ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ভুলুয়া নদীর তীরজুড়ে অবৈধ বসতি, পানিপ্রবাহে বাঁধা
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪:৩৮ পিএম  (ভিজিট : ৪৮৮)
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ভুলুয়া নদীর দু’পাশে অবৈধ ভাবে বাড়ি-ঘর বা দখলে বসতি নির্মাণে নদীর পাড় ভরাট হয়ে খালে পরিণত হওয়ায় পানির স্রোতের ধারা বাঁধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। পানিতে আটকা পড়ছে কয়েক শত বসতি বাড়ি ও হাজার একর আমনের জমি। 

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পোড়াগাছা থেকে আজাদনগর ব্রিজ সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্বে নদীর দু’পাশে ঝুপড়ির মত ছোট-বড় বসতি ঘর, দোকান ও গাছপালা রয়েছে। নদীর চওড়া ৪শত মিটার হলেও দখলের কারণে মাত্র ১শ থেকে ১৫০মিটার বিদ্যমান রয়েছে। এতে চর বাদাম, পোড়াগাছা, চর আলগী, চর কাদিরা, তোরাবগঞ্জ, চর লরেন্স প্রায় ছয় হাজার বসতঘর অতিবৃষ্টি ও উজানের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে পানি মেঘনা নদীতে চলাচলে বাঁধাগ্রস্ত হয়ে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। 

আজাদনগর, চার রাস্তা, পাটোয়ারী বাজার, চর বসু, তোরাবগনজ, চর বাদামসহ প্রত্যন্ত এলাকায় ৫০ দিন পার হলেও মানুষের বাড়ি-ঘর ও বসতিতে বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে থৈ থৈ করছে। চোখ যতদূর যাচ্ছে পানি এবং পানি দেখা যাচ্ছে। মানুষ নৌকা বা ডিঙ্গি দিয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। কৃষি জমির ফসল কোথাও চোখে পড়েনি। কিছু ফসল থাকলেও সবটুকু পানির নিচে রয়েছে। কোথাও আমনের বীজতলা দেখা যাচ্ছে না। রাস্তা বা সড়কে মানুষ, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, ভেড়া ও মহিষ বেধে ঘাস ও গাছের লতাপাতা খাওয়াচ্ছে। জীবন যুদ্ধে গবাদি পশু বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা চলছে। এছাড়াও নদীতে মাছ ধরার বিভিন্ন জালে পানির স্রোতে আটকা পড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

ঘরের পাশে পানি এখনও খেলা করছে। নিরুপায় রান্না হচ্ছে বসতি ঘরে। ঘর থেকে বের হতে নৌকা বা কলাগাছের বেউরা দিয়ে চলছে। পথে দেখা যায়, মৃত ব্যক্তির দাফন হচ্ছে স্কুলে কোনায়। নিজস্ব কবর পানি নিচে থাকায় দাফন দেয়া যাচ্ছে না। প্রায় গ্রাম পানি মধ্য দ্বীপের মত দেখা যাচ্ছে। বেউলা দিয়ে খড় এনে রাস্তায় গবাদি পশুদের খাওয়াচ্ছে। কিছু বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, রান্না করবে চুলা পর্যন্ত নেই। শুকনো খাবার খেয়ে গত কয়েকদিন পার করছে। স্কুলগুলো পানিতে প্লাবিত। 

চর কাদিরা ইউপির সাবেক মেম্বার আব্দুল কাদের পাটোয়ারী জানান, চর কাদিরা, তোরাবগঞ্জ, চর বাদাম, আন্ডারচরসহ বেশ কিছু এলাকায় টানা বৃষ্টিতে পানি কোমড় সমান থৈ থৈ করছে। বাড়ি-ঘর ডুবে গেছে, কৃষি জমি পানির তলে প্লাবিত। উত্তর অঞ্চলে পানি আটকা পড়ার কারণ ভুলুয়া নদীর দু’পাশে বাড়ি-ঘর, দোকানপাট তুলে নদীর মুখ বা স্রোত বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। আজাদনগর ব্রিজের দক্ষিণ-পূর্বে নদীর দু’পাশে অসংখ্যক ঘর দেখা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের বেড়া জাল পেতে পানি স্রোত থামিয়ে রাখা হয়। এসব কারণে নদীতে পানির গতি কমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। 

কৃষক মো. নিজাম উদ্দিন জানান, ভুলুয়া নদীর দু’পাশে অসংখ্যক অবৈধ ঘর-বাড়ি দখল করে নদীর মুখ চিকন হচ্ছে। পানির স্রোতের গতি খুবই ধীর। পানি আটকে উত্তর অঞ্চল ডুবি গেছে। মানুষ বাড়ি-ঘর, গবাদি পশু ও আমনের বীজতলা, সবজি বাগান নিয়ে জীবন জীবিকায় ঝুঁকিতে বসবাস করছে। নদীতে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। পানির টানা গতি নেই বললেই চলে। কিছু অসাধু ব্যক্তির দখল বাণিজ্যের কারণে উত্তর অঞ্চলের মানুষের বাড়ি-ঘর, ফসলি মাঠে কোমড় সমান পানি রয়েছে। কৃষকের আমন ধান উৎপাদনের বীজতলা নেই বললেই চলে। এবার আমন ধানের উৎপাদনে ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে। সবখানে পানি, কোনখানে বীজতলা করবো বুঝতে পারছি না। 

মো. আব্দুল্লাহ জানান, টানা বৃষ্টির কারণে চর কাদিরা, চর বাদাম ইউনিয়ন পানির নিচে ডুবে গেছে। বাড়ি-ঘরে থাকা যায় না। পানি নামতেছে না। প্রতিদিন পানি বাড়ছে। ভুলুয়া নদী দিয়ে পানি সাগরে যায়। এখন পানি যায় না। নদীর দু’পাশে বাড়ি-ঘর থাকায় নদী চিকন হয়ে গেছে। পানির স্রোত নেই। দ্রুত নদীর দু’পাশ দখলমুক্ত করা না গেলে উত্তরাঞ্চল ডুবে যাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছৈয়দ আমজাদ হোসেন জানান, ভুলুয়া নদীর দু’পাশে বেশ কিছু অবৈধ দখল রয়েছে। উচ্ছেদ এর বিষয়ে কাজ চলছে। নদীতে নানা রকম দখল রয়েছে। দখল উচ্ছেদ অভিযান চালু রয়েছে। 

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  ভুলুয়া নদীর তীর-অবৈধ বসতি-দখলমুক্ত   রামগতি-কমলনগর   লক্ষ্মীপুর  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close