদের মধ্য থেকেও কেউ যোগাযোগ করেননি। আমার স্বামী একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করত আর সেই টাকা দিয়েই সংসার চলত। আমাদের সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আমার সন্তানরা যেন পড়াশোনা করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হোক।

টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে পেড্রোলো ওয়াটার পাম্প কোম্পানির সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার রঞ্জন দাস সময়ের আলোকে বলেন, তৌফিকুল ইসলাম আমাদের কোম্পানির একজন সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তবে আন্দোলন চলাকালে তিনি মারা যান। তাকে আগস্ট ও সেপ্টেম্বব মাস এবং পেনশন হিসেবে কিছু টাকা দেওয়া কথা রয়েছে। টাকার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি দুদিনের মধ্যে প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে। আর আমি নিজেই এটার দায়িত্বে রয়েছি।

স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, দুই সন্তান নিয়ে নিহত তৌফিকুলের স্ত্রীর জীবন এখন খুবই কষ্টে কাটছে। প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন যা দিচ্ছে তা দিয়েই কোনোমতে দিন চালাতে হচ্ছে। আর তাদের দেখার মতো তেমন কেউ নেই। 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই রাজধানীর মধ্যবাড্ডা নিজ বাসার সামনে কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন তৌফিকুল। মুমূর্ষু অবস্থায় লোকজন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ২১ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার দুটি ছোট মেয়ে আছে। এখন তাদের দেখার মতো কেউ নেই। তা ছাড়া তাদের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাই আমরা চাই সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য এমন কিছু করা হোক। যাতে পরবর্তীতে কোনো সমস্যা না হয়। এ পর্যন্ত কোনো সমন্বয়ক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। 

তৌফিকুল রংপুর জেলার সদর উপজেলার মহাদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা। বাড্ডায় প্রথমে অজ্ঞাতপরিচয়ে মামলা করা হলেও পরে ১৩৩ জনের নামে মামলা করেছে বলেও জানায় নিহতের পরিবার।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বাড্ডা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, ভিকটিম তৌফিকুল ইসলাম নিহত হওয়ার পরপরই একটি অজ্ঞাতনামা মামলা করা হয়। কিন্তু পরে তার পরিবারের লোকজন এসে ১১৩ জনের নামে মামলা করে। মামলার কার্যক্রম এখনও প্রক্রিয়াধীন। কেউ এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close