ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

শয্যা নেই, মেঝেতে চিকিৎসা
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫:৫০ এএম  (ভিজিট : ২৮২)
একদিকে ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরমে সারা দেশে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। অন্যদিকে বিরূপ আবহাওয়ায় অসুস্থ হয়ে ঘরে ঘরে বেড়েছে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ। দিন ও রাতের গুমোট গরমে বেশি অসুস্থ পড়ছে শিশুরা। একই সঙ্গে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় বেড়েছে কয়েকগুণ। চিকিৎসকদের রুম থেকে শুরু করে কোথাও পা ফেলার জায়গায় নেই। রোগীর স্বজনদের চোখে-মুখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ছাপ। একই বিছানায় দুজন করে রোগী রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অনেক শিশু রোগীর ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের মেঝেতেই। অনেকে আবার ভেতরে জায়গা না পেয়ে পাশের বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরাও।

রোগীর স্বজনরা বলছে, গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগবালাই। একসঙ্গে পরিবারের একাধিক সদস্যও জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছে। এর তীব্রতা থাকছে তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত। জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কের সংখ্যাই বেশি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটসহ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে জ্বর-সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, টাইফয়েড ও পানিবাহিত হেপাটাইটিস এবং ডায়রিয়ার আক্রান্ত হওয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

আর প্রচণ্ড গরমে শিশুদের শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, পেটের সমস্যা, হাঁপানি, সর্দি, জ্বর-কাশি বেশি হচ্ছে, যেটি ভাইরাল ফ্লু। কারণ তাপদাহের কারণে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সি মানুষের শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়ে পানিশূন্যতা সৃষ্টি তৈরি হচ্ছে। ফলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। গরমে রোগবালাই থেকে সুরক্ষায় বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান, ফলমূলের শরবত পান, পচা-বাসি ও বাইরের খাবার না খাওয়া, বাইরে কম বের হওয়া এবং গরমের এ সময়ে জ্বর হলে অবহেলা না করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার সকালে ঢামেকে বহির্বিভাগে কথা হয় জান্নাতুল বেগমের সঙ্গে। তিনি তার দুই মাসের শিশু আরফানকে নিয়ে এসেছেন কেরানীগঞ্জ থেকে। তিনি জানান, অতিরিক্ত গরমে তার সন্তানের ঠান্ডা-জ্বর হয়েছে। ফার্মেসি থেকে সিরাপ খাওয়ানোর পরও ভালো হয়নি। তাই হাসপাতালে এনেছেন। জান্নাতুল জানান, সম্প্রতি তার স্বামী এবং আরেক সন্তানও ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল।

হাসপাতালের শিশু বিভাগের ২০৭ নম্বর রুমের মেঝেতেই চার দিন ধরে চিকিৎসাধীন ২২ মাস বয়সি তাবাসসুম। শিশুটির সঙ্গে রয়েছেন তার মা বৃষ্টি বেগম। তিনি জানান, গরমের কারণে প্রথমে জ্বর হয়। পরে খিঁচুনি শুরু হলে এখানে ভর্তি করা হয়। কিন্তু কোনো উন্নতি হয়নি। শ্বাসকষ্টের জন্য কিছুক্ষণ পরপর নেবুলাইজার দেওয়া হচ্ছে। প্রচণ্ড জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে কিছুক্ষণ পরপর বমি করছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত গরমে ঘাম থেকে ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হয়ে গেছে। তিনি বলেন, মেয়ের অবস্থা সহ্য করার মতো নয়। চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া সব বন্ধ হয়ে গেছে আমাদের।

শয্যা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাবাসসুমের পাশে থাকা আরেক রোগীর স্বজন রোকেয়া বেগম সময়ের আলোকে বলেন, তিন দিন ধরে মেঝেতে বাচ্চার চিকিৎসা চলছে। এভাবে থাকা যায় না। রোগী ও স্বজনদের আনাগোনা এত বেশি যে পা ফেলার সুযোগ নেই। ডাক্তার-নার্সরা ঠিকভাবে দেখে না। কি যে কষ্টে আছি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

ঢামেকের দুটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ৪০টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু ভর্তি রোগীর সংখ্যা তার তিনগুণ। আর শয্যা না পেয়ে অনেককে মেঝেতে এবং বাইরে বারান্দায় বিছানা পেতে চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে। একই অবস্থা দেখা মেডিসিন বিভাগেও।

এ ব্যাপারে ঢামেকের শিশু বিভাগের চিকিৎসক ডা. শিহাবি ইবনে সিরাজ সময়ের আলোকে বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুরা সর্দিজ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও পেটের ব্যথা, ব্রংকিওলাইটিস এবং পানিবাহিত রোগসহ বিভিন্ন ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু ও দীর্ঘদিন ধরে পুরোনো রোগে ভোগা ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এ সময় তাদের ভাইরাস জ্বর, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণের কারণে ফুসফুসের নানা রোগ হয়ে থাকে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। কোনোভাবেই জ্বরকে অবহেলা করা যাবে না।

তিনি বলেন, গরমের এই সময়ে বেশি করে পানি পান করাতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। শিশুদের বাইরে যতটা কম বের করা যায় ততই ভালো। জ্বর হলে কোনো অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না এবং অবশ্যই ডেঙ্গু টেস্ট করতে হবে। কারণ এখন অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন।
শিশু হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শিশু রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দিনে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা। এ ছাড়াও যেখানে জরুরি বিভাগে স্বাভাবিক সময়ে রোগী আসত গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন। সেখানে জরুরি বিভাগ থেকে প্রতিদিন গড়ে বেড়েছে ৪০০-এর বেশি রোগী সেবা নিচ্ছে। এ ছাড়া শয্যা সংকটের কারণে অনেক রোগীকে ফিরে যেতে দেখা গেছে। রোগীর চাপ বাড়ায় এখানকার ৬৮০টি শয্যার একটিও বর্তমানে ফাঁকা নেই।

হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনকারী এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময়ের আলোকে বলেন, গত কয়েক দিনের গরমে রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। হাসপাতালে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অন্তত তিনগুণেরও বেশি শিশু চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবুও সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। অতি জরুরি না হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর ক্রিটিক্যাল হলে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

গরমে এ সময়ের রোগবালাই বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, প্রচণ্ড গরমে জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, পানিবাহিত টাইফয়েড ও জন্ডিস এবং চর্ম রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এ ছাড়াও তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর হয়। পরিবারের একজনের হলে পরে অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই এ সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, গরমে এই সময়ে শরীরে পানিশূন্যতা এড়াতে অতিরিক্ত পানি পান করতে হবে। লেবুর শরবত, ডাবের পানি পান করতে হবে। মৌসুমি ফল পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলোতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ ও সি রয়েছে। সেগুলো খেতে হবে। দিনের বেলা বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা বা ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে। অসুস্থ হলে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close