ভাদ্র মাস শেষ হতে আর মাত্র দুদিন বাকি। যাওয়ার আগে জানান দিচ্ছে, ভাদ্রের তালপাকা গরমের। যদিও আকাশে ঘন ঘন পাল্টাচ্ছে মেঘের রং। দেখলে মনে হয়, এই বুঝি বৃষ্টি নামবে। কোথাও কোথাও কয়েক পশলা নেমেও ছিল গত বুধবার রাতে। তবে এ বৃষ্টি মাটির ভাপ আরও ওপরে উঠিয়ে দিয়ে গেছে। এ কারণে বেড়েছে ভ্যাপসা গরম। অসহনীয় করে তুলেছে জনজীবন। এরই মধ্যে দেশজুড়ে আজ ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে আগামী তিন দিন চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানি বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এ ছাড়া নোয়াখালীতে রাতভর বৃষ্টির কারণে বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয়। এ কারণে সারা দেশে কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীবাসী অনেক ক্ষেত্রে তা টের পাচ্ছেন না। তবে আজ সারা দেশে সব বিভাগে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। শুধু ভারী নয়, অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ বৃষ্টির ফলে ফেনী, চট্টগ্রাম ও সিলেটে স্বল্পমেয়াদে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
সুদূর কানাডা থেকে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ কদিন আগে আভাস দিয়েছেন, বাংলাদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা প্রচুর। সেই সঙ্গে বন্যাও হতে পারে কোনো কোনো জেলায়। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসও বলছে, বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা হতে পারে। আবার নতুন করে বন্যার আশঙ্কার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, উজানে ভারতীয় অংশে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলজুড়ে গতকাল বৃষ্টি হয়েছে। আজও একই ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
আজ থেকে দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও বান্দরবানে নিম্নাঞ্চলে আকস্মিক পানির ঢল আসতে পারে। এর ফলে স্বল্পমেয়াদে বন্যা হতে পারে।
এ ব্যাপারে বন্যা ও পূবার্ভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বৃষ্টির কারণে বেশ কয়েকটি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মৌসুমি বায়ু এখন উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলে ও এর আশপাশ এলাকায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
ভ্যাপসা গরম প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ নাজমুল হোসেন জানান, এখন তো ভাদ্র মাস। এ সময় বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে। কারণ ভ্যাপসা গরম থেকেই যাচ্ছে। একই কারণে মানুষের শরীরের ঘাম সহজে শুকাচ্ছে না। এক ধরনের অস্বস্তি অনুভূত হচ্ছে।
গরমে নাকাল রাজধানীর মানুষ। তবে কোনো কোনো জেলার মানুষ বৃষ্টিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছে। গতকাল আর গত পরশু কোনো কোনো স্থানে বৃষ্টিতে সয়লাব হয়ে গেছে। টেকনাফে সর্বোচ্চ ১৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, দেশে এবং উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আগামী তিন দিন চট্টগ্রাম বিভাগের নদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
অন্যদিকে নোয়াখালীতে রাতভর বৃষ্টির কারণে জেলা শহরসহ আট উপজেলায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জনদুর্ভোগ আরও বেড়েছে। জেলা আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নোয়াখালীতে বুধবার রাত ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলা বন্যার কারণে এখনও জেলার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িও ফিরেছেন। এ পরিস্থিতিতে রাতভর ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতের কারণে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান খান বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নোয়াখালীর আট উপজেলা, আট পৌরসভা ও ৮৭ ইউনিয়নে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩০০ জন। ৪৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে ৫৯ হাজার ৭৮৭ মানুষ।
সময়ের আলো/আরএস/